• এবার টার্গেট বিহার জোটের আতঙ্কে রাজ্যে রাজ্যে অপারেশন লোটাসের ছক
    বর্তমান | ০৪ জুলাই ২০২৩
  • সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: ‘৩০০ আসনে জয়ী হতে হবে আমাদের।’ গত সপ্তাহেই উত্তরপ্রদেশে এনডিএ-র একটি বৈঠকে গিয়ে একথা বলে এসেছেন অমিত শাহ। অর্থাৎ ২০২৪ সালে ৩৫০ আসনে অনায়াসে জয়ের টার্গেট থেকে সরে এসেছে বিজেপি। এখন লক্ষ্যমাত্রা ৩০০, ২০১৯ সালে প্রাপ্ত আসনের থেকে ৫১টি কম। কিন্তু কেন এভাবে কমানো হচ্ছে টার্গেট? তাহলে কি শীর্ষ নেতৃত্ব নার্ভাস? নাকি বিরোধী মহাজোটের ভয়? গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই উঠতে শুরু করেছে এই প্রশ্ন। বাস্তব বলছে, ৩০০ তো দূর, গরিষ্ঠতার ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২ অর্জন করা সম্ভব কি না এখন থেকেই সেই সংশয় চরমে। এর অন্যতম কারণ, রাজ্যওয়াড়ি ভোটব্যাঙ্কের হাওয়া এবং বিরোধী মহাজোটের শক্তিশালী বার্তা। তাই টেনশনে বিজেপির শেষ ভরসা এখন প্রিয় অস্ত্র অপারেশন লোটাসই। মহারাষ্ট্রে ভাঙন ধরানো হয়েছে শারদ পাওয়ারের দল তথা পরিবারে। সূত্রের খবর, এবার টার্গেট বিহার। নীতীশ কুমারের জেডিইউতে ফাটল ধরিয়ে একঝাঁক বিধায়ককে দলে টানাই এখন মরিয়া প্ল্যান গেরুয়া শিবিরের।

    এই অপারেশনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইতিমধ্যে বিহারে শুরু হয়েছে বিজেপির প্রচার— আগামী বছরই লালুপ্রসাদ-তেজস্বী যাদবের আরজেডির সঙ্গে মিশে যাবে নীতীশের দল। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে জেডিইউ নেতা-কর্মীদের মধ্যে। আর তার সুযোগ নিয়ে নেতা-বিধায়কদের কাছে যাচ্ছে দলবদলের অফার। গেরুয়া শিবিরের এই ছক ব্যর্থ করতে গত শুক্রবারই দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে একপ্রস্থ বৈঠক করেছেন নীতীশ। আশ্বস্ত করেছেন সকলকে। জেডিইউ সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহে ফের দলীয় বিধায়ক এবং এমপিদের নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। ২০২০ সালে জেডিইউ-বিজেপি জোট ১২৫ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু নীতীশ পরে শিবির বদল করে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরকে। ইউপিএ-র ছিল ১১০ জন বিধায়ক। জেডিইউ ৪৩টি আসন নিয়ে ঢুকে পড়ায় বিহারে এখন এই জোট অনেক শক্তিশালী। বিজেপির সম্বল ৭৪ জন এমএলএ। 

    তার উপর পাটনা এখন বিরোধী মহাজোট গঠনের এপিসেন্টার। তাই মহারাষ্ট্রের ধাক্কার থেকেও বড় আঘাত মোদি করতে চান বিহারে। কারণ, দেশের শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলি এবং কংগ্রেসর মধ্যে জোট হওয়া এখন একপ্রকার নিশ্চিত। ফলে ভোট বিভাজনের অঙ্কে রাজ্যে রাজ্যে সহজেই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কমছে বিজেপির। এই আশঙ্কা থেকেই এবার টার্গেট বিহার তথা নীতীশ কুমারের দল। অবশ্য শুধু সেখানেই নয়, সূত্রের খবর, রাজ্যে রাজ্যে অপারেশন লোটাস চলবে আগামী ৮ মাস ধরে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভয়  এবং কেন্দ্র-রাজ্যে মন্ত্রী হওয়ার আশ্বাস—এই দুই অস্ত্রে বিরোধী দলগুলির মধ্যে ফাটল ধরানোর পরিকল্পনা তৈরি। কর্ণাটকে দেবেগৌড়ার দল জেডিএসকেও রাখা হয়েছে তালিকায়।

    সোমবার সেই আশঙ্কার কথা শোনা গিয়েছে দেবেগৌড়া পুত্র কুমারস্বামীর গলায়। বলেছেন, দেখতে হবে কে হবেন কর্ণাটকের অজিত পাওয়ার! তাঁর অবশ্য ইঙ্গিত সেরাজ্যের শাসকদল কংগ্রেসের দি঩কেই। অর্থাৎ সিদ্ধারামাইয়া বনাম ডি কে শিবকুমারের বিবাদকে কাজে লাগাতে সেখানে মধ্যপ্রদেশের ধাঁচে অপারেশন লোটাসের প্ল্যান করছে গেরুয়া শিবির। যদিও রাজনৈতিক মহলের দাবি, একই আশঙ্কায় ভুগছে জেডিএসও। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ভোটের জন্য আর অপেক্ষা নয়, তার আগেই বিরোধী মহাজোট ছত্রভঙ্গ করতে মরিয়া বিজেপি। 
  • Link to this news (বর্তমান)