• আদালতের লড়াই ‘মেটার পথে’, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে এ বার সম্মুখসমরে জড়াল রাজ্যপাল-তৃণমূল
    আনন্দবাজার | ০৪ জুলাই ২০২৩
  • /p>

    সাধারণ মানুষের রক্ত দিয়ে ‘রাজনৈতিক হোলি’ খেলা বন্ধ করার বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেখান থেকে এই বার্তার পাশাপাশি হিংসা বন্ধে কড়া পদক্ষেপ করার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, সোমবারই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজ্য নির্বাচনে কমিশনে গেল তৃণমূল। তাদের দাবি, ভোট ঘোষণার পর আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বোস। যার ফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে শাসকদল বনাম রাজ্যপালের সঙ্ঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর হল বলে মনে করা হচ্ছে।

    অন্য দিকে, পঞ্চায়েত ভোটের বাকি মাত্র আর চার দিন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলা প্রায় গুটিয়ে এনেছে আদালত। এ বছর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেই সকল প্রার্থীর হলফনামাও প্রকাশ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সোমবার হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চ জানায়, শুধু পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করলেই হবে না, সব গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থীর হলফনামাও প্রকাশ্যে আনতে হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাধারণত পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করে কমিশন। পঞ্চায়েতের প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করা হয় না। গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কারণেই হলফনামা দেয় না কমিশন। তাদের যুক্তি, ভোটের আগে স্বল্প সময়ে এত প্রার্থীর হলফনামা দেওয়া সম্ভব নয়।

    বিরোধীদের দাবি এবং কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোটের জন্য রাজ্যে পুরো ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে চলছে। সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই ঘোষণাকে ‘বিরোধীদের জয়’ হিসাবে দেখা যেতে পারে। পঞ্চায়েত সম্পর্কিত আরও একটি মামলা আছে। ভোটগ্রহণের দফা বাড়ানোর জন্য আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির আবেদন সোমবার খারিজ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর আবেদন-সহ দফা সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা এখনও হাই কোর্টের বিচারাধীন। মঙ্গলবার তার শুনানি। কিন্তু সোমবার কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর নির্দেশের পর কমিশন মনে করছে, ভোটের চার দিন আগে দফা বাড়ানোর নির্দেশ দেবে না হাই কোর্ট। সে ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যারের সরকারের ‘জয়’ বলে একে দেখা যেতে পারে। কারণ, বিরোধীরা একাধিক দফায় ভোট দাবি করলেও রাজ্য সরকার বরাবরই এক দফায় ভোট চেয়েছে। এর মধ্যেই শাসকদল বনাম রাজ্যপালের সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হল।

    ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বনাম শাসকদলের সঙ্ঘাত বার বার সামনে এসেছে। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব শুরু হল। তৃণমূলের পক্ষে রাজ্যপালকে নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জানানো হয়েছে কমিশনকে। তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। দ্বিতীয় অভিযোগ আরও চড়া। সেখানে বলা হয়েছে, রাজ্যের গেস্ট হাউস, সার্কিট হাউস ব্যবহার করে বিজেপির সঙ্গে বৈঠক করছেন রাজ্যপাল। সম্প্রতি কোচবিহার সফরে গিয়ে সার্কিট হাউসে ছিলেন তিনি। সেখানে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে উপস্থিত হন বিজেপির প্রতিনিধিরা। রাজ্যপালের সঙ্গে সেখানে দেখা করে বিজেপির বিধায়কদের একটি প্রতিনিধি দল। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। পাশাপাশি, সোমবার ক্যানিংয়ে সেচ দফতরের বাংলো থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল। সেখানে তাঁর বক্তব্যের পুরোটা জুড়েই ছিল ভোটের আগে হিংসা সম্পর্কিত ঘটনার কথা। তৃণমূলের তৃতীয় অভিযোগ, রাজ্য বা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনও আলেচনা না করেই বিজেপির লোকজনের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করছেন বোস।

