• বাইরনকে নিয়ে ৩ মাসেই সাগরদিঘি ‘পুনরুদ্ধার’ তৃণমূলের, বিধানসভায় ফের শূন্য হল কংগ্রেস!
    আনন্দবাজার | ২৯ মে ২০২৩
  • বাম এবং কংগ্রেস জোটকে জোর ধাক্কা দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন সাগরদিঘির কংগ্রেস বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস। জয়ের তিন মাসের মধ্যে সোমবার জোড়াফুল শিবিরে যোগ দিলেন তিনি। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে পতাকা তুলে নেন তিনি। বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক ছিলেন বাইরন। ফলে তিনি দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতাতেও পড়বেন না।

    বাইরনের দলবদল নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘বিধানসভায় জয়ের পর বাইরনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছিল। জনসংযোগ যাত্রাতেও আমাদের কথা হয়েছিল। বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের লড়াই সর্বাত্মক করতে বাইরন তৃণমূলে যোগ দিলেন। আমি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছি। বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের সৈনিক হিসাবে জোর গলায় লড়াই করবেন।’’ দলত্যাগ নিয়ে বাইরনের বক্তব্য, ‘‘আরও বেশি মানুষের কাছে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। সাগরদিঘির সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপ।’’

    গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট হয়েছিল সাগরদিঘি আসনটিতে। এর পর গত ২ মার্চ সাগরদিঘির ফল ঘোষণা হয়। তাতে হেরে যান তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই আসনে বাইরন জেতেন প্রায় ২৩ হাজার ভোটে। অথচ ২০১১ সাল থেকেই ধারাবাহিক ভাবে তৃণমূলের পাশে ছিল সাগরদিঘি। ২০১৬ এবং ২০১১ সালেও ওই আসন থেকে জিতেছিলেন প্রয়াত সুব্রত সাহা। তিনি রাজ্যের মন্ত্রীও হন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত জয়ী হন ৫০,৮০০-র কিছু বেশি ভোটে। তাঁর অকালপ্রয়াণের জন্যই সেই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই আসনে বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে লড়াই করেছিল কংগ্রেস। তার ফলও পেয়েছিল হাতশিবির। ২০২১ সালে বিধানসভায় শূন্য হয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। বাইরনের হাত ধরে এ বার তারা বিধানসভায় প্রবেশ করেছিল। ওই উপনির্বাচনে জয়ের পর উচ্ছ্বসিত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, তৃণমূলকে ‘বধিবে যে’ সাগরদিঘিতে ‘বাড়িছে সে’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বাইরনই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গেলেন সোমবার।

    দলবদল করতেই বাইরনকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা দিয়েছে কংগ্রেস এবং বাম শিবির। এ নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মিরজাফরের থেকেও মানুষের সঙ্গে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বাইরন। কংগ্রেস কর্মী এবং সাগরদিঘির মানুষের সমর্থন নিয়ে জিতে যে ভাবে তিনি দলবদল করেছেন তা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। আগামী দিনে মানুষ এর জবাব দেবে।’

    বামফ্রন্টের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অমিত শাহের দেখানো পথে চলছে তৃণমূল। অমিত শাহ বিভিন্ন দল থেকে বিধায়ক কিনে সরকার গঠন করেন। আসলে সাগরদিঘির ফলাফলকে অবজ্ঞা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বাইরনের মতো মানুষ সাগরদিঘিতে তৃণমূল বিরোধী ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি সেই ভোটারদেরও অসম্মান করেছেন। জনাদেশকে উপেক্ষা করলে মানুষ এবং সংগঠনের রোষ থেকে বাঁচতে পারবেন না।’’

    নাটাবাড়ির বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, ‘‘এই কংগ্রেসের বিধায়কের দলত্যাগ থেকে বোঝা গেল তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার উপযুক্ত মঞ্চ বিজেপি। আগামিদিনে রাজ্যের মানুষের জন্য তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করবে বিজেপিই। তা এই ঘটনা আবার চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিল।’’

    এক সময় সাগরদিঘির ফলাফল নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়া হয়েছে রাজ্যের শাসকদলে। ওই বিধানসভা আসনে জয়ের পর বিরোধীদের কাছে রাতারাতি খ্যাতি লাভ করেছিল ‘সাগরদিঘি মডেল’। মুর্শিদাবাদে ‘জনসংযোগ যাত্রা’র সময় অভিষেক জানিয়েছিলেন, সাগরদিঘির বিষয়টি তাঁর মাথায় রয়েছে। পাশাপাশি, ‘জনসংযোগ যাত্রা’র সভামঞ্চ থেকে বাইরনকে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শও দেন অভিষেক। একই সঙ্গে বিজেপি দাবি করতে থাকে বাইরনের তৃণমূলের যাওয়া সময়ের অপেক্ষা। সেই প্রসঙ্গে অবশ্য বাইরন জানিয়েছিলেন যে, দলবদলের কোনও প্রশ্নই নেই। সেই ঘটনার এক মাস কাটতে না কাটতেই তৃণমূলে যোগ দিলেন তিনি।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)