• খাস কলকাতার বুকে শিশু বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হস্তান্তর,তদন্তে নেমেছে পুলিশ 
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৯ মে ২০২৩
  • কলকাতা,২৯ মে ?  জন্মানোর পরই শিশুকে তার মা এর কাছ থেকে আলাদা করে অন্যের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা আজ নতুন নয়। এর আগেও এরকম বহু চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। এবার খাস কলকাতার বুকে শিশু বিক্রির অভিযোগ ! জন্মের পরেই লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সদ্যোজাত সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। তার মাকে দিয়ে সই করানো হয়েছিল ফাঁকা স্ট্যাম্প পেপারে। কলকাতার হেদুয়া পার্কে টাকা হস্তান্তর করা হয়েছিল। শিশু বিক্রির ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ।
     এবার দালালের মাধ্যমে শিশুটিকে পাচার করা হয় অন্য দম্পতির কাছে। ঘটনাটি ঘটেছে বালি এলাকায়। অভিযোগকারিণী ১৯ বছর বয়সী তরুণী নিজে একজন গৃহবধূ। তাঁর স্বামী কর্মসূত্রে ওড়িশায় থাকেন। তরুণী নিজে বেলুড়ে গিরিরাজ খৈতান নামে এক ব্যক্তির কাছে কাজ করতেন। গিরিরাজের বিরুদ্ধে তিনি অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীনই তাঁকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ এনেছেন তরুণী। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গিরিরাজের কাছে আসত অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী শঙ্করপ্রসাদ। তরুণীকে সেও একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
    যদিও ধর্ষণের জেরে তরুণী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন, এমনটা নয়। আগে থেকেই গর্ভবতী ছিলেন তিনি। প্রসবের সময় এগিয়ে আসায় প্রথমে হাওড়ার জয়সোয়াল নার্সিংহোমে, এবং পরে উত্তর হাওড়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। সেই সময় চিকিৎসার সমস্ত বিল মেটায় গিরিরাজ। তারপরেই সদ্যোজাত শিশুটিকে বিক্রি করার চক্রান্ত শুরু হয়।
    পুলিশ জানিয়েছে, বিক্রি করার জন্য প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ করা হয় লেকটাউনের বাসিন্দা এক দালাল দম্পতি স্বাতী শর্মা এবং বিষ্ণু শর্মার সঙ্গে। তারাই মালিপাঁচঘড়া এলাকার বাসিন্দা রাজীব এবং শতাব্দী গুপ্তার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় গিরিরাজের। রাজীব-শতাব্দী জানায়, তারা শিশুটিকে কিনতে আগ্রহী। হেদুয়া পার্কে টাকার লেনদেন হয়। শিশুটির মা অর্থাৎ ওই তরুণীকে দিয়ে একটি খালি স্ট্যাম্প পেপারে সইও করিয়ে নেওয়া হয়।
    টাকা পয়সার ঝামেলা মিটতেই পাচার করা হয় শিশুটিকে। এরপর শিশুটিকে হাতে পেয়েও শুরুতেই বাড়ি ফেরেনি গুপ্তা দম্পতি। শতাব্দী গুপ্তার বেলেঘাটায় বাপের বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে না উঠে বেলেঘাটারই একটি হোটেলে ওঠে দুজনে। সেখানে পাঁচ দিন থাকার পর ফিরে যায় মালিপাঁচঘড়ায়। ইতিমধ্যেই ওই স্ট্যাম্প পেপারে ইচ্ছেমতো বয়ান লিখে নেওয়া হয়।
    অভিযোগ পেয়েই ঘটনার তদন্তে নামে বালি থানার পুলিশ। তদন্তে জানা গেছে, আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে কিনেছিল গুপ্তা দম্পতি। ইতিমধ্যেই স্ট্যাম্প পেপারটি উদ্ধার করা হয়েছে। পাঁচজন অভিযুক্তকে সঙ্গে করে রবিবার হেদুয়া, মানিকতলা এবং বেলেঘাটার ওই হোটেলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনঃনির্মাণ করে পুলিশ। হোটেল থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। রাস্তার বিভিন্ন এলাকা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেও ঘটনার তদন্ত চালানো হচ্ছে। হস্তান্তর হওয়া টাকার একাংশও উদ্ধার করা গেছে ইতিমধ্যেই। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
     তবে এই ঘটনায় অভিযোগকারিণীর বয়ানও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, তরুণীর বয়ানেও বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। ফলে ঘটনায় কোনওভাবে তিনিও জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)