• China Belt And Road : চিন-পাকের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' প্রকল্পে নাম লেখাল তালিবানও
    এই সময় | ০৮ মে ২০২৩
  • ইসলামাবাদ: ২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক অনুদান বন্ধ। বিদেশে থাকা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক রিজার্ভেও হাত দেওয়ার অধিকার নেই তালিবানের। দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে আফগানিস্তানের আর্থিক অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে চিন আর পাকিস্তানের সঙ্গেই হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নিল তালিবান। চিন-পাকিস্তানের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' প্রকল্পে এখন আফগানিস্তানেও রাস্তা ও পরিকাঠামো তৈরি হবে।

    চিনের মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ এবং পরিকাঠামো তৈরির আশাতেই এই চুক্তিতে নাম লিখিয়েছে আফগানিস্তান, কিন্তু কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই ভাবে আদতে চিনের ঋণের ফাঁদেই পা দিল তালিবান! এই চুক্তি ঘিরে ভারতের আশঙ্কার জায়গাও থাকছে। কারণ, নেপাল, পাকিস্তানের পর এবার আফগানিস্তানেও চিনের উপস্থিতি ও আধিপত্য জোরদার হলে সামরিক, সামরিক পরিকাঠামো ও স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে ভারতকে প্রায় ঘিরে থাকবে চিন। ইন্দো-চিন সীমান্ত সমস্যার প্রেক্ষাপটে চিনের এই প্রভাব বৃদ্ধি ভারতের জন্য যথেষ্ট আশঙ্কার বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

    চিনের বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাং এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো জারদারি শনিবার ইসলামাবাদে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রায় ছ'হাজার কোটি ডলারের 'চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর' (সিপেক) তালিবান শাসিত আফগানিস্তানেও সম্প্রসারিত করে সেখানের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা হবে। তালিবানের মুখপাত্র হাফিজ জিয়া আহমেদ জানান, তাঁদের প্রতিনিধি আমির খান মুত্তাকিও ইসলামাবাদে গিয়ে চিনা ও পাকিস্তানি বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে চুক্তি সেরে এসেছেন।

    ২০১৩ সালে 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' প্রকল্প শুরু করেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। উদ্দেশ্য ছিল, পুরোনো সিল্ক রোড বা রেশম পথ এবং সামুদ্রিক বাণিজ্য পথ ফের চালু করে ইউরেশীয় দেশগুলোকে বাণিজ্যিক ভাবে সংযুক্ত করা। প্রকল্পের শুরুতেই আফগানিস্তানকে যুক্ত করতে চেয়েছিল চিন, কিন্তু সেই সময়ে বিষয়টি কার্যকর হয়নি।

    তবে, ৬০টিরও বেশি দেশকে একটি প্রকল্পের আওতায় এনে বিপুল অঙ্কের এই 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' আদতে চিনের একাধিকপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বলেই মনে করেছে ভারত, আর তাই এই প্রকল্পে যুক্ত হতে চায়নি। কিন্তু চিন যেভাবে নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরানের মধ্যে দিয়ে 'ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড' এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে ভারতের আশঙ্কা বাড়ছেই। লাদাখ, অরুণাচল সীমান্তে এমনিতেই সামরিক আস্ফালন দেখাচ্ছে চিন। এবার পাকিস্তান-আফগানিস্তানের হাত ধরে ভারতকে চাপে ফেলা চিনের পক্ষে আরও সহজ হয়ে যেতে পারে, আর সেটাই নয়াদিল্লির কাছে আশঙ্কার।

    আফগানিস্তানের চিনের দ্বারস্থ হওয়ার অবশ্য কারণ রয়েছে। ২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে বিদেশি অনুদান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অথচ, আফগানিস্তানের খরচের ৬০ শতাংশ আসত এই বিদেশি অনুদান থেকেই। আফগানিস্তানের যে ৯০০ কোটি ডলারের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক রিজার্ভ বিদেশে গচ্ছিত রয়েছে, সেটা তালিবানের সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কায় ফ্রিজ় করা হয়েছে।

    আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখে এই রিজার্ভের অর্ধেক রিলিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওয়াশিংটন, কিন্তু তালিবান মহিলাদের শিক্ষা ও কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় রিজার্ভ রিলিজের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে আমেরিকা। চিন, রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তানের মতো হাতেগোনা কয়েকটা দেশই তালিবানকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু তালিব সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি কোনও দেশই।

    এই পরিস্থিতিতে চিনের এক লক্ষ কোটি ডলারের বিনিয়োগ সম্ভাবনা আশা জুগিয়েছে তালিবানকে। আফগানিস্তানের আমু দরিয়ায় তেল উত্তোলনের ব্যাপারে গত জানুয়ারিতে চিনের 'ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন'-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তালিবান। চিনের এই বিনিয়োগ তালিবানকে আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর দিশা দেখাচ্ছে।

    কিন্তু পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালের মতো যে যে দেশকে ঋণ দিয়েছে বা বিনিয়োগ করেছে চিন, সেই দেশগুলো বিপুল ঋণ বা বিনিয়োগ শর্তের ফাঁস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কা থাকছে। তবে, চিনেরও আশঙ্কার জায়গা থাকছে। পাকিস্তানে সিপেক-এর কাজের সময়ে চিনা কর্মী-আধিকারিকরা একাধিকবার জঙ্গি হামলার মুখে পড়েছেন। আফগানিস্তানেও তালিবান বিরোধী আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলার সম্ভাবনা পুরোমাত্রায় থাকছে। সেক্ষেত্রে আফগানিস্তানে চিন কতটা শান্তিপূর্ণ ভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করতে পারবে, প্রশ্ন থাকছেই।
  • Link to this news (এই সময়)