• সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত আইসক্রিম ফেরি করে সংসার টানছেন কলেজ ছাত্র তন্ময় পাশাপাশি সমানতালে চলছে পড়াশুনোও
    বর্তমান | ১৫ মে ২০২৩
  • সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: দিনে কলেজ আর সন্ধ্যায় আইসক্রিম ফেরি। সংসারের হাল ধরতে এভাবেই জীবনযুদ্ধে নেমেছেন বিষ্ণুপুর শহরের তন্ময় সিং। তিনি বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। পাঁচ বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর শহরের স্টেশন রোডে কালীমেলা এলাকার বাসিন্দা তন্ময়ের পড়াশুনায় ছেদ পড়তে বসেছিল। তাই পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু একটা কাজ করে রোজগারের চিন্তা মাথায় আসে। তিনি একটি আইসক্রিম সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বিকালের পর ভ্রাম্যমাণ আইসক্রিম পার্লার নিয়ে বেরতে শুরু করেন। লালবাঁধ, জোড়মন্দির, পোড়ামাটির হাট প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান এলাকায় আইসক্রিম বিক্রি করেন। কমিশন হিসেবে কোনওদিন দেড়শো টাকা আবার কোনওদিন দু’শো টাকাও আয় হয়। নিজের এবং পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ভাইয়ের পড়াশুনা ও সংসার চালানোর জন্য তা মায়ের হাতে তুলে দেন।  

    বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ স্বপ্না গড়াই বলেন, তন্ময়ের বিষয়ে কিছু জানা নেই। অসুবিধার কথা আমাদের জানালে কলেজে তাঁর টিউশন ফি মকুব করে দেওয়া হবে। এছাড়াও বইপত্র এবং অন্যান্য কোনও সাহায্য করা যায় কিনা দেখা হবে।  তন্ময় বলেন, বাবার অকাল মৃত্যুতে আমাদের সংসারে অন্ধকার নেমে আসে।  আমি পরিবারের বড় ছেলে হয়ে মাকে কিছুটা সাহায্য করার জন্য কোনও রকম সংকোচ না রেখেই পথে আইসক্রিম বিক্রি করছি। একই সঙ্গে আমার এবং ভাইয়ের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। দিনের বেলায় কলেজে যাই। বিকেল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত আইসক্রিম নিয়ে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়াই। রাজ জেগে পড়াশুনা করি।  তাঁর মা বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর দুই নাবালক ছেলেকে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়েছিলাম। গত পাঁচবছর ধরে একাই তা সামলেছি।  ছেলেরা বড় হয়েছে। পড়াশুনারও খরচ বেড়েছে। আর টানতে পারছিলাম না। তাই বড় ছেলেকে পড়াশুনা ছেড়ে রোজগার করতে বলেছিলাম। সে কাজ করছে ঠিকই। সংসার চালাতে সুবিধাও হচ্ছে। কিন্তু সে রোজগারের পাশাপাশি পড়াশুনাটাও চালিয়ে যাছে। এত পরিশ্রম করার পরেও রাত জেগে পড়াশুনা করছে দেখে আমার কষ্ট হয়। কিন্তু উপায় নেই। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগে কালীমেলা এলাকার বাসিন্দা বিশ্বনাথ সিংয়ের মৃত্যু হয়।  বর্তমানে বাড়িতে তাঁর স্ত্রী অরুণা সিং এবং তাঁদের দুই সন্তান রয়েছেন। তাঁর মধ্যে তন্ময় বড়। তিনি কলেজে প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। ছোট ছেলে সোমনাথ স্থানীয় যমুনাদাস খেমকা হাইস্কুলে  পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বিশ্বনাথের মৃত্যুর পর তাঁদের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। ওই সময় রোজগার করার কেউ ছিল না। নাবালক দুই ছেলেকে নিয়ে সাধারণ গৃহবধূ অরুণা অসহায় হয়ে পড়েন। পরে তিনি সংসার চালাতে স্কুলে রান্নার কাজ নেন। এভাবেই বড় ছেলে তন্ময় স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে গতবছর কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু একদিকে সংসার চালানো অপরদিকে দুই ছেলের পড়াশুনার খরচ জোগাতে অরুণা হিমশিম খাচ্ছিলেন। ওই অবস্থায় তন্ময় পড়াশুনার পাশাপাশি সংসারের প্রয়োজনে মায়ের হাতে দু’টো পয়সা তুলে দিতে ভ্রাম্যমাণ আইসক্রিমের পার্লার নিয়ে শহর চষে বেড়াচ্ছেন।  নিজস্ব চিত্র  
  • Link to this news (বর্তমান)