• ইট-পাথর-আগুন বাদ গেল না কিছুই! হাতি তাড়াতে সেই ট্রাডিশন চলছেই
    এই সময় | ০২ অক্টোবর ২০২২
  • হাতির দল কোনদিকে যাবে, তা নিয়ে দড়ি টানাটানি দুই জেলার গ্রামবাসীদের। দুই গ্রামের বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে বেচারা হাতির দলকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল নদীর জলে। একদিকে এগিয়ে গেলে গ্রামবাসীরা ছুঁড়ছে ইট, পাটকেল, আরেকদিকে এগোতে গেলে জুটছে আগুনের গোলা, পটকা। বন্য সম্পদ নিয়ে তামাশা চলল প্রায় গোটা দিন ধরে। পশ্চিম মেদিনীপুর (Paschim Medinipur) জেলার কাঁসাই নদী (Kasai River) থেকে হাতি তাড়াতে গিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড। অতঃপর নড়েচড়ে বসল জেলা বন দফতর।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’ সপ্তাহ ধরে দলমা থেকে আসা প্রায় ৮০টি হাতির দল মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদরা রেঞ্জ এলাকায় ছিল। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তারা জঙ্গলের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছিল। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় ৩০টি হাতির একটি দল ধেরুয়ার আমগোবরা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া যাওয়া জন্য চাইপুরের কাঁসাই নদীতে নামে। কিন্তু মানিকপাড়া এলাকার মানুষ ও হুলাপর্টির দল হাতিকে জঙ্গলে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। হাতির দলকে পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে ফিরিয়ে দিতে নির্বিচারে ইট, পাটকেল ছোঁড়া হতে থাকে। এদিকে হাতির দল ভয় পেয়ে মেদিনীপুরের ধেরুয়ার দিকে প্রবেশের চেষ্টা করলেও বাধাপ্রাপ্ত হয়। এপারেও হাতি খেদাতে হুলাপার্টির সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল প্রচুর মানুষ। তারাও একইভাবে হাতির উপর লাগাতার অত্যাচার চালাতে থাকে। ভয় পেয়ে অসহায়ের মতো নদীতেই দাঁড়িয়ে থাকে হাতির দল। টানা প্রায় ২৪ ঘণ্টা হাতির দল ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকার পর টনক নড়ে বন দফতরের।

    এরপর শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় দুই জেলার বন দফতরের কর্মীরা। দুই জেলার ডিএফও ঘটনাস্থলে হাজির হন। হাতিগুলোকে কোনদিকে নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে দুই জেলার বন আধিকারিকদের মধ্যে আলোচনা হয়। অবশেষে হাতিগুলিকে নিজেদের জঙ্গলে নিতে রাজি হন ঝাড়গ্রামের (Jhargram) ডিএফও। তিনি হুলাপার্টির দলকে আগুন নিভিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। হাতিগুলি মধ্যরাতে মানিকপাড়ায় প্রবেশ করে।

    গত কয়েক মাস ধরেই পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় বেশ কয়েকটি হাতির দল প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছে। হাতি গ্রামে ঢুকে পড়ায় অনেক ঘরবাড়ি, ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুজোর সময় তাই কোনও গ্রামের বাসিন্দা হাতির দল নিজের গ্রামে থাকুক, সেটা চাননি। অন্যদিকে, বন দফতরের ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। হাতির দলকে সঠিক রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা না করায় গ্রামবাসীরা বন দফতরের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বন্য সম্পদের উপর এরকমভাবে নির্মম অত্যাচার এবং গতিপথ রুদ্ধ করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ পশু প্রেমীরাও।
  • Link to this news (এই সময়)