• পুজোর মরশুম না থাকায় রুজির টানে এখন মডেল ও ভাস্কর্য তৈরিতে মগ্ন কুমোরটুলি
    বর্তমান | ০২ মে ২০২৪
  • সুকান্ত বসু,কলকাতা: এখন বড় কোন পুজো-পার্বণ নেই। ফলে কুমোরটুলির পটুয়াপাড়াতে নেই সেই ব্যস্ততাও।  ফলে তপ্ত গরমে সেই পরিচিত কুমোরটুলি কেমন যেন নিরুত্তাপ। পেশার তাগিদে অধিকাংশ শিল্পীরাই এখন ফাইবার কিংবা প্ল্যাস্টার অফ প্যারিসের বিভিন্ন মনীষীর মূর্তি ও অন্যান্য ভাস্কর্য তৈরিতেই মগ্ন। তাঁদের কথায়, পেট বড় বালাই। কিছু একটা করে তো খেতে হবে। তাই এখন মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মডেলের বরাত পাচ্ছি, সেই কাজ করেই কোনভাবে চলে যাচ্ছে দিন গুজরান। রবীন্দ্র সরণি, কুমোরটুলি স্ট্রিট, বনমালী সরকার স্ট্রিট সহ পটুয়াপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় গিয়ে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ল। বিভিন্ন শিল্পীর ঘরে দেখা যায় দু' চারটি করে বিভিন্ন মনীষীদের মডেল, পশু পাখী, জীব-জন্তুদের মডেল তৈরির কাজ চলছে। আবার কোথাও কোথাও দুই একটি  দেব-দেবীদের যেমন শীতলা, কালীমূর্তি গড়তে যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই মিলেছে ডাইনোসরেরও হদিশ।

    এ বিষয়ে শিল্পী মীনাক্ষী রুদ্র পাল বলেন, ভরা চৈত্র মাসেও এরকম দু-চারটি শীতলা, কালীমূর্তির বরাত মিলেছে। বৈশাখ মাসেও পাওয়া গিয়েছে। তবে তা একেবারেই হাতে গোনা। তা দিয়ে তো আর সংসার কিংবা এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চলে না। তাই বাধ্য হয়েই বিভিন্ন মডেল বা অন্যান কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। আরেক শিল্পী জবা পালের বক্তব্য, সামনেই আসছে অক্ষয় তৃতীয়া। অথচ আগের মতো লক্ষ্মী- গণেশ মূর্তির আর সেই বাজার নেই। এদিকে, প্রতিমা তৈরির কাঁচামালের খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে।  গতবার পঞ্চাশটার মত লক্ষ্মী- গণেশের সেট তৈরি করে ছিলাম। ১৫ পিসও বিক্রি হয়নি। সেগুলি পড়ে পড়ে নষ্টই হয়ে গিয়েছে। শিল্পী সাধন পাল বলেন, পুজোর মরশুমেই আমরা দুটো টাকার মুখ দেখতে পাই। কিন্তু মহাজনের দেনা ও পরিবারের খরচ- খরচা মেটানোর পর দেখা যায়, আমাদের দৈনন্দিন আর্থিক সমস্যা  যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। আর সেই কারণে পুজোর মরশুমের পরবর্তী সময় আমাদেরকে খুব সমস্যার মধ্যে কাটাতে হয়। মৃৎশিল্পী  সংগঠনের এক কর্তা বাবু পাল বলেন,অনেকেই রাস্তার ধারে সৌন্দর্যের জন্য বিভিন্ন পশু, পাখি ও বিভিন্ন মূর্তি মডেলের বরাত দিয়ে থাকেন। আর এই বরাতের ফলে কিছুটা হলেও এই সময় মৃৎশিল্পীরা উপকৃত হন। না হলে এই মরশুমহীন সময়ে কঠিন আর্থিক সমস্যা মধ্যে পড়তে হত আমাদের।

    বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ফাইবারের বিভিন্ন মডেল ও পশু পাখির যে সমস্ত বরাত মিলেছে তা শুধু কলকাতা থেকেই নয়। কলকাতার বাইরের আশপাশের জেলা ছাড়াও ভিনরাজ্য থেকেও এই সমস্ত মডেলের বরাত দিয়ে গিয়েছেন অনেকেই। আর সেই মডেল তৈরিতেই মগ্ন পটুয়া পাড়ার শিল্পীরা। আর তা তৈরি করতে করতে হাজার কষ্ট ও সমস্যার মধ্যেও  মন ভালো রাখার জন্য তাঁরা রেডিওতে শুনছেন বিভিন্ন গান। মনের মতো গান হলে কোন প্রবীণ শিল্পীকে গুন গুন করে তাতে সুর মেলাতেও শোনা যায়। সব মিলিয়ে কুমারটুলি আছে কুমোরটুলিতেই।
  • Link to this news (বর্তমান)