• মুর্শিদাবাদের শতায়ু আলকাপ শিল্পীকে লালন পুরস্কার রাজ্যের, খুশি জেলাবাসী
    বর্তমান | ২৯ মে ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: মুর্শিদাবাদের শতায়ু শিল্পীকে লালন পুরস্কার দিয়ে সম্মান জানানো হল। ভরতপুরের আলকাপ শিল্পী শেখ আব্দুল হাসিবকে বিশেষ সম্মান জানাল রাজ্য সরকার। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের পক্ষ থেকে ‘লালন পুরস্কার’ তুলে দেওয়া হয় প্রবীণ ওই শিল্পীর হাতে। নিউটাউনের নজরুলতীর্থে, বিদ্রোহী কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই জেলার প্রবীণ এই আলকাপ শিল্পীর হাতে বিশেষ সম্মান তুলে দেন বিশিষ্ট কবি জয় গোস্বামী। 

    শৈশব থেকেই গান বাজনার প্রতি অদম্য আগ্রহ ছিল আব্দুল সাহেবের। পড়াশোনার দিকে একদমই ঝোঁক ছিল না। অল্প বয়সে বইয়ের পাঠ চুকিয়ে দিয়ে ধরেন হারমনিয়াম। চর্চিত লোকশিল্পের মধ্যে বেছে নিয়েছেন আলকাপকে। বালক বয়স থেকেই পালা চলছে। এই বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে নিজেই ধরেন হারমনিয়াম। পালা করেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। আলকাপ বাঁচিয়ে রাখতে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর এই লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এদিন পুরস্কার পেয়ে আনন্দাশ্রু বাধ মানছে না শিল্পীর চোখে। তবে আলকাপ করে সংসার চলেনি। ফাঁকা সময়ে বাড়িতে বসে সেলাই করে চার ছেলে ও দুই মেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি। দর্জির জীবিকা নির্বাহ করেও আলকাপের প্রতি একটুও ভালোবাসা কমেনি তাঁর। যখনই সময় পেয়েছেন হারমনিয়াম নিয়ে বসে পড়েছেন। আজও সেই একই অভ্যাস তাঁর। ১০৩ বছর বয়সে সকাল-বিকেলে নিয়মিত আলকাপ নিয়ে চর্চা করেন তিনি। 

    শিল্পী বলেন, প্রথাগত পড়াশোনা আমার দ্বারা হয়নি। একমাত্র আলকাপ করতে ভালো জানি। সেটাকেই আঁকড়ে ধরেছি ছোট থেকে। উপরওয়ালা আমাকে অনেক শক্তি দিয়েছেন। লড়াই করে গিয়েছি। ১০৩ বছর বয়সেও বেশ সুস্থ আছি। আলকাপ বাঁচিয়ে রাখতে আজও মানুষের দরবারে হারমনিয়াম বাজিয়ে গান করি। পালায় অংশ নিই। খুব ভালো লাগে আমার। সরকার যে সম্মান দিয়েছে তাতে খুব আনন্দ পেয়েছি। 

    শিল্পীর পরিজনেরাও বলেন, এত বয়স্ক কোনও শিল্পী রাজ্যে আর আছে কিনা জানা নেই। যাত্রা, আলকাপ সব কিছুতেই উনি ছিলেন অনন্য। কালের নিয়মে আজ বৃদ্ধ হলেও হার মানেননি তিনি। এখনও আলকাপ গেয়ে চলেছেন। শিল্পীর বড় ছেলে আমিরুল ইসলাম বলেন, বাবার এখন ১০৩ বছর বয়স। এখনও গান করেন নিয়মিত, নিজের দলের সঙ্গে অনুষ্ঠান করেন। সেই ১০-১২ বছর বয়স থেকে আলকাপে হাতেখড়ি। আলকাপ গেয়ে তো সংসার চলত না, তাই দর্জির কাজ করতেন। এখনও সময় পেলে সেলাই করেন। অভাব থাকলেও আলকাপের প্রতি কখনও ভালোবাসা কমেনি। বাবাকে নজরুল তীর্থে যখন সম্মান জানানো হয়, সবাই হাততালি দিচ্ছিলেন। গর্বে বুক ভরে উঠছিল আমার। 

    মুর্শিদাবাদ জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক প্রবাল বসাক বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে উনি লালন পুরস্কার পেয়েছেন। উনি আমাদের জেলার প্রবীণতম শিল্পী। লোকপ্রসার প্রকল্পে রাজ্য সরকারের তরফে শিল্পীদের যে বিশেষ ভাতা হয়, তাতে উনিও সাহায্য পান। আলকাপ বাঁচিয়ে রাখার জন্য ওঁর লড়াই দীর্ঘদিনের। আমাদের জেলায় আয়োজিত ওয়ার্কশপে উনিই অন্যদের আলকাপ শেখান।  
  • Link to this news (বর্তমান)