• বহিষ্কার পাল্টা বহিষ্কার, এনসিপিতে জমাটি নাটক চলছেই ভাইপোর প্রতি সমর্থন নেই, জানালেন শারদ
    বর্তমান | ০৪ জুলাই ২০২৩
  • মুম্বই: ক্রিকেটে একটা কথা বহুল প্রচলিত, ‘পাওয়ার প্লে’। মারাঠাভূমে রাজনীতির দাবাখেলায় এখন এই শব্দবন্ধটিই সবচেয়ে বেশি প্রচার পাচ্ছে। ‘পাওয়ার প্লে’। কাকা শারদ বনাম ভাইপো অজিত। ভাইপো বলছেন, তিনি দল অর্থাৎ এনসিপি ভাঙেনননি। তিনিএনসিপির নেতা। এনসিপি বিজেপি সমর্থিত সিন্ধে সরকারকে সমর্থন করছে। অর্থাৎ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর এই হঠাৎ শিবির বদলে প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে কাকার।

    শারদ আবার এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। সোমবার পাওয়ার স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, ভাইপোর বিদ্রোহে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। সমর্থন করা তো দূর অস্ত। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে শারদ বলেন, ‘স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এমনটা দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া বাস্তব বোধবুদ্ধিহীন ব্যক্তিরাই এমন দাবি করতে পারেন।’ তিনি যে কতটা কঠোর, তা বোঝাতেও কার্পণ্য করেননি মহারাষ্ট্রের স্ট্রং ম্যান। প্রথম যে কাজটি তিনি করেছেন তা হল, তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সাংসদ প্রফুল্ল প্যাটেল ও সুনীল তাতকারেকেও বহিষ্কার করেছেন। কন্যা সুপ্রিয়ার দাবি ছিল, ওই দুই সাংসদকে বহিষ্কার করতে হবে। কারণ এরা গোপনে মদত দিয়েছেন অজিতকে। এই দু’জনের সাংসদ পদ খারিজের দাবিও তোলেন তিনি। শুধু এই দুই সাংসদই নন, অজিতের শপথ অনুষ্ঠানে হাজির থাকা তিন প্রবীণ নেতাকেও দল থেকে তাড়ানো হয়েছে। এরা হলেন, মুম্বই ডিভিশনের এনসিপি প্রধান নরেন্দ্র রাঠোর, আকোলা জেলার দলীয় সভাপতি বিজয় দেশমুখ এবং শিবাজিরাও গারজে। পাল্টা প্রদেশ সভাপতি জয়ন্ত পাতিলকে বরখাস্ত করেছেন ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল প্যাটেল। 

    অজিত পাওয়ার সহ শপথ নেওয়া আট বিধায়কের বিধায়কপদ খারিজের দাবিতে তোড়জোড় শুরু করেছে শারদ পাওয়ার গোষ্ঠী। রবিবারই মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষ রাহুল নারওয়েকরের কাছে এই বিষয়ে আবেদন জমা পড়েছে। শপথ গ্রহণের দু’দিন আগে বিধানসভার বিরোধী দলনেতার পদে ইস্তফা দেন অজিত পাওয়ার। আর রবিবার দলেই বিদ্রোহ করে একেবারে সেনা-বিজেপি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। । এরপরই এনসিপির পক্ষ থেকে জিতেন্দ্র আওয়াদকে বিরোধী দলনেতা করা হয়। রবিবার বৈঠকে বসে এনসিপির শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। সেখানেই শপথ নেওয়া নয় বিধায়কের বিধায়ক পদ খারিজের সিদ্ধান্ত পাশ হয়। এরপর সেই সিদ্ধান্তের কথা এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ারকে জানিয়ে দেন কমিটির প্রধান জয়প্রকাশ ডান্ডেগাঁওকর। সূত্রের খবর, আওয়াদই শপথ নেওয়া বিধায়কদের পদ খারিজের দাবি জানিয়ে অধ্যক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, উপযুক্ত সময়ে তিনি এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

    বর্তমান এনসিপির অবস্থার সঙ্গে এক বছর আগের শিবসেনার অবস্থার মিল পাচ্ছেন অনেকেই। সেবার নিজেদের আসল শিবসেনা বলে দাবি করেছিলেন একনাথ সিন্ধেরা। এবারও অজিত পাওয়াররাই আসল এনসিপি বলে দাবি করছেন। মিল আরও আছে। চিফ হুইপ থেকে বিরোধী দলনেতা সব পদই দাবি করেছিল একনাথ সিন্ধে শিবির। সোমবার এনসিপির রাজ্য সভাপতি জয়ন্ত পাটিলকে অজিত পাওয়ার শিবির বহিষ্কার করে। সুনীল তাতকারেকে এনসিপির রাজ্য সভাপতি ঘোষণা করেছেন এই শিবিরের নেতারা। একইসঙ্গে অনিল ভাইদাস পাটিলকে দলের মুখ্য সচেতক করেছে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। 

    টানটান এই নাটকের মাঝে সকলের নজর ছিল অশীতিপর শারদ পাওয়ারের দিকে। অজিতদের এই বিদ্রোহে তাঁর প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়।  এই অবস্থায় মহাবিকাশ আঘাড়ি জোটের অন্তর্কলহও প্রকট হয়েছে। অজিত পাওয়ারদের বিদ্রোহ সামনে আসার পরেই বিরোধী দলনেতা পদের দাবি করেছে কংগ্রেস। শারদ পাওয়ার সেই দাবি সমর্থন করে বলেছেন, ‘যতটুকু জানি এখন কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা এনসিপি বা উদ্ধবপন্থী শিবসেনার থেকে বেশি। তাই তাদের দাবি সঙ্গত।’  
  • Link to this news (বর্তমান)