• ওড়িশা থেকে গ্রেফতার ভানু, এগরার ছবি দেখে স্তম্ভিত প্রধান বিচারপতিও, হতে পারে এনআইএ তদন্ত
    আনন্দবাজার | ১৯ মে ২০২৩
  • বিস্ফোরণের পরে আতঙ্ক আর হতাশা গ্রাস করেছিল গোটা এলাকাকে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা ধাতস্থ হয়েছেন খাদিকুলের বাসিন্দারা। সেই আতঙ্ক আর হতাশা এখন বদলে গিয়েছে ক্ষোভ আর কৌতূহলে। সেই ক্ষোভ কখনও পুলিশের উপর গিয়ে পড়েছে, কখনও আবার তার ‘শিকার’ হয়েছেন শাসক তৃণমূলের নেতানেত্রীরা! বৃহস্পতিবারও সেখানে গিয়েছেন বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গিয়েছেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা। সব মিলিয়ে বিস্ফোরণের তৃতীয় দিনেও রাজ্য-রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েই রইল পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুল। গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল এই গ্রাম। বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ প্রাণ কেড়েছিল ৮ জনের। এই ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন বাজি কারখানার মালিক কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু। বৃহস্পতিবার তাঁকে ওড়িশা থেকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতার করা হয়েছে ভানুর ছেলে বিশ্বজিৎ বাগ এবং ভাইপো ইন্দ্রজিৎ বাগকে। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম।

    মূল অভিযুক্ত ভানু গ্রেফতার

    বৃহস্পতিবার ভানুকে ওড়িশার কটকের রুদ্র হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিস্ফোরণের ঘটনায় ভানুও জখম হন। দগ্ধ অবস্থাতেই তিনি ওড়িশায় পালিয়ে যান। পড়শি রাজ্যের হাসপাতাল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর রাত ২টো নাগাদ ভানুকে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর আত্মীয়েরা। সেই সময় তাঁর মাথা, বুক, কোমর থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ দগ্ধ। পুড়ে গিয়েছিল শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশই। তাঁর আত্মীয়েরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান, তাঁদের বাড়ি ওড়িশার বালেশ্বরে। পরিচয়পত্র হিসাবে একটি আধার কার্ডও দেখানো হয়। তাতে বালেশ্বরেরই ঠিকানা ছিল। পাশাপাশি জানানো হয়, স্থানীয় একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্নার তদারকি করছিলেন ভানু। সেই সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনি জখম হয়েছেন।

    এগরাকাণ্ড নিয়ে প্রধান বিচারপতি

    এগরায় বিস্ফোরণের ছবি দেখে শিউরে উঠেছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘হে ভগবান! কী হয়েছে! মৃতদেহগুলি একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে।’’ এই ঘটনায় রাজ্যের কাছে রিপোর্টও তলব করেছেন তিনি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর করা একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিস্ফোরণের যা ‘ভয়াবহতা’, তাতে বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইডি) এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। বিস্ফোরক আইনে মামলা হলে আইন মেনে তদন্ত করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-ও।

    খাদিকুলে বিজেপির দিলীপ ঘোষ

    বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার সেখানে গেলেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ। বিনা বাধায় এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। কথাও বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। পাশাপাশি গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে দিলীপ বলেন, ‘‘যে ধরনের ধারা দেওয়া হয়েছে, আমরা বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখলাম, সাধারণ পাড়ায় মারপিট করলেও এর চেয়ে কঠিন ধারা দেওয়া হয়। পুরো সমাজবিরোধী কাজ হয়েছে। এর আগেও ওরা অপরাধ করেছে। এত বড় বিস্ফোরণ হল, আর কোথাও বিস্ফোরণের ধারা নেই! দু’মাস বাদে জামিন পেয়ে চলে আসবে। আবার বিজনেস শুরু হয়ে যাবে। আমার মনে হয় এখানকার রাজ্য সরকার ও পুলিশ চাইছে এই ধরনের কাজ বন্ধ না হোক। পরোক্ষে ওরা সাপোর্ট করছেন।’’

    এগরাকাণ্ড নিয়ে মানবাধিকার কমিশন

    বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের অতিরিক্ত এসপি শান্তি দাস। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ফিরে যাওয়ার আগে শান্তি বলেন, “লাইসেন্স আছে কি না বা অন্যান্য নথি রয়েছে কি না, সেই তথ্য সংগ্রহ করছি। আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে কমিশনকে প্রাথমিক রিপোর্ট দেব। তার পর যত দ্রুত সম্ভব বিস্তারিত রিপোর্ট জমা করব কমিশনের কাছে।”

    ইন্দ্রজিতের সিআইডি হেফাজত

    ধৃত ভানু বাগের ভাইপো ইন্দ্রজিৎ বাগকে বৃহস্পতিবার কাঁথি আদালতে হাজির করান সিআইডির তদন্তকারীরা। তাঁকে ৮ দিনের সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পুলিশ সূত্রে খবর, ইন্দ্রজিৎকে ওড়িশা থেকে গ্রেফতার করা হয়নি। গ্রেফতার করা হয়েছে এগরা থেকেই। বাজি কারখানার সঙ্গে কারা জড়িত, কী ভাবে এই অবৈধ কারবার জমে উঠেছিল, ইন্দ্রজিৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই বিষয়গুলি জানার চেষ্টা করা হবে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)