• মণিপুরে বিবস্ত্র করে দুই মহিলাকে অত্যাচার, ‘গাড়ির চাবি নেই’ বলে এলাকা ছাড়েন পুলিসকর্মীরা, দাবি চার্জশিটে
    বর্তমান | ০১ মে ২০২৪
  • ইম্ফল: বিবস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় হাঁটানো হচ্ছে দুই কুকি মহিলাকে, তাঁদের পিছনে উন্মত্ত জনতা। ক্যামেরার সামনেই চলছে শারীরিক হেনস্তা। মণিপুরের এই ভিডিও নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। গত বছর মণিপুরে মেইতেই-কুকিদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। তার জেরে চূড়াচাঁদপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সিবিআইকে। সম্প্রতি সেই চার্জশিটের তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে, এই নিগ্রহের ঘটনায় মণিপুর পুলিসের দিকেই আঙুল তুলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তারা জানিয়েছে, দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর সময় কাছেই উপস্থিত ছিল পুলিসের গাড়ি। সেই গাড়ির কাছে গিয়ে দুই মহিলা বারবার সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু এক পুলিসকর্মী জানান, গাড়ির চাবি নেই। সাহায্য করার বদলে এলাকা ছেড়ে চলে যায় পুলিস। মণিপুরে বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি সরকার। মেইতেই-কুকিদের সংঘর্ষ থামাতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। আর এবার সেই সরকারের পুলিসের দিকেই সিবিআই আঙুল তোলায় ফের বিজেপি সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

    সিবিআইয়ের চার্জশিটে পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। তারা জানিয়েছে, গত বছরের ৪ মে এই ঘটনা ঘটে। কুকিদের গ্রামে হামলা চালায় মেইতেইরা। নিগৃহীত মহিলা, তাঁদের পরিবার ও অন্য কয়েকটি কুকি পরিবারের সদস্য প্রাণ বাঁচাতে জঙ্গলে গা ঢাকা দেন। কিন্তু হাজারখানেক মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ কুড়ুল নিয়ে তাঁদের ধাওয়া করে রাস্তায় নিয়ে আসে। এরপর তাঁদের আলাদা আলাদা করে তিনদিকে নিয়ে যাওয়া হয়। নিগৃহীত ওই দুই মহিলা ও দু’জন পুরুষকে একদিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর দুই মহিলাকে ফের আলাদা করা হয়। সিবিআই জানিয়েছে, পুলিসের গাড়িটি হঠাত্ এসে উন্মতার জনতার সামনে থেমে যায়। রাস্তার পাশেই গাড়িটি দাঁড়িয়েছিল। জনতার হাত থেকে বাঁচাতে গাড়িতে উপস্থিত পুলিসকর্মীদের অনুরোধ করেন দুই মহিলা। কিন্তু পুলিসের গাড়ির চালক জানিয়ে দেন, ‘চাবি পাওয়া যাচ্ছে না।’ সেই সময় ওই গাড়িটিতে নিগ্রহের শিকার দু’জন পুরুষও ছিলেন। কিন্তু উন্মত্ত জনতা ওই দুজনকেও গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে। আর তারপরই চারজনকে জনতার মধ্যে ফেলে রেখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান পুলিসকর্মীরা। 

    গত বছর অক্টোবরে গুয়াহাটির বিশেষ আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। তাতে ছয়জন ব্যক্তি ও একজন নাবালকের নাম রয়েছে। পুলিসের কাছে দায়ের হওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, দুই মহিলার একজন গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। এছাড়া আটশো থেকে হাজার জন মিলে হামলা চালিয়ে দুই মহিলার পরিবারের দু’জনকে খুন করে বলেও অভিযোগ। বিষয়য়টি নিয়ে মণিপুর পুলিসের ডিজি রাজীব সিং জানিয়েছেন, অভিযুক্ত পুলিসকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেহেতু সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত করছে, তাই ফৌজদারি পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। 

    দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে নিগ্রহের কথা প্রকাশ্যে আসার পরই মণিপুরের বিজেপি সরকার মানতে বাধ্য হয় যে, রাজ্যে হিংসা মাত্রাছাড়া রূপ নিয়েছে। এখনও পর্যন্ত মণিপুরে মেইতেই-কুকি সংঘর্ষে দুশোর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ বহু। এছাড়া কয়েক হাজার মানুষ গত এক বছরে ঘরছাড়া হয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)