    বস্তুত, সোমবার কোচবিহার থেকে ফিরে বাসন্তীর গাগরামারি গ্রামে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেখানে অশান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। এর পর পৌঁছন ক্যানিংয়ে সেচ দফতরের বাংলোয়। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বাসন্তীর গাগরামারি গ্রামে নিহত যুব তৃণমূল কর্মী জহিরুল মোল্লার মেয়ে মনোয়ারা পিয়াদা। বাবার মৃত্যুর জন্য রাজ্যপালের কাছে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান মনোয়ারা। তিনি নিজে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন এই পঞ্চায়েত ভোটে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মূল সংগঠন এবং যুব তৃণমূলের দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন বাবা।’’ রাজ্যপালের পা জড়িয়ে তিনি বাবার মৃত্যুর সুবিচার চান। এর পর সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল বোস বলেন, ‘‘মানুষের রক্ত নিয়ে রাজনৈতিক হোলি বন্ধ হওয়া উচিত।’’ রাজ্যপালের এই বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শাসকদলও। তাদের অভিযোগ, রাজ্যপাল একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন।

    নির্বাচন কমিশনকে বার্তা রাজ্যপালের

    সোমবারই উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কলকাতা ফিরেছেন রাজ্যপাল। তিনি তিন দিন ‘অশান্ত’ কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছেন। কলকাতায় ফিরে রাজভবনে না-গিয়ে রাজ্যপাল সোজা চলে যান পঞ্চায়েত ভোটের আগে বার বার অশান্ত হওয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। ক্যানিং, বাসন্তী, ভাঙড় পরিদর্শন করেন রাজ্যপাল। সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘রাজ্যের যেখানে যেখানে সন্ত্রাস হয়েছে, সেখানে যাচ্ছি। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, আমি কারও দোষ খুঁজতে এই জায়গাগুলোয় যাচ্ছি না। আমি যাচ্ছি, তথ্যতালাশে। কেন এই সন্ত্রাস হচ্ছে, সেটা বুঝতে চাইছি।’’ রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘‘আমি দেশের সংবিধান মেনে এবং রাজ্যপালের এক্তিয়ার মেনেই এই কাজ করছি।’’ এর পরেই কমিশনকে সময় বেঁধে দেন তিনি। রাজ্যপালের কথায়, ‘‘আমার সহকর্মী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার আমায় জানিয়েছেন রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় এই অশান্তি হচ্ছে। আমিও সেই সন্ত্রাস কবলিত এলাকগুলিতে যাচ্ছি। কেন এই অশান্তি হচ্ছে তা বোঝার জন্য। রাজনৈতিক অশান্তি কেন হচ্ছে, কারা আছে এই অশান্তির পিছনে, সেগুলি খুঁজে বার করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।” রাজ্যপালের কথায়, “এই রাজনৈতিক সন্ত্রাসের মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। ভোটের জন্য আর এক বিন্দু রক্ত যাতে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। আমি ইতিমধ্যেই ক্যানিং, ভাঙড়, বাসন্তী, কোচবিহার, দিনহাটা, সিতাই, শিলিগুড়ির মতো সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় গিয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি নির্বাচন কমিশন আদালতের নির্দেশ পালন করবেন। আমি আমার উপলব্ধি জানিয়েছি সহকর্মী নির্বাচন কমিশনার (রাজীব সিংহ)-কে। আমি এ-ও বলেছি, এই অশান্তির পিছনে মূল মাথা ঠিক কে বা কারা সেটা তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে বার করতে হবে।” রাজ্যপালের এই সফর এবং মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘তিনি যে দলের অঙ্গুলিহেলনে চলছেন, সেই দলের নেতাদের রাজভবনে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলুন, সন্ত্রাসের রাজনীতি থেকে সরে আসতে।’’

