• বিশ্বজুড়ে আশার আলো, কিডনির দুরারোগ্য অসুখের ওষুধ আবিষ্কৃত বিশ্বব্যাপী গবেষণা, শরিক বাংলার এনআরএস
    বর্তমান | ২৯ মে ২০২৩
  • বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: যত দিন যাচ্ছে, অ্যালোপ্যাথিকে জোরদার প্রতিযোগিতার মুখে ফেলেছে হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ, যাদের প্রকাশ্যে দূর ছাই করেন অধিকাংশ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক। আবার অ্যালোপ্যাথিকেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, ‘নতুন ওষুধ কই আপনাদের! কম্বিনেশন ওষুধের নামে সবই তো ওল্ড ওয়াইন ‌ইন নিউ বটল!’ এহেন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া মডার্ন মেডিসিন দেখল নতুন আবিষ্কারের মুখ। আইজিএ নেফ্রোপ্যাথি নামে দুরারোগ্য কিডনির অসুখের তেমন উত্তর ছিল না। অথচ প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত হওয়া, এই মারাত্মক সমস্যায় ভোগেন ভারতের প্রতি ছ’জন কিডনি রোগীর একজন। জাপান (৪৭.৪ শতাংশ), চীনের (৪৫ শতাংশ) মতো এশীয় দেশগুলিতে এই পরিসংখ্যান প্রায় প্রতি দু’জন রোগীতে একজন! এবার মিলল এই রোগের সুনির্দিষ্ট ওষুধ। এমনই দাবি করছেন দেশের চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীমহলের একাংশ। পৃথিবীব্যাপী চলা এই গবেষণায় শরিক হয়েছে বাংলাও। এন আর এস মেডিক্যাল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগ অংশ নিয়েছিল এই ট্রায়ালে। 

    চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আইজিএ (এক ধরনের প্রোটিন) নেফ্রোপ্যাথির (কিডনির রোগ) এই ওষুধের (এক ধরনের এন্ডোথেলিন এ রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্ট) তৃতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়ালে মিলেছে সাড়া জাগানো ফলাফল। এই অসুখে শরীরেরই ‘এ’ অ্যান্টিবডি শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করে। ইউরিনে প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ক্রিয়েটিনিনও। রোগীর প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরতে থাকে। কারও কারও তা না-হলেও মাইক্রোস্কোপে দেখলে ইউরিনে ব্লাড মেলে। শেষমেশ কিডনি প্রতিস্থাপন বা ডায়ালিসিস ছাড়া গতি থাকে না। 

    কিডনি স্টোন, ইউটিআই প্রভৃতি সমস্যা নেই, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই এই সন্দেহ করেন পোড়-খাওয়া চিকিৎসকরা। কিন্তু, ভিটামিন ই খাওয়ানো,  ডায়েটে মাছের তেল রাখা (ওমেগা থ্রি), স্টেরয়েড দেওয়া, টনসিলেক্টমি করা—কী না হয়েছে! তাও মিলছিল না আশার আলো।  

    বাংলায় এই ট্রায়ালের ফেসিলিটেটর স্নেহেন্দু কোনার বলেন, ‘অত্যন্ত ইতিবাচক ফল মিলেছে ওষুধটির।’ এনআরএসের নেফ্রোলজির প্রধান ডাঃ পিনাকী মুখোপাধ্যয় বলেন, ‘ভারতে এই রোগটি অত্যন্ত আগ্রাসী রূপ নেয়। দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ওষুধের ফেজ থ্রি ট্রায়ালে যথেষ্ট ভালো ফল পেয়েছি আমরা। ইউরিনে প্রোটিন ইউরিয়া নিঃসৃত হওয়া নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়াও কমেছে। আখেরে রোগী ও মানবসভ্যতার লাভ হলে সবচেয়ে খুশি হব আমরা।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)