• গতবার ধাক্কা খাওয়ার পর , এবার মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে পাকিং ফি বৃদ্ধির পথে পুরসভা  
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৯ মে ২০২৩
  • কলকাতা,২৯ মে ?  পাকিং ফি বৃদ্ধি বা চালু নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে মতভেদের শেষ নেই। গত ১ এপ্রিল থেকে বর্ধিত পার্কিং ফি চালু করার কথা ঘোষণা করেছিল পুরসভা। সেই ঘটনায় তৃণমূলের অন্দরের মতানৈক্য প্রকাশ্যে এসে পড়ে। নতুন হারে প্রায় আড়াই গুণ বৃদ্ধি হয়েছিল পার্কিংয়ের খরচ। সেই বর্ধিত হারে পার্কিং ফি আদায় শুরুও হয়ে গিয়েছিল। পুরসভার তরফে ওই পদক্ষেপের পরেই প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর ওই ফি বৃদ্ধিতে কোনও অনুমোদন নেই। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রীকে না জানিয়ে ওই পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকর করা হয়েছে। কুণাল এমনও বলে দেন যে, ওইদিনই কলকাতা পুরসভা ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেবে। ঘটনাচক্রে, তখনও মেয়র বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেনইনি। কু‌ণালের বক্তব্য জানার পর মেয়র ফিরহাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে বললেই ভাল হত। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে না-বললেই ভাল হত। মেয়র এমনও বলেন যে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নির্দেশ দিলে তিনি বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করে নেবেন। অতঃপর মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন মেয়রের সঙ্গে। বিতর্ক এড়াতে মেয়র সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হন। তার পর ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও তড়িঘড়ি বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহারের বি়জ্ঞপ্তি জারি করেন পুর কমিশনার।তখনকার মতো বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে। তখনকার মতো বিষয়টিতে মেয়রকে পিছুও হটতে হয়। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কলকাতার রাস্তায় পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়ে শাসক শিবিরের অন্দরে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, ফি বৃদ্ধির আগে মেয়র মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছিলেন, এমন ‘ছোটখাট’ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বিরক্ত’ করা প্রয়োজন বলে মনে করেননি পুর কর্তৃপক্ষ। তবে ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার অব্যবহিত পরে মেয়র ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন, পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে তিনি পিছু হটছেন না। কারণ, ওই ফি বৃদ্ধি তাঁর মতে ‘যৌক্তিক’ এবং ‘প্রয়োজনীয়’। কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাড়ি পার্ক করা থাকে। কিন্তু তার জন্য ফি নেওয়া হয় নামমাত্র। সেটা চলতে পারে না। ফি বৃদ্ধির পেক্ষে যাঁরা, তাঁরা যুক্তি দিয়েছিলেন, দেশের অন্যান্য শহরে কলকাতার চেয়ে পার্কিং ফি বেশ কয়েকগুণ বেশি। এমনকি, কলকাতার বিভিন্ন শপিং মলেও ঘন্টা প্রতি পার্কিং ফি শহরের রাস্তার তুলনায় অনেকটাই বেশি। কোথাও তা ঘন্টা প্রতি ৩০ টাকা। কোথাও আবার ৪০ টাকা।
     
    কলকাতা পুর প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য, এই বৃদ্ধির পেছনে ‘পর্যাপ্ত কারণ’ রয়েছে। এই অংশের বক্তব্য, গত ১২ বছর কলকাতা পুরসভার পার্কিং ফি একেবারেই বাড়েনি। কিন্তু এই সময়কালে পুরসভার খরচ বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। পুরসভার একটি বড় অঙ্কের রাজস্ব আসে শহরের রাস্তায় পার্কিং ফি থেকেই। সময়ের চাহিদা বুঝে ধীরে ধীরে অঙ্ক কষে শহরের পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে ‘বিতর্কহীন’ ভাবে কলকাতা শহরে পার্কিং বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা। কারণ, এক বার পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে যে ভাবে পিছিয়ে আসতে হয়েছে, তাতে নিঃসন্দেহে কলকাতা পুরসভার ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে। তাই এ বার কলকাতা পুরসভা তথা মেয়রের লক্ষ্য যাবতীয় বিতর্ক এড়িয়ে পার্কিং ফি নিয়ে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন আদায় করা।কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২ চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ১০ টাকা এবং ৪ চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ২০ টাকা ফি করার প্রস্তাব দিয়েছে পুরসভার পার্কিং বিভাগ।বর্তমানে পার্কিং ফি ঘন্টায় যথাক্রমে ৫ টাকা এবং ১০ টাকা।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)