• বাঙালি-বিদ্বেষী বিজেপি: মমতা
    বর্তমান | ০৫ জুলাই ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলা ও বাঙালির সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। তারা শুধু চায় ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ লাগিয়ে  রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে। মঙ্গলবার একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদির দলের বিরুদ্ধে এভাবেই আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘বিজেপি হল অ্যান্টি বেঙ্গলি। বাংলার ভালো ওরা চায় না। ওরা বাংলাকে ভাতে মারতে চায়।’ এই সূত্রে রাজ্যপাল ও রাজভবনকে আরও একবার নিশানা করেন মমতা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক হিংসার প্রশ্নে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের আচরণ ও প্রতিক্রিয়া তিনি যে কোনওভাবেই সমর্থন করছেন না, এদিন আরও একবার তা স্পষ্ট করে দেন নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘রাজভবন বিজেপির পার্টি অফিসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সাংবিধানিক পদে থেকে তিনি ভোটের প্রচার করতে পারেন না। রাজ্যপাল মনোনীত। আমরা নির্বাচিত।’

    ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে বাংলায় গেরুয়া শিবিরের প্রভাব বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে থেকে তারা রীতিমতো বাংলা দখলের হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করে। কার্যত গোটা দেশ থেকে হোমরাচোমরা বিজেপি নেতাদের উড়িয়ে এনে আওয়াজ তোলা হয়েছিল, ‘আব কি বার, ২০০ পার।’ কিন্তু মানুষের রায়ে বিজেপির বঙ্গজয়ের আশা চূর্ণ হয়ে যায়। তৃণমূলের অভিযোগ, তারপর থেকেই শুরু হয়েছে প্রতিশোধ স্পৃহা মেটানোর পালা। বাংলার সরকার ও বাঙালিকে সমস্যায় ফেলতে চক্রান্ত শুরু করেছে বিজেপি ও তাদের পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার। এর সবথেকে বড় প্রমাণ ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার ন্যায্য পাওনা আটকে রাখা। প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্র কোনও অর্থ বরাদ্দ না করায় শেষ পর্যন্ত বাঙালিদের সমস্যাই  বেড়েছে। এখানেই তৃণমূলের দাবি, বিজেপি বাঙালি বিদ্বেষী না হলে এভাবে প্রাপ্য টাকা আটকে রাখত না।  তাদের আরও অভিযোগ, সম্প্রতি কখনও কুড়মি-আদিবাসী, কখনও বাঙালি-রাজবংশী বা পৃথক উত্তরবঙ্গ ইস্যুতে বিভাজনের চারাগাছে সার-জল দিয়েছে বিজেপি। এই আবহে মমতা এদিন বলেন, ‘আমি হিন্দু, মুসলমান, শিখ, জৈন—কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের বিরোধী নই। সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই। কিন্তু বিজেপি বাঙালি বিরোধী।’ বিজেপির হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’ তথা প্রধানমন্ত্রী মোদিকে তাঁর কটাক্ষ, ‘মোদি কিন্তু রাম নয়। রামসেবক হতে পারেন।’ 

    গত ২৭ জুন উত্তরবঙ্গ থেকে ফেরার পথে দুর্যোগের কবলে পড়ে মমতার হেলিকপ্টার। জরুরি অবতরণের সময় নামতে গিয়ে চোট পান তিনি। তারপর থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতেই রয়েছেন। দুর্ঘটনার সাত দিনের মাথায় এদিন বাড়িতে বসে সাক্ষাৎকার দেন তৃণমূল নেত্রী। প্রথমেই উল্লেখ করলেন, তিন মিনিটের জন্য কপ্টার মিসিং হয়ে গিয়েছিল। পাইলটের জন্য বাঁচতে পেরেছেন। তাঁর অভিযোগ, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস রামধনু জোট করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নেমেছে। এই অবস্থায় বাংলার মানুষের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘কুৎসা-অপপ্রচার করছে রাম-বাম-শ্যাম। কেন্দ্রীয় বাহিনী এখন বিজেপি-সিপিএমের বাহিনী হয়ে গিয়েছে। তাই সকলকে বলব, কেউ ভয় পাবেন না।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)