• ক্যানসার নিয়ে পরীক্ষা দিয়েও 'স্টার মার্কস'! উচ্চমাধ্যমিক পাশের পরও তিয়াশার জীবন 'অন্ধকার'
    এই সময় | ৩০ মে ২০২৩
  • সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। রাজ্যের একের পর এক কৃতী পড়ুয়াকে নিয়ে চর্চা চলছে। যাঁরা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই ভবিষ্যতে কী নিয়ে পড়বেন বা কোন কেরিয়ার বেছে নেবেন সেই নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। তখন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ধরা পড়ল এক অন্য ছবি। ইচ্ছে থাকলেই যে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন তিয়াসা।

    তিয়াসা দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর জীবন হুইল চেয়ারে বন্দি। ক্যানসার নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েও সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিয়াসা। ৩৮৩ নম্বর পাওয়ার পাশাপাশি তিনটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়েছেন তিনি। শুধু পড়াশোনা নয়, তিয়াসার গানের গলাও খুব সুন্দর। শরীর সঙ্গ দিলে আগামী দিনে পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী সে।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগর মজিলপুর পুরসভা এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা তিয়াসা প্রামানিক বাবা তাপস প্রামাণিক পেশায় একজন ব্যবসায়ী৷ জয়নগরেই জামাকাপড়ের দোকান রয়েছে তাঁর। তিয়াসা ছাড়াও তাপসবাবুর এক পুত্র সন্তান রয়েছে।

    পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটোবেলা থেকে মেধাবী পড়ুয়া হিসেবে এলাকায় পরিচিত তিয়াসা। দীর্ঘদিন গানের শিক্ষকের কাছে তালিম নিয়েছেন তিনি। এলাকার পাশাপাশি এলাকার বাইরেও বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে তাঁর ডাক পড়ত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, টিভির অনুষ্ঠানেও তিনি গান করেছেন।

    হঠাৎ জীবনে ছন্দপত। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ধরা পড়ে শারীরিক অসুস্থতা। মেরুদণ্ডের টিউমারে ধরা পড়ে ক্যানসারের জীবানু। এর পর থেকেই তিয়াসার জীবন ঢাকা পড়ে কালো ছায়ায়। শুরু হয় যমে ও মানুষের টানাটানি লড়াই ৷ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অসুস্থতা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে দু'বার তাঁকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে।

    দু-দুবার মৄত্যুর মুথ থেকে ফিরে এসেও মনের জোর ও ইচ্ছাশক্তির জেরে হুইল চেয়ারে বসেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় তিয়াসা। তবে দিন যত এগোচ্ছে তিয়াসার লড়াই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাঁর চিকিৎসার খরচ নিয়েও চিন্তিত পরিবার। ক্যানসার যেভাবে তিয়াসার শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে চিকিৎসকরাও তাঁকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। পরিবার চাইছে তিয়াসা আবার স্বাভাবিক জিীবনে ফিরে আসুন।

    তিয়াসার মা স্বপ্না প্রামাণিক এই নিয়ে বলেন, '২০২০ সাল থেকে পায়ের যন্ত্রণা দিয়ে সমস্যার শুরু হয়। বেঙ্গালুরু গিয়ে চিকিৎসার পর ক্যানসার ধরা পড়ে। তারপর থেকে আমাদের সবার যুদ্ধ শুরু। কলকাতার টাটা ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। তিনচারমাস ঠিক থাকার পর আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে। এই নিয়ে পরীক্ষা দিয়েই পাশ করেছে। আগামী দিনে কী হবে জানি না।'
  • Link to this news (এই সময়)