• Anurag Maloo: অসীম প্রাণশক্তি ৭২ ঘণ্টা বাঁচিয়ে রেখেছিল অনুরাগকে, মত অভিজ্ঞ পর্বতারোহীদের
    আজকাল | ২১ এপ্রিল ২০২৩
  • মলয় সিনহাঃ  পৃথিবী এত সুন্দর হতে পারে, তা হিমালয়ে না এলে জানা যায় না।

    প্রকৃতির টানে ট্রেকার থেকে পর্বতারোহীরা বারে বারে ছুটে যান হিমালয়ে। প্রতিকূল পরিবেশ, দুর্গম পথে শৃঙ্গ অভিযানে দুর্ঘটনার কবলে বারে বারে পড়তে হয়। এমন কী শৃঙ্গ আরোহণের টানে প্রাণ যায় কত পর্বতারোহীর। তবুও আরও কাছে যেতে হবে। ছুঁতে হবে সাদা পাহাড়ের হিমশীতল দেহ। ছুঁতেই হবে।
     পাহাড়ের অমোঘ টানে বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অন্নপূর্ণা–১ জয়ে গেছিলেন রাজস্থানের কিষাণগড়ের অনুরাগ মালো। গত ১৭ এপ্রিল অন্নপূর্ণার ক্যাম্প–৩ –এর কাছে বরফে ঢাকা ক্রেভাসে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন ৩৪ বছরের তরুণ আরোহী আর ফিরবেন না। অনেক চেষ্টায় ৭২ ঘণ্টা পর তাঁকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে ৫ শেরপার একটি দল। উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করেন পোল্যান্ডের আরোহী ও তাঁর সহযোগীরা। ৬ হাজার মিটার উচ্চতায় প্রতিকূল পরিবেশে অনুরাগ বেঁচে থাকলেন কীভাবে?‌ কী ভাবছেন বাংলার অভিজ্ঞ পর্বতারোহীরা?
    এভারেস্ট, অন্নপূর্ণা-১ সহ ৩৪ বছরের পর্বত অভিযানের অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলার বিশিষ্ট পর্বতারোহী বসন্ত সিংহরায়ের। ২০১২-এ বিশ্বের সপ্তম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ধৌলাগিরি অভিযানে গিয়ে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর জন্য  পায়ের তিনটি আঙুল হারিয়েছেন। অনুরাগ মালোর ৭২ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই অসীম জীবন শক্তি  না থাকলে সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বসন্ত সিংহরায়। তাঁর কথায়,‘‌ ক্রেভাসে পড়ে গিয়ে কোনও বড় ধরনের আঘাত হয়ত পায়নি। মনে হয় উন্নতমানের ফেদারের ডাউন জ্যাকেট (‌আপার–লোয়ার), নিলেটের জুতো সহ নানা সরঞ্জাম ব্যবহার করায় অতিরিক্ত ঠান্ডা ওঁকে কাবু করতে পারেনি। অভিযানের আগে থেকেই পরিবেশের সঙ্গে অ্যাক্লেমেটাইজ হয়ে যাওয়াতে ওঁর অনেক সুবিধা হতে পারে। ছয় হাজার মিটার উচ্চতায় তাঁর অক্সিজেনের ঘাটতি ছিল না। শরীরের ফিটনেস, সহনশীলতার মাত্রা বেশি। জল, খাবার পায়নি। ওঁর জীবনীশক্তি এবং মিরাকেল এক সাথে কাজ করেছে। এই রকম উচ্চতার অভিযানে খুব কম ঘটে এমনটা।’‌ 
    বাংলার আরও এক অভিজ্ঞ পর্বতারোহী দেবাশিষ বিশ্বাস। ২৯ বছর ধরে পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানালেন,‘‌বসন্তদা ধৌলাগিরি অভিযানের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। একটা রাত সাত হাজার মিটার উপরে পড়ে ছিলেন। যে কোনও সময় কিছু ঘটে যেতে পারত। কিন্তু অনুরাগ মৃত্যুর সঙ্গে ৭২ ঘণ্টা ধরে পাঞ্জা লড়ে গেছেন।  মনের অসীম জোর এবং ভাগ্য সহায় না হলে বেঁচে থাকা অসম্ভব।  তিনি মনে করেন, ‘‌প্রায় ৬ হাজার মিটার উচ্চতায় থাকায় অক্সিজেনের অভাব অতটা হয়নি। ক্রেভাসে পড়লে বেশির ভাগ আরোহীর মাথা এবং কোমরে বেশি আঘাত লাগার আশঙ্কা থেকে যায়। ওই ধরনের চোট পেলে বাঁচার সম্ভবনা থাকে না। ওঁর আঘাত হয়ত তেমন বেশি ছিল না। মনের জোরে নিজেকে মোটিভেট করেছে বাঁচার জন্য। আবহাওয়া খুব খারাপ হয়নি। হাওয়া এবং অতিরিক্ত তুষারপাত হলে বিপদ বাড়তে পারত। তুষার চাপা পড়ে যেত পারত। কিন্তু আবহওয়া অনুরাগের অনুকূলে গেছে। ওকে খোঁজার ক্ষেত্রে আধুনিক জামিনি জিপিএস ডিভাইস থাকায় অনেক সুবিধা হয়েছে।
    সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও দেবরাজ দত্ত মনে করছেন, ‌'অনুরাগ খোলা আকাশের নিচে ছিল না। ক্রেভাসের ভিতর তুলনামূলক গরম থাকে। ওর দেহের তাপমাত্রা এরজন্য অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাশাপাশি অবশ্যই মানসিক দৃঢ়তা ওকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। ‌ অন্নপূর্ণার ক্যাম্প ৩ থেকে ২ পর্যন্ত খুব বিপজ্জনক এলাকা। এখন অভিযানের জন্য সব জায়গায় ফিক্সড রোপ থাকায় সুবিধা ছিল। কিন্তু কী করে ও পড়ে গেল এটাই প্রশ্ন। হয়ত টেকনিক্যাল ভুলে রোপ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে, তার জন্য এই বিপদ।  রোপের ডিভেন্ডার পরিবর্তন করার সময় অনেক অভিজ্ঞ আরোহীরাও ভুল করেন। হয়ত ও সেই ভুল করেছিল।' এখন সবার প্রার্থনা, অনুরাগ সুস্থ হয়ে উঠুক।
  • Link to this news (আজকাল)