    রক্ত নিয়ে রাজনৈতিক হোলি বন্ধ হোক

    সোমবার সকালে কোচবিহার থেকে পদাতিক এক্সপ্রেসে শিয়ালদহ পৌঁছন রাজ্যপাল। সেখান থেকে সড়কপথে যান ক্যানিংয়ের গাগরামারি গ্রাম। কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। গত কয়েক দিন ধরেই অশান্ত হয়ে উঠেছে ওই এলাকা। রাজ্যপালকে কাছে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তাঁকে জানান, এলাকায় বোমাবাজি হচ্ছে। গত শনিবার রাতে গুলি করে খুন করা হয়েছে গাগরামারি গ্রামের বাসিন্দা জহিরুলকে। রাজ্যপাল যখন গ্রামে যান তখন জহিরুলের পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা হয়নি। রাজ্যপাল ক্যানিংয়ের উদ্দেশে রওনা দিতেই নিহতের মেয়ে তথা ওই এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী মনোয়ারা পৌঁছন তাঁর কাছে। তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘মানুষের রক্ত নিয়ে রাজনৈতিক হোলি খেলা বন্ধ করতে হবে। আমি হিংসাদীর্ণ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি। আমি দোষ খুঁজতে নয়, প্রকৃত তথ্য জানতে ওই সব এলাকা ঘুরেছি।’’

    বোমা ফেটে তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হাড়োয়ায়

    পঞ্চায়েত ভোটের আবহে আবারও মৃত্যুর ঘটনা। এ বার ঘটনাস্থল উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া। সেখানকার শালিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সুড়িপুকুরে পরিতোষ মণ্ডল নামে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে এলাকার একটি পুকুরপাড় থেকে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরিবারের দাবি, পরিতোষকে খুন করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, রবিবার রাতেই আচমকা বিস্ফোরণ হয়। তাতে পরিতোষের হাত উড়ে যায়। দেহের বিভিন্ন জায়গায় বোমার স্‌প্লিন্টারের টুকরো বিঁধে মৃত্যু হয় তাঁর। বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও চার জন জখম হয়েছেন বলে দাবি পড়শিদের। মৃতের স্ত্রীর দাবি, তাঁর স্বামী তৃণমূলের কর্মী। সেই কারণে বিরোধী পক্ষের লোকেরা তাঁকে অনেক দিন ধরেই প্রাণে মারার চেষ্টা করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্বামী বোমা বাঁধত না। গানবাজনা করত। বোমা ফেটে এ ভাবে কারও মৃত্যু হয় নাকি! মাথার পিছনটা মেরে ফাটিয়ে দিয়েছে। যখন লাশ নিয়ে আসা হয়েছে, তখনও গলগল করে রক্ত পড়ছিল। দুটো হাত কেটে নিয়েছে। আমার স্বামীর খুনিদের কঠোর শাস্তি চাই।’’

    পুরুলিয়ায় বিজেপি নেতার রহস্যমৃত্যু

    বিজেপি নেতার রহস্যমৃত্যু পুরুলিয়ার মানবাজার এলাকার। সোমবার সকালে কেন্দডি গ্রামের কাছে নদীর পাড় থেকে বঙ্কিম হাঁসদা নামে ওই বিজেপি কর্মীর দেহ উদ্ধার হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বঙ্কিমকে খুন করেছে বলে অভিযোগ বিজেপির। তৃণমূল অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বঙ্কিম মানবাজার-২ ব্লকের হেঁসলা সংসদের কেন্দডি বুথে বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পুকুর পাড়ে তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখে বোরো থানায় খবর দেন স্থানীয়েরা। পরিবারের দাবি, রবিবার বিকেলে নিজের বাড়ি থেকে বেরোন বঙ্কিম। তার পর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ মেলেনি। রাত পর্যন্ত বিজেপি নেতা বাড়ি না ফেরায় খোঁজখবর করা শুরু করেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু তাঁর হদিস মেলেনি। সোমবার সকালে নদীর ধারে বঙ্কিমকে পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা। এ নিয়ে বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রাঙা বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বঙ্কিমকে খুন করা হয়েছে। এতে তৃণমূলের স্পষ্ট মদত রয়েছে।’’ অন্য দিকে, তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তৃণমূল এই ধরনের রাজনীতি করে না।’’

