• সদ্যোজাতকে বিক্রির জন্য মাকে দিয়ে সই স্ট্যাম্প পেপারে বালি কাণ্ডে নয়া তথ্য
    বর্তমান | ২৯ মে ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: লক্ষ লক্ষ টাকা হস্তান্তর হয়েছিল উত্তর কলকাতার হেদুয়া পার্কে। বিক্রির পরে সদ্যোজাতের মাকে দিয়ে সই করানো হয়েছিল খালি স্ট্যাম্প পেপারে। শিশু বিক্রির ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই তথ্য হাতে পেয়েছেন বালি থানার তদন্তকারী অফিসাররা।

    রবিবার গোটা ঘটনা পুননির্মাণ করা হয়। হেদুয়া, মানিকতলা, বেলেঘাটা সহ উত্তর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় অভিযুক্তদের নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুননির্মাণ করে বালি থানা। এই পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন ক্রেতা রাজীব গুপ্তা ও শতাব্দী গুপ্তা, দালাল দম্পতি বিষ্ণু শর্মা ও স্বাতী শর্মা এবং অভিযোগকারিণী। তদন্তে জানা গিয়েছে, উত্তর হাওড়ার একটি নার্সিংহোমে তরুণীর প্রসব করানো হয়। তাতে মোটা টাকা খরচ করা হয়। এরপর সেই সদ্যোজাত শিশুটিকে বিক্রির জন্য যোগাযোগ করা হয় লেকটাউনের বাসিন্দা শর্মা দম্পতির সঙ্গে। তাঁরাই যোগাযোগ করে মালিপাচঁঘড়ার বাসিন্দা রাজীব ও শতাব্দী গুপ্তার সঙ্গে। হেদুয়ার কাছে টাকার লেনদেন হয়। যদিও শিশুটিকে নেওয়ার পর বাড়ি না ফিরে বেলেঘাটার একটি হোটেলে প্রায় পাঁচদিন ছিলেন রাজীব ও শতাব্দী। বেলেঘাটায় বাপের বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সেখানে ওঠেননি। সেই হোটেলেও এদিন হানা দেয় পুলিস। সেখান থেকে প্রমাণ ও বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। অভিযোগকারিণীর সই করা খালি স্ট্যাম্প পেপারটিও উদ্ধার করেছে পুলিস। তাতে নিজেদের মতো করে বয়ান লিখে এই কেনাবেচাকে বৈধ করার পরিকল্পনা করেছিল চক্রীরা। যা এই মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, আড়াই লক্ষ টাকায় রফা হয়েছিল এই ডিল। তার মধ্যে পুলিস একাংশ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে। 

    এদিকে, তদন্তে আরও একটি দিক উঠে এসেছে। অভিযোগকারিণী বছর উনিশের ওই তরুণীর বয়ানে বেশকিছু ‘অসঙ্গতি’ মিলেছে। ফলে তাঁর ভূমিকাও আতশকাচের তলায় রাখা হয়েছে। তাই এই কেনাবেচায় শিশুটির মায়ের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ওই তরুণী বেলুড়ে গিরিরাজ খৈতান নামে এক ব্যক্তির কাছে সেলাইয়ের কাজ করতেন। সেখানে মাঝেমধ্যে আসত অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী শঙ্করপ্রসাদ। তার ‘নজর’ পড়ে তরুণীর উপর। সে ওই তরুণীর ‘দায়িত্ব’ নিতে চায়। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে শঙ্কর। যৌন হেনস্তা করেছে গিরিরাজও। অবশ্য তার আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন এই তরুণী গৃহবধূ। কর্মসূত্রে তাঁর স্বামী থাকেন ওড়িশায়। এর মধ্যেই চলে আসে ডেলিভারির সময়। প্রথমে জয়সওয়াল হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয় তরুণীকে। পরে সেখান থেকে উত্তর হাওড়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানে বিল মেটায় গিরিরাজ। তারপরই শুরু হয় সদ্যোজাতকে বিক্রির চক্রান্ত।
  • Link to this news (বর্তমান)