• বাম-কংগ্রেস জোটে ইতি? না কি বাইরনের ‘বাই’ ‘বাই’য়ে ফের শূন্য থেকে শুরু
    হিন্দুস্তান টাইমস | ৩০ মে ২০২৩
  • বাম-কংগ্রেস জোটের 'সবে ধন নীলমণি' বাইরন বিশ্বাস তৃণমূল যোগ দিয়েছেন। যে বাইরনের জয়ে বাতাস লেগেছিল জোটের পালে। যিনি সাগরদিঘিতে জেতার পর প্রথমবার বিধানসভায় পা রেখে বলেছিলেন, 'এক থেকে এবার একশ হব।' উল্টো পথে হাঁটলে যে সেটা যে শূন্য হয়ে যায় সেদিন তিনি তা বলেন নি। তিন মাসের মধ্যে তা করে দেখালেন।

    বড় আশা করে বাম-কংগ্রেস জোট সাগরদিঘি মডেলকে সামনে এনেছিল। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতিতে ভোটে জয় শেষ কথা নয় তার পরও কতগুলো অধ্যায় থাকে। যে অধ্যায়গুলি আজকাল প্রায়শই অনুশীলন হচ্ছে। জয়ের তিন মাস পর দল বদল করে সেটাই মনে করিয়ে দিলেন।

    তাহলে জোটের ভবিষ্যৎ কী? যে কংগ্রেস নিজের দলের লোকেদের ধরে রাখতে পারে না, তাদেক সঙ্গে কি জোট করে আদৌ লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে? কারণ, আবার কোনও কংগ্রেস প্রার্থী জিতলে সে যদি আবার তৃণমূল বা অন্য দলে যোগ দেয়? বাইরনের দল ছাড়ার পর সাগরদিঘি মডেলের ভিত কি নড়বড়ে হয়ে গেল না? এ রকম একগুচ্ছ প্রশ্ন সামনে এসেছে তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর।

    বাইরনের যোগদানের খবর সামনে আসার পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরঞ্জন চৌধুরীর প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল একটু গরম। পরে অবশ্য তিনি নরম হয়ে বলেন,'বাইরন নন-পলিটিক্যাল, ওকে পছন্দ করতাম। ও নিজে এসে বলে এলাকায় কাজ করতে চায়। আমি হাইকমান্ডের অনুমতি নি নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে ওকে দলের প্রার্থী করেছি।' ভোটের আগে ও পরে মিটিং-মিছিলে বাইরনকে সে ভাবে দেখা যেত না তার কারণ জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি,'ও একটু দুর্বল, সুগার আছে। সবসময় মিটিং, মিছিল করতেও পারেনি। কিন্তু ও জিতে বুঝিয়ে দিয়েছিল তৃণমূলকে হারানো যায়।' তবে তিনি বেশি দিন থাকবেন না সেটাও জানতেন অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন,'আমরা জানতাম, ওকে এভাবে একদিন টেনে নেওয়া হবে।' দিদি যে দল ভাঙানোর খেলায় সিদ্ধহস্ত, তা সারা ভারত জানে।'

    এই দলবদলকে গণতন্ত্রের পক্ষে মোটেই শুভ ইঙ্গিত নয় বলে মনে করছেন বিমান বসু। তিনি বলেন,‘যা হল তা গণতন্ত্রের পক্ষে ভালো নয়। ওকে তো বিধানসভায় খুব বেশি দেখা যায়নি। শপথ নিয়েছেন অনেক দিন পর’। এর পর তাঁকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এই দলবদলে কি বাম – কংগ্রেসের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে? জবাবে বিমানবাবু বলেন, একটা দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে তাই বলে দীর্ঘমেয়াদী বোঝাপড়া প্রভাবিত হবে কেন?'

    ২০২১-এ বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটে একমাত্র সাফল্য ছিল ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। সেই জোট কি আগের মতো মজুবত আছে তা নিয়ে বড় প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে। এই তো কিছুদিন আগে বাম-কংগ্রেস জোটের সভা হল বীরভূমে। কিন্তু সেখানে ডাক পড়েনি আইএসএফ-এর। যদিও বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি মনে করেন তাঁরা এখনও জোটের সঙ্গে আছেন। তাই বাইরনের তৃণমূলে যোগদানের পর যখন তাঁকে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তখন তিনি বলেন, 'উনি যদি ভেবে থাকেন, উনি চলে যাওয়ার ফলে আমাদের ভোট কমে যাবে, তা ভুল। আমরা যেমন লড়াই করছি, তেমনই চালিয়ে যাব।'

    সাগরদিঘিতে বাইরনের জয়ের পর খাতা-কলম নিয়ে হারের কারণ খুঁজতে বসে পড়েছিল তৃণমূল। দলনেত্রীর বিস্তর বকাবকি, কমিটি তৈরি, সব হয়েছিল। শেষে ম্যাজিকে মতো বায়রনকে দলে যোগ দেওয়ালেন অভিষেক। তৃণমূলে যোগ দিয়ে বায়রন দাবি করলেন, কংগ্রেস নয়, জোট নয়, নিজের করিশ্মাতেই ভোটে জিতেছেন। আবার দাঁড়ালে আবার জিতবেন।

    তবে বাম চেয়ারম্যান বিমান বসুর কথায় বাইরনের দলবদল যদি 'দুর্ঘটনা' হয়, তবে সেই দুর্ঘটনায় ক্ষতও হয়েছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। সাগরদিঘির জয়ে বাম-কংগ্রেস কর্মীরা লড়াইয়ে জোর পেয়েছিলেন মনে। এখন হাত রয়েছে পেনসিল, বলার জায়গাটাও চলে গেল। প্রদেশ সভাপতি দাবি করেছেন, তিনি জানতেন যে বাইরনকে টেনে নেওয়া হবে। তা সত্বেও কেন এমন প্রার্থীকে দাঁড় করানো হল। নাকি বাইরন ছাড়া আর কেউ ছিল না। শূন্য থেকে শুরু করাটা রাজনীতিতে কঠিন। এক থেকে তুলনামূলক ভাবে সহজ। বাংলার রাজনীতিতে তার উদাহরণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোট আবার জোশ নিয়ে কী ভাবে শূন্য থেকে এক হয় সেদিকেই নজর থাকবে বাংলার।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)