• আইপিএলে আবার সিংহ ধ্বনি! শেষ বলে পঞ্চম ট্রফি জয় ধোনির চেন্নাইয়ের, স্বপ্নভঙ্গ হার্দিকদের
    আনন্দবাজার | ৩০ মে ২০২৩
  • রুদ্ধশ্বাস জয় চেন্নাই সুপার কিংসের। শেষ ২ বলে জিততে দরকার ছিল ১০ রান। মোহিত শর্মা তার আগের চারটি বলে মাত্র ৩ রান দিয়েছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া সময়ের অপেক্ষা গুজরাত টাইটান্সের। মাঠে দাঁড়িয়ে হেসে ফেলেন হার্দিক পাণ্ড্যও। কিন্তু শেষ ২ বলে বদলে গেল খেলার ছবি। পঞ্চম বলে ছক্কা মারলেন রবীন্দ্র জাডেজা। শেষ বলে চার মেরে দলকে জিতিয়ে দিলেন জাডেজা। পঞ্চম বারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।

    ইনিংসের বিরতিতে দেখে মনে হয়েছিল, গুজরাত টাইটান্সের পর পর দু’বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া সময়ের অপেক্ষা। ফাইনালে ২১৫ রানের চাপ যথেষ্ট বেশি। কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস দেখাল, লক্ষ্য কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। বৃষ্টির দাপটে প্রায় ২ ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকলেও ছন্দ নষ্ট হয়নি চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের। ২০ ওভারের খেলা কমে দাঁড়ায় ১৫ ওভারে। লক্ষ্য কমে হয় ১৭১। সেই লক্ষ্য তাড়া করে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় চেন্নাই।

    টসে হারলেও হার্দিক জানিয়েছিলেন, তাঁর মন বলছিল প্রথমে ব্যাট করা উচিত। দেখা গেল, খুব একটা খারাপ ভাবেননি তিনি। ঘরের মাঠে দাপটে ব্যাট করলেন গুজরাতের ব্যাটাররা। শুরুতে দুই ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা ও শুভমন গিল এবং তার পরে সাই সুদর্শন চেন্নাইয়ের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করলেন।

    শুরুতেই শুভমনকে আউট করার সুযোগ এসেছিল। দ্বিতীয় ওভারে তাঁর সহজ ক্যাচ ছাড়েন দীপক চাহার। পরের ওভারে ঋদ্ধিমানের ক্যাচ ছাড়েন চাহার। দুই ব্যাটার জীবনদান পাওয়ার পরে হাত খুলে খেলা শুরু করেন। পাওয়ার প্লে-র সুবিধা কাজে লাগান তাঁরা। ৬ ওভারে ৬২ রান হয় গুজরাতের। দেখে মনে হচ্ছিল, আবার বড় রান করবেন শুভমন। কিন্তু ধোনির দস্তানায় থামতে হয় শুভমনকে। রবীন্দ্র জাডেজার বলে ৩৯ রানের মাথায় তাঁকে স্টাম্প আউট করেন ধোনি।

    তার পরেও রানের গতি কমেনি। আরও একটি আইপিএল ফাইনালে ভাল খেললেন ঋদ্ধি। ৩৬ বলে অর্ধশতরান করেন তিনি। তার পরেই অবশ্য বড় শট মারতে গিয়ে আউট হন তিনি। ঋদ্ধি যেখানে শেষ করলেন সেখান থেকে শুরু করলেন সাই সুদর্শন। তামিলনাড়ুর এই ব্যাটার নিজের ঘরের দলের বিরুদ্ধে সেরা খেলাটা খেললেন। চেন্নাইয়ের স্পিনারদের আক্রমণ শুরু করেন তিনি। ফলে চাপে পড়ে যান ধোনিরা। ৩১ বলে অর্ধশতরান করেন সুদর্শন। তার পরে আরও হাত খুলে খেলা শুরু করেন তিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল, ফাইনালে শতরান করবেন সুদর্শন। কিন্তু ৪৭ বলে ৯৬ রান করে আউট হয়ে যান সুদর্শন। হার্দিক শেষ দিকে ১২ বলে ২১ রান করেন। ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান করে গুজরাত।

    জবাবে চেন্নাই ব্যাট করতে নামার পরে প্রথম ওভারে তিন বল পরেই বৃষ্টি শুরু হয়। ক্রিকেটাররা মাঠ ছাড়েন। বন্ধ হয় খেলা। কিছু ক্ষণ পরে বৃষ্টি থেমে গেলেও খেলা শুরু করতে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরি হয়। কারণ, মাঠে বেশ কিছু জায়গায় জল জমেছিল। সেই জল সরিয়ে খেলা শুরু করতে অনেকটা সময় লেগে যায়। ফলে খেলা কমে ১৫ ওভার করার সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা।

    খেলা শুরু হওয়ার পরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই মারকুটে ব্যাটিং শুরু করেন চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও ডেভন কনওয়ে। তাঁরা জানতেন প্রতি ওভারে ১২ রান করে তুলতে হবে তাঁদের। খেলা ১৫ ওভারের হওয়ায় পাওয়ার প্লে-ও কমে হয় ৪ ওভার। পাওয়ার প্লে-তে ৫২ রান করেন দুই ওপেনার। বড় শট খেলা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের। ৬ ওভারে ওঠে ৭২ রান।

    জেতার জন্য ৯ ওভারে ৯৯ রান করতে হত চেন্নাইকে। লক্ষ্য কঠিন ছিল। ভাল বল করছিলেন গুজরাতের স্পিনার নুর আহমেদ। এক ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে চেন্নাইকে বড় ধাক্কা দেন তিনি। প্রথমে ২৬ রানের মাথায় গায়কোয়াড় ও পরে ৪৭ রানের মাথায় কনওয়েকে ফেরান তিনি। এক ওভারেই চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন।

    প্রতি ওভারে জরুরি রানরেট বাড়ছিল চেন্নাইয়ের। সেই পরিস্থিতি থেকে দলকে টানলেন শিবম দুবে, অজিঙ্ক রাহানে ও অম্বাতি রায়ডু। বিশেষ করে রাহানে ও রায়ডু ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। রাহানের ২৭ ও রায়ডুর ১৯ দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যায়। ফাইনালে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ধোনি। প্রথম বলেই আউট হয়ে যান তিনি। শেষ ওভারে জিততে দরকার ছিল ১৩ রান। জাডেজার ব্যাটে সেই রান তাড়া করে জিতে যায় চেন্নাই।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)