• মনোনয়নে গান্ধীগিরি সত্ত্বেও ময়দানে নেই বিরোধীরা মঙ্গলকোটে দাপট শাসকেরই
    বর্তমান | ০৫ জুলাই ২০২৩
  • সুখেন্দু পাল, মঙ্গলকোট: ভোট ময়দানে এমন ‘গান্ধীগিরি’ আগে কখনও দেখেনি মঙ্গলকোট। মনোনয়নপত্র জমা করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল শাসক দল। হুমকি, বোমাবাজি, শ্যুটআউটের চেনা ছবি দেখা যায়নি মঙ্গলকোটে। তবুও বিরোধীরা অমঙ্গল কাটাতে পারল না এই বিধানসভা কেন্দ্রে। অধিকাংশ পঞ্চায়েতে তারা প্রার্থীই দিতে পারেনি। নিগন, কৈচর, ঝিলুর মতো বিভিন্ন এলাকায় শুধু শাসকের দাপাদাপি। প্রতিটি গ্রামে উড়ছে তৃণমূলের ঝান্ডা। কোথাও কোথাও সিপিএমের দেওয়াল লিখন রয়েছে। কিন্তু ময়দানে বাম নেতা-কর্মীদের দেখা পাচ্ছেন না স্থানীয় বসিন্দারা। নিগন গ্রামের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল মনোজ সরকারের সঙ্গে। তাঁর আক্ষেপ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই মঙ্গলকোটের বাসিন্দারা কখনও দেখল না। বাম জমানাতেও সিপিএমের বাধায় বিরোধীরা অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিতে পারত না। সিপিএম প্রার্থীরাই অধিকাংশ আসনে জয়ী হতেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে শুধু জয়ী প্রার্থীর প্রতীক বদলে গিয়েছে। ছবিটা বিশেষ বদলায়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, এবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ‘গান্ধীগিরি’ শুধু একটা কৌশল ছিল মাত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বালির ঘাটগুলি মঙ্গলকোটের রাজনীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র। বালি কারবারিদের একটা বড় অংশ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যেদিকে যখন থাকে, পাল্লা ভারী হয় তাদেরই। বালি কারবারিদের দাপটে বিরোধীরা মাথা তুলতে পারে না। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দল মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে গান্ধীগিরির নীতি নিয়েছিল। কাউকে সেভাবে বাধা দেয়নি। কিন্তু মঙ্গলকোটের আতঙ্ক থেকেই গিয়েছে। সেই কারণে অনেক বাম পরিবারের সদস্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাহস দেখাননি। একই কারণে পিছিয়ে এসেছিলেন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা। দুই বিরোধী দলের নেতাদের এমনটাই দাবি। সিপিএম নেতা অমল হালদার বলেন, মঙ্গলকোটে আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে। সেই কারণে আমরা অন্য জায়গায় প্রার্থী দিতে পারলেও এখানে তা পারিনি। ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টিতে ইতিমধ্যেই বোর্ড গঠন নিশ্চিত করে ফেলেছে তৃণমূল। কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনেও তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। তবে জেলা পরিষদের আসনগুলিতে এখানে ভোট হচ্ছে। বিরোধীরা এই এলাকার জেলা পরিষদের আসনগুলি নিয়েও তেমন আশাবাদী নয়। তবে তৃণমূল এই লড়াই হালকাভাবে নিতে নারাজ। তারা ব্লকজুড়ে দাপিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। 

    মঙ্গলকোটের তৃণমূল নেতা তথা এলাকার বিধায়ক অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, এখানে সিপিএমের কয়েকজন নেতা প্রার্থী হয়েছেন। ওঁদের কর্মী সমর্থক নেই। কর্মী বা সমর্থক না থাকার জন্যই ওরা সব আসনের প্রার্থী দিতে পারেনি। বাধ্য হয়ে নেতারা পঞ্চায়েতে লড়াই করছেন।বনকাপাশিতেও তৃণমূলের সামনে অন্য কোনও দল মাথা তুলতে পারছে না। শাসক দলের প্রভাব এখনও অটুট রয়েছে। আছে দাপটও। তবে ভোটকে সামনে রেখে মঙ্গলকোটে এখনও কোনও মারামারি, খুনোখুনি না হওয়ায় খুশি এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা বলেন, মঙ্গলকোটে অনেক উন্নতি হয়েছে। শান্তিও আছে। তবে, তা সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। 
  • Link to this news (বর্তমান)