• Madhyamik: প্রতিকূলতাকে হারিয়ে আকাশে উড়ান, মাধ্যমিকে সফল জলপাইগুড়ির ৪ মূক-বধির পরীক্ষার্থী!
    ২৪ ঘন্টা | ০৩ মে ২০২৪
  • প্রদ্যুৎ দাস: প্রতিকূলতাকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে আনল বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীরা। প্রকৃতির আকাশে কালো মেঘ দেখা না দিলেও, জলপাইগুড়ি জেলার মাধ্যমিক শিক্ষার আকাশে উড়ে এলো একরাশ! তারই মধ্যে সমস্ত প্রতিকূলতাকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে আনল চার বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থী। জীবনের প্রতি পদেই এদের দিতে হয় পরীক্ষা! রয়েছে শত বাঁধা। সব বাঁধা পেরিয়ে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সফল জলপাইগুড়ির বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই চার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আজ জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার ফল প্রকাশ হল রাজ্যজুড়ে। সকাল হতেই অধীর আগ্রহে খানিক ভয়,  খানিক উৎকন্ঠা নিয়ে টেলিভিশনের সামনে অপেক্ষা করছিল লক্ষ লক্ষ মাধ্যমিক পড়ুয়া। এদিন সকাল ৯ টায় সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে ফল ঘোষণায় হতাশ হতে হয় জলপাইগুড়িবাসীকে। প্রথম ১০-এর তালিকায়  এত পড়ুয়ার মধ্যে কোথাও নিজের জায়গা করতে পারেনি জলপাইগুড়ির কোনও পড়ুয়াই। তাই সকাল থেকেই মন খারাপ জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের। কিন্তু বেলা বাড়তেই প্রকাশ্যে আসে জলপাইগুড়ির চার বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়ার সাফল্যের খবর। বিদ্যা সরকার, রিক সরকার, সায়ন্তনী রায় ও পায়েল রায় এরা চারজনই জন্ম থেকেই মূক ও বধির। প্রাপ্ত নম্বর ১৯০, ২২৭, ১৮৪, ২২৮।  নম্বর যাই হোক না কেন, জন্ম থেকেই নিজেদের মতো করেই লড়াই চালাচ্ছে এরা। বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অসীম ইচ্ছে। আর এতেই খুশির আমেজ শহর জুড়ে। এ যেন খরার মধ্যেও এক চিলতে বৃষ্টি। জলপাইগুড়ির ইন্দিরা কলোনীর বাসিন্দা রিক সরকারের এই সাফল্যে খুশি তার মা এবং পরিবারের সকলে। অন্যদিকে, নেতাজী পাড়া পরেশমিত্র কলোনীর বাসিন্দা বিদ্যা সরকারের বাড়িতেও উৎবের আমেজ। তবে, এখনও অনেকটা পথ লড়ে যাওয়া বাকি। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পুলিশ হতে চায় বিদ্যা। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও হার না মানা লড়াই চালাচ্ছে এদের প্রত্যেকেই। এই খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ জলপাইগুড়িবাসী।খুশির আমেজ শহরজুড়ে। এরই পাশাপাশি, অভাবের সঙ্গে লড়াই করে মাধ্যমিকে নজরকাড়া নম্বর পেয়ে পাস করেছে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জের দীপজয় সরকার। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৬৪। আগামীতে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে তার। দীপজয়ের বাবা দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। মা দর্জির কাজ করে কোনওমতে সংসার চালান। অভাবের সংসারে কীভাবে তাঁর স্বপ্নপূরণ হবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে দীপজয় ও তার পরিবারের সদস্যরা। রাজগঞ্জ ব্লকের সুখানি গ্রাম পঞ্চায়েতের স্কুল পাড়ার বাসিন্দা মিঠুন সরকার ও দীপা সরকারের ছেলে দীপজয়। সে রাজগঞ্জ মহেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্র । তার প্রাপ্ত নাম্বার ৭০০ মধ্যে ৬৬৪।  মিঠুন বাবুর একছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাদের সংসার। এক মেয়ে ছিলো তার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। মিঠুন বাবু এক কারখানায় কাজ করতেন দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ থাকার পর সেই কাজও বাদ দিয়েছেন তিনি। তার স্ত্রী দীপা সরকার রাজগঞ্জ বাজারে ছোট্ট একটি দর্জির দোকান করে যে সামান্য কিছু উপার্জনের হয় তা দিয়ে ছেলের পড়াশোনা ও সংসার চলে তাদের। দীপজয় সরকার বলেন, ভালো নাম্বার নিয়ে পাশ করে খুব ভালো লাগছে। সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছি। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে । মা অনেক কষ্ট করে আমাদের পড়াশোনা করাচ্ছেন ও সংসার চালাচ্ছেন। তাই সরকারি ভাবে কেও বা কোনো বেসরকারি সংস্থা যদি সাহায্য করে তাহলে আমার এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। দীপজয়ের বাবা মা জানান, ছেলের এই সাফল্যে আমারা অনেকে খুশি। ছেলের ডাক্তার হতে যায়। দর্জির কাজ করেই সংসার চলে। জানিনা এই অভাবের সংসারে ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো কি না। যদি সরকারি ভাবো কোনো সাহায্য পাওয়া যায় তাহলে অনেক সুবিধা হবে। তাই সাহায্যের আর্জি জানিয়েছে পরিবারটি।
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)