• দ্বিমুখী লড়াইয়ের থাবা বসাবে JJP? মুখে কুলুপ পদ্মশিবিরের
    ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস | ২৯ মে ২০২৩
  • হিমাচেলর পর কর্ণাটকেও বিপুল সাফল্য কংগ্রেসের, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে। অন্যদিকে কর্ণাটক বিধানসভা ভোটে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের সুপরিকল্পিত স্ট্র্যাটেজি একেবারে কোনঠাসা করেছে কেন্দ্রের শাসকদলকে। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন রাজস্থান নির্বাচন নজরে রয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস দুই দলেরই।

    কর্ণাটক বিজেপিতে ভোটের আগে যে সমস্যা ছিল রাজস্থান বিজেপিতেও পরিস্থিতি একই। নেতৃত্ব ঘিরে হেভিওয়েটদের মধ্যে সংঘাতের ছবি মরুরাজ্যে বহুদিনের। কর্ণাটকে বিএস ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর পর দলের পক্ষে লিঙ্গায়েত ভোটে ধাক্কা লাগে বলে ধারণা অনেকের। এদিকে, রাজস্থানে বিজেপির টিকিট ঘিরে প্রভাবশালী নেতা নেত্রীদের মধ্যে মনোমালিন্যর নানা খবর সামনে আসছে। সেরাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিজেপির মুখ বসুন্ধরা রাজে। যিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৮ ভোটে হেরে যায় বিজেপি। সেখানে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের আধিক্য ছিল বলে মনে করেছেন অনেকে। সেই জায়গা থেকে বিজেপি প্রার্থী বাছাই ঘিরে সতর্কতার পথে।

    তবে কর্ণাটকের কংগ্রেসের মতো রাজস্থানে কংগ্রেসের অবস্থা নেই। কর্ণাটকে ডিকে শিবকুমার ও সাদ্দারামাইয়া একযোগে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এদিক, রাজস্থানে ২০১৮ সালে ভোট জয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী হন অশোক গেহলোট, উপমুখ্যমন্ত্রী হন সচিন পাইলট। পরে ২০২০ সালে সচিন ও তাঁর সমর্থরা গেহলোটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সেই রেশ এখনও চলছে। দিন কয়েক আগেও বসুন্ধরা রাজেকে নিয়ে গেহলট-পাইলট দ্বন্ধ প্রকাশ্যে আসে। নির্বাচনের আগে বিজেপি-কংগ্রেসে দলাদলি চরমে পৌঁছেছে । সমাধান খুঁজতে আসরে নেমেছে হাইকমান্ড।

    কর্নাটক নির্বাচন শেষে রাজস্থানের প্রধান দুটি দল বিজেপি ও কংগ্রেস আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনের আর ছয় মাসও বাকী নেই। বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্রধান দল কংগ্রেস (কংগ্রেস) এবং বিজেপি (বিজেপি) জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করলেও, দুই প্রধান দলের মধ্যে দলাদলি চরমে পৌঁছেছে উভয় দলের শীর্ষ নেতারা সংঘাতের অবসান ঘটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করলেও দলাদলির সমাধানের পথ খুঁজে পেতে তাঁরা পুরোপুরি ব্যর্থ।

    রাজস্থানে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের দুই শিবিরের মধ্যে চরম সংঘাতের ছবিটা একেবারে স্পস্ট। প্রকাশ্য শচীন-গেহলট দ্বন্ধ। রাজ্য সরকারের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী মমতা ভূপেশ যখনই জনসভায় ভাষণ দিতে এসে অশোক গেহলট সরকারের প্রশংসা করতে শুরু করেন, তখন ‘শচীন পাইলট জিন্দাবাদ’ স্লোগান তোলে দলীয় নেতা কর্মীরা। এর থেকে স্পষ্ট যে পাইলট এবং গেহলট শিবিরের মধ্যে বিরোধ চরমে। বিরোধ অবসানে কংগ্রেস হাইকমান্ড জোর চেষ্টা চালালেও এখনও কোন সুষ্ঠ সমাধান সূত্র মেলেনি।

    বিজেপিও রাজস্থানে দলাদলি থেকে মুক্ত নয়। এই কারণেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের সমর্থক বিধায়ক বিজয় বনসালকে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিজয় বনসাল টানা তিনবারের বিধায়ক। যদিও ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান তিনি। রাজ্যে বিজেপি সভাপতি বদল হওয়ার পর বিজয় বানসালের দলে ফেরা নিয়ে জল্পনা চলছিল। এ জন্য একটি কর্মসূচিও করা হয়, কিন্তু কিছু কারণে তা স্থগিত করা হয়।

    আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের দাবিতে দুই দলেই চলছে প্রবল কোন্দল। এখন দেখতে হবে আগামী নির্বাচনে ঢেউ কোন দিকে যায়। গত তিন দশক ধরে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখে আসছে রাজ্য। তবে এবার কী সেই ছবিটা বদল হতে চলেছে? হরিয়ানার জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) জাতীয় সভাপতি অজয় ​​সিং চৌতালা বলেছেন যে তার দল, হরিয়ানায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অংশ, বছরের শেষের দিকে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বিষয়টি নিয়ে নীরব বিজেপি।

    ১৯৬২ সালে জয়পুর রাজঘরানার গায়েত্রী দেবীর নেতৃত্বে স্বতন্ত্র পার্টি পরপর তিনটি বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পায়। ১৯৬২ এবং ১৯৬৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দল ৩৬ এবং ৪৯ টি আসন জিতেছিল। ১৯৭২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অঙ্কটা একেবারে ঘুরে যায়। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস ১৪৫টি আসন জেতে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র পার্টির আসন সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১১।

    বিজেপির পূর্বসূরি ভারতীয় জন সঙ্ঘ সহ সমস্ত কংগ্রেস বিরোধী দলগুলি জনতা পার্টির ব্যানারে ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসকে পরাজিত করার পরে স্বতন্ত্র পার্টি বিরোধী দলের খেতাব হারায়। বোফর্স কেলেঙ্কারির পরে ভরাডুবি হয় কংগ্রেসের। কংগ্রেস বিরোধী জনতা দল ৫৫ টি আসন জিতেছে এবং বিজেপির সঙ্গে একটি জোট সরকার গঠন করে। যা 85 বিধায়ক নিয়ে একক বৃহত্তম দল হিসাবে আবির্ভূত হয়। এই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন ভৈরন সিং শেখাওয়াত, যিনি পরে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হন। ১৯৯৩সালের বিধানসভা নির্বাচনে, জনতা দল মাত্র ৬টি বিধানসভা আসনে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখে। পরে রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়।

    ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দুটি নতুন রাজনৈতিক দল সামনে আসে। বিজেপি নেতা ঘনশ্যাম তিওয়ারির ভারত বাহিনি পার্টি গঠন করেন। বিভিপি সেবারের নির্বাচনে একটিও আসন পায় নি। অন্যদিকে আরএলপি তিনটি আসন জেতে। পাঁচ বছর পরে রাজ্য থেকে কার্যত ধুয়ে মুছে যায় বিভিপি। আরএলপি অবশ্য বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। বেনিওয়ালের দল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধে। পরে কৃষক আন্দোলনের সময় বিজেপির সঙ্গে তার সম্পর্ক ত্যাগ করে। অন্যদিকে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), ২০০৮এবং ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিটিতেই ৬টি আসন জিতেছিল। পরে অবশ্য সব বিএসপি বিধায়ক অবশ্য কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে।
  • Link to this news (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)