• সিরাজের হয়ে গোলাবর্ষণ, ব্যবহার করে ব্রিটিশরাও কলকাতা দখল ও পুনর্দখলের সাক্ষী উদ্ধার হওয়া কামান
    বর্তমান | ২৯ মে ২০২৩
  • অলকাভ নিয়োগী, বিধাননগর: গায়ের উপর জমাট বাঁধা মাটি ও মরচের আস্তরণ। যে মুখে একসময় হতো গোলা-বারুদের তোপধ্বনি, সেই মুখ এখন ঠান্ডা, ভোঁতা। চেহারাও ছোটো। দেখতেও খুব একটা আকর্ষণীয় নয়। তবুও বলা যায়, শহরের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হওয়া ৪ ফুট ৮ ইঞ্চির কামান সামনে মেলে ধরেছে আড়াইশো বছরের ইতিহাস। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পুরনো ফোর্ট উইলিয়ামের উপরেই রাখা থাকত এই কামানটি। ইংরেজ বাহিনী এবং নবাব সিরাজদৌল্লা, দু’পক্ষই এই কামান ব্যবহার করেছে। কলকাতা দখল ও পুনর্দখল, এই দু’টি যুদ্ধের সাক্ষ্যও বহন করছে এই পুরনো কামানটি।

    কলকাতার জিপিও অফিসের ২ নম্বর গেটের সামনে মাটির উপর অল্প মুখ তুলে বেরিয়েছিল এই কামানটি। রাজ্যের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টি বিপ্লব রায়ের উদ্যোগে গত ২০ মে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয় ঐতিহাসিক কামানটি। ওইদিন শহরের বিডন রো এবং নীলমণি মিত্র স্ট্রিট  ক্রসিংয়ের সামনে আরও একটি কামান উদ্ধার হয়েছিল। তবে, জিপিও অফিসের সামনের কামান থেকেই এই নতুন ইতিহাস সামনে এসেছে। বিপ্লববাবু বলেন, দু’টি কামানের ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। নয়া মিউজিয়ামে দু’টিই সংরক্ষিত করা হবে।

    রাজ্যের বিশিষ্ট কামান ও অ্যান্টিক বন্দুক বিশেষজ্ঞ অমিতাভ কারকুন বলেন, দু’টি কামানের কাস্টিং দেখেই বুঝেছিলাম, জিপিও’র সামনে উদ্ধার হওয়া কামানটি বেশি প্রাচীন। সেখানেই পুরনো ফোর্ট উইলিয়াম ছিল। যে অংশে কামানটি পাওয়া গিয়েছে, সেখানে দুর্গের দক্ষিণ-পূর্ব ব্যাস্টিয়ন বা কেল্লার প্রাচীর ছিল। বিভিন্ন নথি ও তথ্য ঘেঁটে আমাদের অনুমান, এই কামানটি ১৭৩০-১৭৪০ সালে লন্ডনে তৈরি হয়েছিল। তারপর কলকাতায় নিয়ে এসে রাখা হয়েছিল এই ব্যাস্টিয়নের উপর। এই ধরনের কামানগুলি আকারে ছোট থাকায় এগুলিকে ‘লাইট গান’ বলা হতো। তাই দুর্গের উপরে থাকত। 

    তিনি বলেন, যখন নবাব সিরাজদৌল্লা কলকাতা দখলের জন্য আক্রমণ করেছিল, সেই যুদ্ধে ইংরেজরা এই কামান ব্যবহার করেছিল। পরে আবার ইংরেজরা যখন কলকাতা পুনর্দখল করে, সেই যুদ্ধে সিরাজ বাহিনী এই কামান ব্যবহার করেছিল। অর্থাৎ, এই কামানটি দু’পক্ষই ব্যবহার করেছিল। দু’টি যুদ্ধেই ব্যবহার হয়েছে। এটা কলকাতার নতুন ইতিহাসও। 

    অমিতাভবাবু বলেন, ইংরেজদের কাছ থেকে পুরনো কামান কিনে বহু জমিদারই তাঁদের সীমানার শেষ প্রান্তে পুঁতে রাখতেন। নীলমণি মিত্র স্ট্রিট ক্রসিংয়ে যে কামানটি উদ্ধার হয়েছে, সেটিও সীমানা নির্দেশক হিসাবেই ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)