    শমসেরগঞ্জে গুলিবিদ্ধ কংগ্রেস কর্মী

    মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে রবিবার গুলিবিদ্ধ হন এক কংগ্রেস কর্মী। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হলেন এক তৃণমূল নেতা। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের নাম আশরাফুল হক। তিনি শমসেরগঞ্জের তিনপাকুরিয়া অঞ্চলের ৮৪ নম্বর বুথের তৃণমূল সভাপতি। কংগ্রেস শমসেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলামকেই গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার সেরে বাড়ি ফেরার পথে মুর্শিদাবাদের ৪ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের কংগ্রেস প্রার্থী আনারুল হককে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের দাবি, বিধায়ক আমিরুলের উপস্থিতিতে হামলা চালানো হয়েছে। তাতে গুলিবিদ্ধ হন কংগ্রেস কর্মী আরিফ শেখ। সেই ঘটনায় দলীয় নেতা গ্রেফতার হওয়ায় চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন আমিরুল। তাঁর দাবি, ভোটের আগে এলাকা দখল করতে তৃণমূল কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমিরুল বলেন, ‘‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে আমাকে গৃহবন্দি করে এলাকা দখলের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুলিশি তদন্তে সব প্রকাশ্যে আসবে।’’

    ব্যারাকপুরে বিজেপি প্রার্থীর বাড়ির অদূরে বিস্ফোরণ

    পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির প্রার্থীর বাড়ির কাছে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের শিউলি সেলামপুরে। সোমবার সকালে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি তাজা বোমা। খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সেগুলি উদ্ধার করে। বিজেপির অভিযোগ, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূল। স্থানীয় সূত্রে খবর, শিউলি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থী শিবানী জানার বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জোরালো শব্দ হয় রবিবার রাতে। কিছু ক্ষণের মধ্যে এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। বিজেপি প্রার্থীর স্বামী তথা দলের নেতা অলোক জানা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এলাকায় সন্ত্রাস তৈরি করতেই এই কাজ করেছে তৃণমূল।’’ শাসকদল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সোমবার তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনারই আমডাঙায়। সেখানে বোদাই পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বস্তা ভর্তি ১৫টি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। কে বা কারা এই বোমা মজুত করেছিল, তা স্পষ্ট নয়। বোমা উদ্ধারে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বীরভূমের দুবরাজপুরেও। সেখানে যশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পছিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ আলমের বাড়ির থেকে এক জ্যারিক্যান তাজা বোমা উদ্ধার করে দুবরাজপুর থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় ১৪-১৫টি তাজা বোমা মিলেছে।

    মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের উপর হামলা

    তৃণমূল কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠল মুর্শিদাবাদে। রবিবার রাতে মানিকচক অঞ্চলের বাউরিমারি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে শাসকদল। তাদের দাবি, বোমাবাজির জেরে তাঁদের তিন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। তাঁর বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কংগ্রেস অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার সেরে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন একদল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। অভিযোগ, সেই সময় তাঁদের লক্ষ্য করে একের পর বোমা ছোড়া হয়। ঘটনায় তিন তৃণমূল কর্মী আহত হন। প্রথমে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল লালগোলা কৃষ্ণপুর হাসপাতালে। কিন্তু দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

    স্কুলের রান্নাঘরের ছাদে মিলল বোমা

    পঞ্চায়েত ভোটের আগে আবারও বোমা উদ্ধার বীরভূমে। এ বার প্রাথমিক স্কুলের রান্নাঘরের ছাদ থেকে পাওয়া গেল বিস্ফোরক। ঘটনাস্থল দুবরাজপুরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আদমপুর গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের মিড ডে মিল যেখানে রান্না হয়, সেই ঘরের ছাদ থেকে পলিথিনের প্যাকেটে মোড়া চারটি তাজা বোমা পাওয়া গিয়েছে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। বোমাগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

    আবার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার মুর্শিদাবাদে

    পঞ্চায়েত ভোটের মুখে আবার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে মুর্শিদাবাদে। রবিবার রাতে ইসলামপুর এলাকার গ্রামে হানা দিয়ে একটি দেশি বন্দুক এবং কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছেন দু’জন। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ইসলামপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার রাতে দাড়াকাড়ি-ঘনপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে একটি দেশি বন্দুক এবং চার রাউন্ড কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)