• মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে নীরব সরকার
    আনন্দবাজার | ২০ মে ২০২৩
  • শুরু হয়ে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নবম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান। প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে লোকসভা ভোটেরও। যা শুরু হতে আর এগারো মাসও বাকি নেই। কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মন্ত্রিসভার রদবদল কবে হবে, তা নিয়ে একেবারেই নিশ্চুপ নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই আবহে গত কাল মন্ত্রিসভায় একটি মাত্র রদবদলের সিদ্ধান্ত নেন নরেন্দ্র মোদী। তাই দল সেটিকে সার্বিক নয়, বরং ব্যক্তিবিশেষকে বিশেষ একটি মন্ত্রক থেকে সরিয়ে দিতেই ওই রদবদল ঘটনো হয়েছে বলে জানিয়েছে। যার সঙ্গে সার্বিক রদবদলের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই মত বিজেপি নেতৃত্বের।

    গত কাল অপ্রত্যাশিত ভাবে আইন মন্ত্রকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কিরেন রিজিজুকে। পরিবর্তে দায়িত্ব পান রাজস্থানের দলিত নেতা অর্জুন রাম মেঘওয়াল। আজ সকালে আজ কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন রিজিজু। তাঁর এই মন্ত্রক পরিবর্তন আসলে ‘শাস্তিমূলক রদবদল’ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হলেও তা মানতে চাননি তিনি। দায়িত্ব নিয়ে রিজিজু বলেন, ‘‘এই রদবদল কোনও শাস্তি নয়, বরং পরিকল্পনার অঙ্গ।’’

    তিনি ওই যুক্তি দিলেও লক্ষণরেখা পেরিয়ে যাওয়ায় সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল কিরনকে। গত নভেম্বরে রিজিজু সরাসরি কলেজিয়াম ব্যবস্থাকে সংবিধানের অঙ্গ নয় এবং তা বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সরব হন। সে সময়ে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ প্রশ্নে সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে বিচারপতিরা অসন্তোষ জানালে রিজিজু তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘সরকার ফাইল ফেলে রেখে দিয়েছে এমন কথা কখনওই বলা উচিত নয়। আর যদি তাই মনে করেন, তা হলে সরকারের কাছে ফাইল পাঠাবেন না। আপনারাই নিজেরাই তা হলে বিচারপতি নিয়োগ করে কাজ চালিয়ে নিন।’’ রিজিজুর ওই মন্তব্যের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউল সরাসরি অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানিকে জানিয়ে দেন, ‘‘আজ যদি সরকার বলে দেশের আইন মানব না, তা হলে কাল অন্য কেউ এসে বলবে, তারাও দেশের আইন মানবেন না। বৃহত্তর ছবিটি দেখতে শিখুন। দ্রুত সমস্যার সমাধান করুন। এ নিয়ে আদালতকে কোনও রায় দিতে বাধ্য করবেন না।’’

    বিতর্কিত মন্তব্য করার পাশাপাশি রিজিজুর বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে এসেছে বলে একটি সূত্রের দাবি। যা জনসমক্ষে এলে ভোটের আগে সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়ত। তাই সব দিক বিবেচনা করেই বিতর্ক তৈরির আগেই তাঁকে আইন মন্ত্রক থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দল। তবে উত্তর-পূর্বের ওই আদিবাসী নেতাকে একেবারে ছেঁটে ফেলাও সম্ভব ছিল না দলের পক্ষে। তাতে লোকসভার আগে উত্তর-পূর্বে ভুল বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকে ঠেলে দেওয়া হয়। যার সঙ্গে সার্বিক মন্ত্রিসভার রদবদলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি সূত্রের মতে, গত প্রায় দু’বছরের বেশি সময় ধরে মন্ত্রিসভার রদবদল আটকে রয়েছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘মনে করা হচ্ছিল, এ বছরের শুরুতে ভোটমুখী রাজ্যের নেতারা মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন। স্থান পাবেন বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া দলের সংগঠনের কিছু নেতাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের দলের কাজে পাঠানোর মতো বিষয়টি এখনও হাত দিতে পারেনি দল। কিন্তু সমস্যা হল, সময় ক্রমশ কমে আসছে। লোকসভা ভোট দোরগোড়ায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)