• Madhyamik Examination: সব বাধা ঠেলে মাধ্যমিকে সফল প্রান্তিক চার কন্যা
    আজকাল | ৩০ মে ২০২৩
  • রিয়া পাত্র: কদিন আগেই মাধ্যমিকের ফলাফল বেরিয়েছে।

    জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে একগুচ্ছ কচিকাঁচা মুখ। তবে এই পথ সকলের সহজ হয় না। আমাদের চারপাশে এখনও অনেকেই আছে, যারা স্বপ্ন দেখে ঠিকই, কিন্তু সেই স্বপ্ন উড়ান নেয় না। পরিবার,পরিস্থিতি, আর্থিক অবস্থা স্বপ্নের পথ রুখে দাঁড়ায়। তবে অনেকেই বন্ধ দরজার মাঝে একটা অন্য দরজা খুঁজে পায়। আর সেই দরজা কখনও কখনও আসে সোসাইটি ফর কমিউনিটি ইন্টারভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (SCIR)-এর মতো এনজিও হয়ে। যারা বছরের পর বছর চেষ্টা চালাচ্ছে মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।  শুধু টাকার অভাব নয়, কোথাও কোথাও পরিবারও চায় না মেয়েরা পড়াশোনা করুক। বদলে এগিয়ে দিচ্ছে ঘরের কাজের দিকে, একটু বড় হলে বিয়ের দিকে। এই সংস্থার সহায়তাতেই পারিবার, প্রতিকূলতা জয় করে নিজেদের স্বপ্নে এগোচ্ছে একঝাঁক মেয়ে। সকালে একপ্রস্থ স্কুলে পড়ার পর ছাত্রীরা পড়ে তিলজলার SCIR-এ। তারপর ঘরে ফেরে। আমরা কথা বলেছি তাদেরই কয়েকজনের সঙ্গে।
    সৃষ্টি পাণ্ডে, পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে পড়াশোনা থেমে গিয়েছিল তার। হঠাৎ একদিন বন্ধুদের  কাছে খবর পেয়ে SCIR-এ আসে সৃষ্টি। ভর্তি হয় চতুর্থ শ্রেণিতে। আর থামেনি গতি। বরং দিনে দিনে বেড়েছে জেদ। পড়ার ইচ্ছে। এবারের মাধ্যমিকে সৃষ্টির প্রাপ্ত নম্বর ৩৬৭ । ভাল লাগে হিন্দি আর ইংরাজি পড়তে। মাধ্যমিকে হিন্দিতে ৮০ পেয়েছে সে। একাদশ শ্রেণিতে সে বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা করতে চায়। বড় হয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে চায় সৃষ্টি। 
    আতিকা পারভীন। ২১৯ প্রাপ্ত নম্বর তার। আতিকা SCIR-এর ব্রিজ কোর্সের ছাত্রী। মা, তিন বোন, ভাই নিয়ে পরিবার।  পড়াশোনায় বাধা ছিল না। কিন্তু অন্তরায় ছিল আর্থিক অবস্থা। মা অন্যদের বাড়িতে কাজ করে দিন গুজরান করেন। ব্রিজ কোর্সে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এই সংস্থাতেই পড়াশোনা করছে সে। 
    ১৯৮ পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে সন্ধ্যা কুমারী। বাবা-মা, দুই ভাই, তিন বোন নিয়ে সন্ধ্যার পরিবার। রোজগার বলতে সবজি বিক্রেতা বাবার টাকা। সেই টাকায় তিনি আর সন্তানদের পড়াশোনা করানোর স্বপ্ন দেখতে পারেননি। তাই চান মেয়েরা ঘরে থাকুক, কাজ করুক সংসারের। ভাইয়েরা একটা সময় পর্যন্ত নিজেদের চেষ্টায় পড়াশোনা করেছে, এখন  কাজ করে। তিন বোনের পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে এই এনজিওর হাত ধরেই। সন্ধ্যা তিলজলা প্রাইমারি স্কুলের পর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এনজিওতেই পড়ছে। সন্ধ্যায় এক দিদি কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ইগনু থেকে স্নাতকোত্তর পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এক বোন এবার একাদশে পড়ছে। সন্ধ্যা সকালে পড়াশোনা করে খান্না স্কুলে,এনজিওতে ফিরে পড়ে কয়েকঘন্টা। একপ্রস্থ ঘরের কাজ করে বসতে হয় বাবার সব্জির দোকানে। ফের রাত বাড়লে সন্ধ্যা বই খুলে বসে। পছন্দের বিষয় হিন্দি। সন্ধ্যার সামনে এখন স্বপ্ন, আরও বড় হওয়ার, আরও পড়ার।
    খুশি পারভীন, ১৮৬ পেয়েছে মাধ্যমিকে। পছন্দের বিষয় হিন্দি। কলাবিভাগে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু এই স্বপ্ন দেখা সহজ ছিল না। মা-বাবা, তিন ভাই, দুই বোনের সংসার। বাবার ফলের দোকান। এক ভাই পড়েছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, এখন কাজ করে। দিদি নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর এখন বাড়িতে সেলাই শেখায়। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও, খুশি পরিবারের সহায়তা পেয়েছে। বড় হয়ে কী হবে, এখনও ভেবে দেখেনি সে। 
    বছরের পর বছর এরকম আরও অনেক আতিকা, সন্ধ্যার স্বপ্ন পূরণের পথ তৈরি করছে SCIR.
     ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল বস্তিবাসীদের মাদক সেবন থেকে দূরে রাখা, তাঁদের স্বাস্থ্যের উন্নতির করা। একই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার যাঁরা, তাঁদের সুস্থ জীবন দানের লক্ষ্যে আছে একগুচ্ছ কর্মসূচি। এডস নিয়ন্ত্রণে NICED-এর সঙ্গে, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং-এর কাজও হয়। বয়স্ক মহিলাদের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা, পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেট চালানোয় এলাকার মহিলাদের  কাজে লাগানো, বস্তির শিশুদের শিক্ষাদানের কাজও চলছে।
     স্কুলে পড়াশোনা ছাড়াও নাচ-গান, কম্পিউটার এবং সেলাই শেখানো হয়। জোর দেওয়া হয় হাতের লেখায়। সংস্থার সদস্য, তাঁদের পরিবার ও বন্ধুরা নিজেদের উদ্যোগে এই বিরাট কর্মকান্ড চালিয়ে নিয়ে চলেছেন দিনের পর দিন।
  • Link to this news (আজকাল)