• Sharad Pawar : পাওয়ার প্লে! ৮২-র শরদ ফের পথেই
    এই সময় | ০৪ জুলাই ২০২৩
  • মুম্বই: শরদচন্দ্র গোবিন্দরাও পাওয়ার তাঁর সমর্থকদের কাছে 'অথক মার্গদর্শক, নিরন্তর সমাজসেবক' - ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির ওয়েবসাইটের হোম পেজে এই বার্তা রয়েছে। তিনিও যে তাঁর উপর ভরসা রাখার জন্য আমজনতার কাছে কৃতজ্ঞ, রয়েছে সেই কথাও। রবিবারের অজিত-বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে এই পেজ তৈরি হয়নি, এটা বহু পুরোনো। তবে সেটাই এখনও ৮২ বছরের 'সাহেবের' জোর। আর সে জন্যই এখনও অবলীলায় বলতে পারেন, 'আমি মানুষের কাছে যাচ্ছি। আজ (সোমবার) থেকে সফর শুরু করেছি।

    পুরো রাজ্য ঘুরব। দেখি, আমার দলের পাশে মানুষ আছেন কি না!' তাঁর আত্মবিশ্বাস দেখে চমকেছেন অনেকেই। কিন্তু তাঁকে যাঁরা চেনেন, তাঁর রাজনীতির ধারার সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁদের কাছে এটাই 'পাওয়ার প্লে', যাতে অতীতেও অতি বড় 'বিদ্রোহী' মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছেন। এ বারেও কি তাই-ই হবে? সে রাস্তা খুলে রেখেছেন জনতার 'সাহেব।' তবে, সে জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

    গুরু পূর্ণিমার দিনে সাতারার করাডে পাওয়ার তাঁর রাজনৈতিক গুরু ও মহারাষ্ট্রের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যশবন্তরাও চবনের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানিয়ে যাত্রা শুরু করেন। দু'পাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, 'আজ মহারাষ্ট্র-সহ গোটা দেশে, জাতি এবং ধর্মের নামে সমাজের মধ্যে ফাটল তৈরি করছে কিছু গোষ্ঠী। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আজ থেকে আমার লড়াই শুরু হলো। এই ধরনের বিদ্রোহ হয়েই থাকে। দলকে আমি আবার তৈরি করব। যাঁরা এনসিপি ভাঙার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের আসলে যেখানে থাকার কথা, সে জায়গাটা চিনিয়ে দেবো।'

    এনসিপি-র আম সমর্থকরা যে এখনও তাঁর সঙ্গেই আছেন, এ দিনই অবশ্য তার প্রমাণ মিলেছে বলে তাঁর অনুগামীদের দাবি। এ দিন সকালে পুনের বারামতীর বাসভবন থেকে করাডের উদ্দেশে রওনা হন পাওয়ার। যাত্রা পথের প্রায় পুরোটা জুড়ে তাঁর সমর্থকদের ভিড়। বারবার দাঁড়িয়ে পড়ে তাঁকে কথা বলতে হয়, কখনও বা হাত নেড়ে তাঁদের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা জানান।

    করাডেও 'সাহেবকে' স্বাগত জানান হাজার হাজার এনসিপি সমর্থক। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক বালাসাহেব পাটিল এবং বিধায়ক মকরন্দ পাটিল। শপথ গ্রহণের আগে অজিতের বাংলোতে যে বৈঠক হয়েছিল, সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মকরন্দ। তবে, রাজভবনে যাননি। তাঁকে দেখা যাওয়ায় সেই 'বিদ্রোহীদের মাথা নোয়ানো' তত্ত্বের ইঙ্গিত মিলছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। পাওয়ার সম্পর্কে বলা হয়, তিনি মহারাষ্ট্রের প্রতিটি তালুকের এক জন অন্তত দলীয় কর্মীকে চেনেন ও নাম জানেন। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই সম্ভবত তিনি এ দিন করাডে দাঁড়িয়ে বলেন, 'মহারাষ্ট্রের মানুষ অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে নতি স্বীকার করবে না।'

    এনসিপিতে ভাঙনের পরেও রবিবারই 'শক্ত' থাকার বার্তা দিয়েছিলেন পাওয়ার। তার পর এ দিন যে ভাবে নতুন উদ্যমে শুরু করলেন তাতে মনে করা হচ্ছে বিজেপির রাজনীতির বিরুদ্ধে নতুন উদ্যমে লড়াই শুরু করার বার্তা দিলেন তিনি। কারণ বিরোধী শিবিরের অন্যতম মুখ যে পাওয়ার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই লোকসভা ভোটের আগে তাতে যেন কোনও চিড় না ধরে, সেদিকেও তিনি সমান সচেষ্ট বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অনেক বিশ্লেষকই।

    পাওয়ারকে এদিন প্রশ্ন করা হয়, ভাইপো অজিতের বিদ্রোহ নিয়ে কি সত্যিই তাঁর অজ্ঞাতসারে হয়েছে? নাকি তিনিই এই বিদ্রোহের পিছনের 'অন্তর্নিহিত শক্তি?' মারাঠা স্ট্রংম্যানের সটান উত্তর, 'যাঁদের খুব লো আইকিউ, তাঁরাই এই কথা বলতে পারেন। তাঁরা রাজনীতিরও কিছু বোঝেন না।' এর বাইরে তিনি আর এই বিষয়ে নিয়ে কিছু বলেননি।

    এমনকী তাঁর বহু বছরের পুরোনো ছায়াসঙ্গী প্রফুল প্যাটেলের ছুরি মারা নিয়েও নয়। কিছু পরে তাঁর সংযোজন, 'আমি সারা রাজ্যে সফরে বেরিয়েছি এবং কর্মীদের উজ্জীবিত করছি। কোন নেতা কী করল, তাতে ওই কর্মীদের কিছু যায় আসে না।' তবে পাওয়ার পুরো অস্বীকার করলেও, যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছেই, তা হলো, তাঁর বিশ্বস্ত ও পুরোনো অনেক সেনানীও যে অজিতের হাত ধরলেন, সেটা কি সত্যিই তাঁকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে? এমনকী তাঁর এক সময়ের ছায়াসঙ্গী প্রফুল প্যাটেলও?

    রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, পাওয়ার রাজনীতির নাড়ি বোঝেন। তাই নিজেকে আপাতত 'ভিক্টিম' প্রমাণ করা তাঁর কাছে কোনও সমস্যা নয়। বুঝিয়ে দেবেন, অজিতের আকস্মিক বিদ্রোহের জন্য তাঁকে এই বয়সে রাস্তায় নেমে জনতার দরবারে যেতে হচ্ছে সুবিচার চাইতে! রবিবার পাওয়ার বলেছিলেন, 'অজিত গুগলি দেয়নি, ডাকাতি করেছে। তবে আমরা এখনই আদালতে যাচ্ছি না।' তখন মনে করা হয়েছিল, তিনি ভেঙে পড়েছেন, তাই বেশ নরম প্রতিক্রিয়া দিলেন। তবে সোমবার সকালেই বোঝা গেল, কেন তিনি ওই কথা বলেছেন - 'দাদা' অজিতকে মাত দিতে 'সাহেব' পাওয়ারের সব ঘুঁটি প্রস্তুত। খেলা হবে।
  • Link to this news (এই সময়)