• ‘রাজ্যাভিষেক’
    বর্তমান | ২৯ মে ২০২৩
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: মুখে বললেন ‘নেশন ফার্স্ট’। কিন্তু উদ্বোধন মঞ্চকে ব্যবহার করলেন আত্মপ্রচারেই। সকালে হোম-যজ্ঞ, পুজো-অর্চনা থেকে সাষ্টাঙ্গে ‘সেঙ্গোল’ প্রণাম, ড্রাম বাদ্যের অভ্যর্থনায় আগমন, গজ দ্বার দিয়ে প্রবেশ। সকালে ধুতি-পাঞ্জাবি, হাতকাটা গোলাপি জ্যাকেট, সিল্কের উত্তরীয়। দুপুরে চুড়িদার, সোনালি রঙের পাঞ্জাবি। নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ নিয়ে তৈরি শর্ট ফিল্ম, তামিলনাড়ুর ‘অধীনম’-দের হাত থেকে গঙ্গাজল আর হলুদ মাখানো চালের ছিটেয় শুদ্ধ সেঙ্গোল হস্তান্তর থেকে বক্তৃতা। নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের রাজকীয় আয়োজনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকেই তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

    আর মোদির আত্মপ্রচারের এই অনুষ্ঠানে আগাগোড়া সমর্থন জুগিয়ে গেলেন বিজেপি সাংসদরা।  প্রধানমন্ত্রীকে দেখেই শুরু হল ‘মোদি মোদি’ স্লোগান। সেই সঙ্গে ভারত মাতা কি জয়, ‌জয় শ্রীরাম, হর হর মহাদেব রবে হর্ষধ্বনি। এই আবহে টেলিপ্রম্পটার দেখে শুরু হয় মোদির আত্মকথা প্রচার। বারবার তুলে ধরা হয় একটিই কথা—নতুন সংসদ ভবনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গত দু’দশক ধরে আলোচনা চললেও কেউ কোনও উদ্যোগ নেয়নি। করে দেখালেন তিনিই। যাবতীয় কাণ্ডকারখানা দেখে তাই তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘সংসদ দেশের জনগণের কণ্ঠ। সংসদ ভবনের উদ্বোধনকে নিজের রাজ্যাভিষেক ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী।’ অন্য একটি টুইটে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ‘অহঙ্কারী রাজা’ বলেও তোপ দাগেন কংগ্রেস নেতা। 

    নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে এদিন লুটিয়েন্স দিল্লিতে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল। জারি ছিল ১৪৪ ধারা। নয়া সংসদ ভবন যখন জমকালো আয়োজনের আতিশয্যে ভাসছে, অদূরে রাষ্ট্রপতি ভবনে তখন দেশের প্রথম নাগরিক ‘লাইভ কভারেজ’-এ চোখ রেখেছিলেন! অন্য কোনও উপায়ও ছিল না। কারণ, উদ্বোধক তো দূরের কথা, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকাতেই স্থান হয়নি দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর। অথচ, সংবিধানের ৭৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদের শীর্ষে রাষ্ট্রপতি। তাঁকে এই অবজ্ঞার প্রতিবাদে কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, ডিএমকে, জেডিইউ, এনসিপির মতো ২১ রাজনৈতিক দল অনুষ্ঠান ‘বয়কট’ করে। এই দলগুলির বক্তব্য, যে কোনও উপায়ে দর্শকাসন ভরিয়ে অস্বস্তি এড়াতে চেয়েছে বিজেপি। তাই দলীয় সাংসদদের পাশাপাশি যোগী আদিত্যনাথ, শিবরাজ সিং চৌহান, হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থীদের দিয়ে আসন ভরানো হয়েছে। তাও ফাঁকা থেকে গিয়েছে পিছনের দু’টি সারি। তবে দর্শকাসনে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের উপস্থিতি অনেকের নজর টেনেছে। 

    দলীয় সাংসদদের  কর্মশালায় বক্তৃতা দিতে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী একইভাবে গত ন’বছরে সরকারের সাফল্যের সাতকাহন তুলে ধরেন। বলেন, ‘নতুন সংসদ ভবন নির্মাণে কাজ করেছেন ৬০ হাজার শ্রমিক। ভবিষ্যতে এই ভবন থেকে যেসব আইন তৈরি হবে, তা তাঁদের কথা ভেবেই হবে।’ যদিও রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি এবং ২০টির বেশি রাজনৈতিক দলের বয়কট স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ‘সব চাঙ্গা সি’ দাবি আর বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে ফারাক বিস্তর। 

    নতুন সংসদ ভবন আত্মনির্ভর ভারতের সূর্যোদয়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে, নরেন্দ্র মোদি 

    প্রধানমন্ত্রী

    নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত মোদি। মানুষ খেতে পারছেন না, আর উনি দেড় হাজার কোটি টাকায় সংসদ ভবন তৈরি করছেন। এ তো নিরোর মতো আচরণ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

    তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ

    সংসদ দেশের জনগণের কণ্ঠ। সংসদ ভবনের উদ্বোধনকে নিজের রাজ্যাভিষেক 

    ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী, রাহুল গান্ধী

    কংগ্রেস নেতা
  • Link to this news (বর্তমান)