• নোট লিখে বধূ নিগ্রহ মামলার তদন্তকারী অফিসার আত্মঘাতী অভিযোগকারিনীর মিথ্যা অপবাদ, তোলপাড় নাকাশিপাড়া
    বর্তমান | ২৯ মে ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: ‘আমি নির্দোষ’। সুইসাইড নোটে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের উদ্দেশ্যে এ কথা লিখে আত্মঘাতী হলেন বধূ নির্যাতন মামলার এক তদন্তকারী অফিসার (আইও)। ঘটনাটি নাকাশিপাড়া থানার বেথুয়াডহরির। পুলিস সূত্রে খবর, আইনজীবীর মাধ্যমে ওই বধূ অফিসারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছিলেন। তা নিয়ে থানার পদস্থ আধিকারিকের ধমকও খেয়েছিলেন তিনি। কর্মজীবনে স্বচ্ছতার সঙ্গে ডিউটি করেছেন। অবসরের মাত্র চার বছর আগে কি না এমন অপবাদ! মেনে নিতে পারেননি নাকাশিপাড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর গৌরগোপাল গঙ্গোপাধ্যায় (৫৬)। নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে প্রমাণ করতে জীবনটাই শেষ করে দিলেন তিনি। রবিবার সকালে বেথুয়াডহরি এলাকার একটি ভাড়া ঘরের ভিতর থেকে গৌরগোপালবাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিস। সুইসাইড নোটে ওই বধূ ও তাঁর আইনজীবী জয়ন্ত সরকারকে মৃত্যুর জন্য দায়ী করে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হতেই হতবাক নাকাশিপাড়ার বাসিন্দারা। তোলপাড় চলছে পুলিস মহলেও। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি ঈশানী পাল বলেছেন, ‘একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। পরিবারের তরফে রবিবার রাত পর্যন্ত অভিযোগ হয়নি। প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’ 

    গৌরগোপালবাবুর বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। সম্প্রতি তিনি নাকাশিপাড়া থানায় বদলি হয়ে এসেছিলেন। তাঁর একমাত্র ছেলে ইউপিএসসির পরীক্ষা দিচ্ছেন।‌ এদিনও তাঁর পরীক্ষা ছিল। ফলে, বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েও আসতে পারেননি। সারা জীবন অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গেই দায়িত্ব সামলেছেন গৌরবাবু। সার্ভিস বুকে কখনও লাল দাগ পড়েনি।‌ পুলিস মহলে অত্যন্ত সুনাম ছিল তাঁর। বছর চারেক পর অবসর নেওয়ার কথা। তার আগে মিথ্যা অপবাদই তাঁকে কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিল বলে মনে করেছেন‌ অনেকেই।  

    জানা গিয়েছে, নাকাশিপাড়া থানায় আসার পর একটি বধূ নির্যাতনের মামলার তদন্তকারী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন গৌরবাবু। নিজের মতো করে তদন্তও চালাচ্ছিলেন। মাঝপথে ওই বধূ গৌরবাবুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন।  তাঁর সঙ্গে তদন্তকারী অফিসার খারাপ ব্যবহার করছেন বলে থানার বড়বাবুর কাছে নালিশ ঠোকেন। তাতেই মনমরা হয়ে গিয়েছিলেন গৌরবাবু। সুইসাইড নোটে তাঁর দাবি—‘মামলার অভিযোগকারিনীর সঙ্গে কোনওদিন খারাপ ব্যবহার করিনি। কোনওরকম খারাপ মন্তব্যও করিনি। আইনজীবী জয়ন্তবাবুর পরামর্শে তিনি আদালতে গোপন জবানবন্দি (১৬৪ ধারা)’তে মিথ্যা কথা বলেছেন।‌ তাতে আমার সামাজিক মর্যাদার অবক্ষয় হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই বধূ থানার পদস্থ আধিকারিকের কাছেও মিথ্যা অভিযোগ করে তাঁকে ধমক খাইয়েছেন বলেও সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছেন। এদিন গৌরবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে বেথুয়াডহরি এসেছিলেন পরিবারের আত্মীয় কুন্দন রায়। তিনি বলছিলেন, ‘পারিবারিক অশান্তি ছিল না। তবে, কোনও কেস নিয়ে সমস্যায় ছিলেন।’ গৌরবাবুর সুসাইড নোটে অভিযুক্ত আইনজীবী জয়ন্তবাবু বলেছেন, ‘আমার মক্কেল তাঁর স্বামী ও ননদের বিরুদ্ধে কোর্টে অভিযোগ করেছিলেন। নাকাশিপাড়া থানার তরফ থেকে একটা পুলিস কেস শুরু হয়। ১৬৪ ধারায় গোপন জবানবন্দিও দেন আমার মক্কেল। তদন্তের দায়িত্ব পড়ে নাকাশিপাড়ার সাব ইন্সপেক্টরের উপর। দীর্ঘদিন অভিযুক্তকে ধরা হচ্ছিল না। পরে জানা যায়, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না। শুনলাম ওই অফিসার  নাকি আত্মহত্যা করেছেন।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)