• দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ পেলেন লালগড়ের সুপ্রিয়
    বর্তমান | ২৯ মে ২০২৩
  • সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রাম: দারিদ্র্য ও সমস্ত প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ঝাড়গ্রাম জেলার সেরা দশে জায়গা করে নিলেন লালগড়ের বেলাটিকরি গ্রামের সুপ্রিয় খামরুই। লালগড়ের তিলাবনি হাইস্কুলের কলা বিভাগের ছাত্র তিনি। এক বছর আগে পক্ষাঘাতে তাঁর বাবা সমীর খামরুই কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। নিজেদের চাষযোগ্য জমি নেই। দাদা গাড়ি চালক। তাঁর সামান্য উপার্জন ও অন্যের জমিতে ভাগ চাষ করে সংসার সামাল দেন সুপ্রিয়র মা চায়না খামরুই। বেলাটিকিরি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে স্কুলে সাইকেলে যাতায়াত করতেন সুপ্রিয়। স্কুল থেকে আরও ১ কিমি দূরে  খোসাবনির এক কোচিং সেন্টারে টিউশন নিতেন তিনি। টিউশন ফি বাবদ প্রতি মাসে দিতে হতো সাড়ে তিনশ টাকা। মাধ্যমিকে ভালো ফল করার পর স্কুলের শিক্ষকদের কাছে সায়েন্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সুপ্রিয়। কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে সায়েন্স ছেড়ে আর্টস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৪.২ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন সুপ্রিয়। তাঁর প্রাপ্ত মোট নম্বর ৪৭১। বাংলায় ৮৭, ইংরেজিতে ৮৮, ইতিহাসে ৯০, দর্শনে ৯৮, সংস্কৃতে ৯৫ ও শারীরশিক্ষায় ১০০ নম্বর। এরপর ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়ে অধ্যাপক হতে চান তিনি। রাজ্য সরকারের দেওয়া ১০ হাজার টাকায় মোবাইল কিনে তার সাহায্যে পড়াশোনা করেছেন। তিলাবনি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, সুপ্রিয় ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো। বেশিরভাগ ক্লাসে প্রথম হতো। এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে আমাদের স্কুল থেকে কয়েকজন যে ৯০ শতাংশ নম্বর পাবে তা নিশ্চিত ছিল। দেখা গেল সুপ্রিয় ও বরুণ সাঁতরা এই দুজনই আমাদের স্কুল থেকে ৪৭১ নম্বর পেয়েছে। সুপ্রিয় খুব গরিব পরিবারের ছেলে। ওর কৃতিত্ব প্রশংসাযোগ্য। সুপ্রিয়র মা চায়না খামরুই বলেন, ছেলেকে খুব কষ্ট করেই লেখাপড়া করাচ্ছি। এক বছর ধরে ওর বাবা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। তখন থেকে ওর দাদার পড়াশোনা ছেড়ে গাড়ি চালায়। সেই রোজগারেই সংসার ও সুপ্রিয়র পড়াশোনা চলছে। নিজেদের চাষ জমি নেই। অন্যের জমিতে ভাগ চাষ করা হয়। সুপ্রিয় বলেন, ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ে অধ্যাপনা করতে চাই। তবে আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ১০ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে পড়াশোনা করেছি।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)