• হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা, শয্যা সংরক্ষিত হাসপাতালে
    আনন্দবাজার | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • গরমে যেন পুড়ছে মেদিনীপুর। কয়েক দিন হল, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ৪৪- ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। তীব্র তাপপ্রবাহের দাপট সহ্য করছেন মেদিনীপুরবাসী। আরও দিন কয়েক এই তাপপ্রবাহ জারি থাকবে। এর চূড়ান্ত সতর্কতাও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হিটস্ট্রোক বা সানস্ট্রোকের আশঙ্কাও রয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সাধারণত ‘ড্রাই হিট’ অর্থাৎ, শুকনো গরমই হিটস্ট্রোক বা সানস্ট্রোকের মূল কারণ। এত গরমে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তেই পারেন।

    পরিস্থিতি দেখে জেলার বড় হাসপাতালগুলিতে হিটস্ট্রোকের রোগীর জন্য শয্যা সংরক্ষিত করা হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। মেদিনীপুর মেডিক্যালের পাশাপাশি জেলার মহকুমা হাসপাতাল এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিতে শয্যা সংরক্ষিত হয়েছে। আপাতত, এই হাসপাতালগুলিতে দু’টি করে শয্যা সংরক্ষিত করা হয়েছে। যাতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কেউ গেলে, তাঁর শয্যা পেতে সমস্যা না হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘বড় হাসপাতালগুলিতে দু’টি করে শয্যা সংরক্ষিত করা হয়েছে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর জন্য। ছোট হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজন মতো পদক্ষেপ করার কথা জানানো হয়েছে।’’ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কেউ এলে, তাঁর চিকিৎসার দিকে বিশেষ নজরই থাকবে, অভয় দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। অনেক দিন বাদে একটানা এত গরমের দাপট সহ্য করতে হচ্ছে মেদিনীপুরবাসীকে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই এর আগে এখানে কবে হয়েছে, মনে করতে পারছেন না অনেকেই।

    চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শরীরে যে তাপজনিত সমস্যা হয় তাকে বলে ‘হিট রিলেটেড ইলনেস’। এর চূড়ান্ত বা এক্সট্রিম ফর্ম হল হিটস্ট্রোক। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে হার্ট, কিডনি, লিভার বিকল হতে শুরু করে। হার্ট বিট বেড়ে যায়। মাসল ক্র্যাম্প হয়। ব্লাডপ্রেশার কমে যায়। মাথা ঘোরা, অসংলগ্ন কথা বলা, শরীর জ্বরে পুড়ে যাওয়ার মতো গরম হয়ে যাওয়া এগুলিই হল হিটস্ট্রোকের আগাম লক্ষণ। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘নানা কাজে নিয়মিত বাইরে বেরোতেই হয় যাঁদের, তাঁদের হিটস্ট্রোক সম্পর্কে সতর্ক থাকা দরকার। শুকনো গরমই হিটস্ট্রোক বা সানস্ট্রোকের মূল কারণ। হিটস্ট্রোকের আগাম লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল, জ্বরের মতো গা গরম হয়ে যাওয়া। পাশাপাশি ঝিমুনি ভাব, অসংলগ্ন কথা, পেশিতে টান ধরা (মাসল ক্র্যাম্প), মাথা ধরা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া- এ সবও লক্ষণের মধ্যে পড়ে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হিটস্ট্রোক হওয়ার আগে পূর্বাভাস পাওয়া যায়। সতর্ক হতে হবে সে সময়েই।’’

    আগামী ক’দিনও গরম থাকবে। জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের পরামর্শ, সকাল দশটার পরে এবং বিকেল পাঁচটার আগে রাস্তায় না বেরোনোই ভাল। এই সময়টায় বাড়িতে থাকাই ভাল। বাড়ির বাইরে গেলে ছাতা নিতে হবে। বা মাথায় কাপড় বেঁধে নিতে হবে। হালকা সুতির পোশাক পরতে হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও বলেন, ‘‘গরমে হালকা খাবার খেতে হবে। মশলাদার খাবারের পরিবর্তে। বাড়ির বাইরে বেরোনোর আগে জল খেয়ে বেরোনই ভাল। রোদ থেকে এসে কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে তারপর জল খেতে হবে।’’ তিনি মনে করিয়েছেন, গরমে প্রচুর ঘাম হয়। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে নুন বেরিয়ে যায়। তাই প্রচুর জল খেতে হবে। জলের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ওআরএস, নুন- চিনি- লেবুর জল খেতে হবে। সময় মতো চিকিৎসা না পেলে হিটস্ট্রোকে মারা যেতে পারেন আক্রান্ত ব্যক্তি। জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের পরামর্শ, এই সময়ে ভয় না পেয়ে সচেতন থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)