• দ্বিতীয় দফার ভোটে বিজেপির চিন্তা আরও বেড়েছে
    বর্তমান | ০২ মে ২০২৪
  • মৃণালকান্তি দাস: বিজেপির চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিতীয় দফার ভোট। সাত দিন আগে প্রথম দফার কম ভোটের হার বিজেপিকে বাধ্য করেছিল উন্নয়ন ও বিকশিত ভারতের গল্প শোনানোর বদলে ‘মুসলিম জুজুকে’ হাতিয়ার করতে। কংগ্রেস ও মুসলিমদের এক করে দেখানোই এখন লক্ষ্য। মহারাজা বনাম নবাব। রাজা বনাম বাদশা। শিবাজি বনাম ঔরঙ্গজেব। মেরুকরণকে নতুন পোশাকে নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিটি জনসভার শেষে তাঁকে বলতে হচ্ছে, ‘গরম যতই হোক, আগে ভোটদান পরে জল পান।’ তবুও দ্বিতীয় দফার ভোটে মানুষ সাড়া দেয়নি। নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত হিসেবে দ্বিতীয় দফার ভোটের হার ৬৪ শতাংশ। এই কেন্দ্রগুলিতে আগেরবার যা ছিল ৭০ শতাংশের কাছাকাছি।

    বিজেপির চিন্তা আরও বাড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র। যোগী রাজ্যে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশের মতো, যা কিনা প্রথম দফার ভোটের চেয়েও ৬ শতাংশ কম। বিহারেও ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশ। মহারাষ্ট্রে আরও কম, সাড়ে ৫৪ শতাংশের মতো। মধ্যপ্রদেশে সামান্য বেশি, সাড়ে ৫৭ শতাংশ। কম ভোটের হার নিয়ে সব মহলেই বিশ্লেষণ চলছে। নানা কারণ উঠে এলেও সব পক্ষ এই বিষয়ে একমত যে, মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে এখনও তেমন একটা উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, কোনও হাওয়াই ওঠেনি।

    বিজেপির একাংশের ধারণা, ভোটাররা হয়তো কিছুটা আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন। তাই কট্টর সমর্থকরা ছাড়া অন্যরা ভোট দিতে যাচ্ছেন না। আর বিরোধীরা মনে করছে, মোদিকে নিয়ে মানুষের উৎসাহ শেষ। সেই কারণে বিজেপির দুর্গ বলে পরিচিত কেন্দ্রগুলিতেও ভোটের হার নিম্নমুখী। নইলে বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে এত কম ভোট পড়ত না। শাসকদলের অভ্যন্তরের অসন্তোষও প্রকট হচ্ছে। এই ‘ট্রেন্ড’ দেখেই বিজেপি এখন কংগ্রেসের মুসলিম প্রীতির কথা তুলে ধরছে। মুসলিম জুজু খাঁড়া করে হিন্দুদের জাগাতে চাইছে।

    তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলা শুরু করেছেন, ‘কংগ্রেসের ইশতেহারটা মন দিয়ে পড়ুন। দেখবেন তাতে লেখা আছে ওরা মুসলিম পার্সোনাল ল কায়েম করবে। তিন তালাক প্রথা চালু করবে। দেশে কি তা হলে শরিয়তি আইন চালু হবে? ওই আইনে দেশ চলবে? তুষ্টিকরণের রাজনীতির জন্য রাহুল সব করতে পারেন। কিন্তু বিজেপি তা কিছুতেই হতে দেবে না। আমরা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সারা দেশে চালু করব। উত্তরাখন্ডে হয়েছে। বাকি রাজ্যেও হবে এবারের জয়ের পর।’ আর মোদি বলছেন, ‘কংগ্রেসের শাহজাদা ও তাঁর বোন দু’জনেই ঘোষণা করেছেন কংগ্রেস জিতলে দেশের মানুষের জমানো সম্পদ, গাড়ি, স্কুটার, স্ত্রীধন, মঙ্গলসূত্র, সোনা সব কিছুতে এক্স রে হবে। ঘরে ঘরে এক্স রে করে তারা সম্পদ লুট করতে চায়। সেই সম্পদ বণ্টন করবে পছন্দের ভোটব্যাঙ্ককে। আপনারা কি কংগ্রেসকে নিজেদের সম্পদ লুটতে দেবেন?’ গেরুয়া শিবিরের সব নেতার মুখেই এখন ‘ইসলামোফোবিয়া’।

    বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, ধনী-গরিবের অসাম্য, নির্বাচনী বন্ডে বিজেপির বিরুদ্ধে চাঁদা নিয়ে সরকারি বরাত পাইয়ে দেওয়া, ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে বন্ডের মাধ্যমে তোলাবাজির অভিযোগ, নজর ঘোরাতে মুসলিম বিদ্বেষের থেকে বড় অস্ত্র আর কী হতে পারে?
  • Link to this news (বর্তমান)