• মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরে ঢুকছে অভিষেকের যাত্রা, হেঁটে যাবেন শুভেন্দুর কেন্দ্র নন্দীগ্রামে, করবেন রাত্রিবাস
    আনন্দবাজার | ২৯ মে ২০২৩
  • বাম জমানার শেষ থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমল— সারা দেশে সব সময়েই খবরে থেকেছে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে ‘হাই ভোল্টেজ’ লড়াই দেখেছিল পশ্চিমবঙ্গ। বস্তুত, সেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উৎসাহ ছিল গোটা দেশেই। কারণ, নন্দীগ্রামে লড়াই হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর। তুল্যমূল্য সেই লড়াইয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে ১৯৫৭ ভোটে জিতেছিলেন শুভেন্দু। যদিও তৃণমূলের তরফে ধারাবাহিক ভাবে বলা হয়, ভোটগণনার সময় লোডশেডিং করিয়ে তার সুযোগে জিতেছিলেন শুভেন্দু। বস্তুত, নন্দীগ্রামের ভোটের ফলাফল নিয়ে মামলাও করেছিল তৃণমূল। আবার শুভেন্দু ধারাবাহিক ভাবে মমতাকে ‘কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেন। কারণ, মমতা নন্দীগ্রামে ভোটে পরাজিত হওয়ার পর দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর থেকে জিতে এসেছিলেন।

    ফলে সেই আবহে নন্দীগ্রাম রাজ্য রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন পূর্ব মেদিনীপুর ‘নন্দীগ্রামের জেলা’ বলেই পরিচিত। ফলে শাসক তৃণমূলের অঘোষিত ‘দু-নম্বর’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য জুড়ে জনসংযোগ যাত্রা শুরু করার পর সর্ব স্তরে এটা নিয়ে কৌতূহল ছিল যে, পূর্ব মেদিনীপুরে গেলেও নন্দীগ্রামে তিনি যাবেন কি না। গেলেও কবে যাবেন। এবং সেখানে তাঁর কর্মসূচি কী হবে।

    অভিষেকের দফতর এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সূত্রে সোমবার জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রা পৌঁছবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। মোট চার দিন ওই জেলায় থাকার কথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নানাবিধ কর্মসূচি রয়েছে। তার মধ্যে নন্দীগ্রামও রয়েছে।

    তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের আগে থেকেই অনুমান ছিল, অভিষেক তাঁর কর্মসূচি নিয়ে যাবেন নন্দীগ্রামে। শুভেন্দুকে তাঁর বিধানসভা এলাকায় দাঁড়িয়েই রাজনৈতিক আক্রমণ করবেন অভিষেক। তাঁদের প্রত্যাশা মতোই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যে সমস্ত জায়গায় অভিষেকের কর্মসূচি হবে, সেই তালিকায় থাকছে নন্দীগ্রাম। মঙ্গলবার তাঁর কর্মসূচির প্রথম স্টেশন পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র। বুধবার অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রার কর্মসূচি রয়েছে পটাশপুরে। বৃহস্পতিবার তাঁর গন্তব্য হবে রামনগর। চতুর্থ তথা শেষ দিন শুক্রবার নন্দকুমারে থাকবেন অভিষেক। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে রামনগরের কর্মসূচি সেরে তিনি যাবেন চণ্ডীপুরে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে মিছিল করে যাবেন নন্দীগ্রামে। সেখানেই শিবিরে রাত্রিবাস করবেন তিনি। শীর্ষনেতৃত্বের থেকে এই নির্দেশ পেয়ে সেই মর্মে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের মন্ত্রী তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি বলেন, ‘‘চার দিন ধরে আমরা অভিষেকের কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকব। সেই কর্মসূচি অনুযায়ীই ১ জুন (বৃহস্পতিবার) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম যাবেন। তিনি সেখানে রাতে থাকবেন বলেই আমাদের জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁদের নির্দেশ মতোই আমরা কাজ করছি।’’

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মতে, সামনে পঞ্চায়েত ভোট হলেও অভিষেকের নজর আসলে রয়েছে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের দিকে। আর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দু’টি লোকসভা আসন কাঁথি এবং তমলুক ধরে রাখতে চান তিনি। আপাতত ওই দু’টি কেন্দ্রের সাংসদ শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী (কাঁথি) এবং শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী (তমলুক)। আগামী লোকসভা ভোটে তাঁরা যে তৃণমূলের টিকিট পাবেন না, তা একপ্রকার নিশ্চিত। ফলে অভিষেককে এক দিকে যেমন বিকল্প প্রার্থীর বন্দোবস্ত করতে হবে, তেমনই অন্য দিকে দু’টি আসনই দখল করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে বার্তাও দিতে হবে। তার প্রাথমিক কাজটা এই যাত্রার মধ্য দিয়েই করতে চাইছেন অভিষেক। এবং সেই কারণে অনেকটা প্রত্যাশিত ভাবে নন্দীগ্রামকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গত একমাসে যেখানেই অভিষেক তাঁর যাত্রা নিয়ে পৌঁছেছেন, সেখানেই জনতার ঢল নেমেছে। নন্দীগ্রামেও একই ঘটনা ঘটবে। যাতে শুভেন্দু শিবির খানিকটা ধাক্কা খেতে পারে।

    পাঁশকুড়া পূর্ব ও নন্দকুমার বিধানসভা তমলুক লোকসভার অংশ। আবার পটাশপুর এবং রামনগর বিধানসভা কেন্দ্র কাঁথি লোকসভার অন্তর্গত। পূর্ব মেদিনীপুরের চারটি কর্মসূচিতেই দলের প্রতিটি বিধানসভার নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রা না পৌঁছলে তাঁর লক্ষ্য সম্পূর্ণ হবে না বলেই মনে করছে শাসক শিবির। আবার অভিষেকের রাত্রিযাপনের পর শুভেন্দু নন্দীগ্রামে পাল্টা কোনও কর্মসূচি নেন কি না, সে দিকেও নজর রেখেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে এটা ঠিক যে, বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামে অভিষেকের কর্মসূচির উপর নজর থাকবে শাসক এবং বিরোধী— উভয় শিবিরেরই।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)