• দুর্গাপুজোয় নিজেদের মধ্যেই আনন্দে মাতলেন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকেরা
    এই সময় | ০৩ অক্টোবর ২০২২
  • "ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার/ মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার, নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি-দামি/সবচেয়ে কম দামি ছিলাম, একমাত্র আমি..." নচিকেতার এই গানটার বিকল্প নেই। সমাজে ঘটে চলা বাস্তব চিত্রটা এই একটা গানের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছিলেন বহু বছর আগে। যদিও তারপরেও সমাজের বিশেষ বদল ঘটেনি। আজও ছেলের সংসারে ঠাঁই হয় না বৃদ্ধ বাবা, মায়ের। এই সমস্ত অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য হাবড়া পুরসভার (Habra Municipality) উদ্যোগে বাণীপুরে নির্মিত করা হয় বিবেকানন্দ ভবন বৃদ্ধাশ্রমটি। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় এই বৃদ্ধাশ্রমের নিজেরাই একাকীত্ব ভুলে গল্প, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়ায় মেতে উঠেছেন। আর তাঁদের আনন্দ দিতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

    হাবরা পুরসভার (Habra Municipality) উদ্যোগে নির্মিত বাণীপুরের বিবেকানন্দ ভবন বৃদ্ধাশ্রমটি বর্তমানে প্রায় ৩০ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ঘর হয়ে উঠেছে। পরিজনদের হারিয়ে, অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা একে অপরের সঙ্গী হয়ে কাটাচ্ছেন জীবন। আর তার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। পুজোর দিনগুলোয় অতীতের কথা মনে পড়লেও, আজ আর সে সব ভেবে কষ্ট পেতে চান না অনেকেই। তবে কখনো সখনো মনে পড়ে যায় অতীতের পুজোর নানা ঘটনার কথা। এমনটাই জানালেন এই বৃদ্ধাশ্রম এর প্রবীণ মানুষেরা। তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পুজোয় বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে উপহার তুলে দেওয়া হয়। এমনকি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকেও পুজোয় নতুন পোশাক তুলে দেওয়া হল বাণীপুরের বিবেকানন্দ ভবন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের হাতে। আর সেটা পেয়ে তাঁদের কাছে যেন ফিরে এল শৈশবের পুজোর দিনগুলির আনন্দ।

    বিবেকানন্দ ভবন বৃদ্ধাশ্রমের তরফে অবশ্য আবাসিকদের পুজোর সময় ঠাকুর দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয়। এক আবাসিক জানান, পুজোর সময় এলাকার কিছু ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এই বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকেরা নিজেরাই পুজোর দিনগুলিতে নিজেদের মধ্যে গল্প, নানান কাজ, খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করেন। যদিও পুজোয় খাবারে বিশেষ কিছু ফারাক থাকে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধা জানান, ডাল, ভাত, তরকারির পাশে পূজোর দিনগুলিতে বাড়তি পাওনা হিসেবে শুধু থাকে মিষ্টি। তবে বিভিন্ন সংস্থা এবং সম্প্রতি এক রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের তরফে যেভাবে তাঁদের হাতে পুজোর উপহার হিসাবে নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়া হল, তাতে অভিভূত তাঁরা।

    বিবেকানন্দ ভবন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের পরিবার-প্রিয়জন কেউ নেই। কেউ খোঁজ রাখে না। কেউ ছেলেকে হারিয়ে, কেউ ছেলের সংসারে ঠাঁই না পেয়ে এখানে হাজির হয়েছেন। কারও আবার পরিবার বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। কেউ আবার অশান্তি থেকে রেহাই পেতে স্বেচ্ছায় বাকি জীবনটুকু কাটাতে বেছে নিয়েছেন এই ঠিকানা। তাই চোখের জল লুকিয়ে, পূজোর দিনগুলিতেও আনন্দে থাকার চেষ্টা করছেন এই প্রবীণ মানুষগুলো।

    বানীপুরের বিবেকানন্দ ভবনের মতো অবশ্য একাধিক বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। সকলের প্রায় একই অবস্থা। তাই বৃদ্ধ বয়সে স্বজন-পরিজনকে হারিয়েও একাকীত্ব ভুলে নিজেদের মধ্যেই আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করছেন।
  • Link to this news (এই সময়)