নির্বাচন আসে-যায়, হাল ফেরে না ইছামতির, দুর্দশা মাঝি-জেলেদের
বর্তমান | ০৫ জুলাই ২০২৩
সংবাদদাতা, বনগাঁ: নদীতে জল নেই। যেটুকু আছে সেটুকুও পচা। সেটুকুও আবার কচুরিপানায় ভর্তি। জল কালো। তাই এখন আর মাছও আসে না। ফলে জেলেদের কাজ নেই। পারাপার কমেছে বলে কাজ নেই মাঝিদেরও। যুগের পর যুগ ধরে যে ইছামতি অগুন্তি মানুষের পেট ভরাতো, সেই নদী নিজেই মরছে, অন্যকে খাওয়াবে কীভাবে? ফলে ইছামতির আবদুল মাঝিরা গালে হাত দিয়ে বসে থাকে। বাপ-পিতেমোর কালের কাজ হারিয়ে বাধ্য হয়ে অন্য কাজ খোঁজে।
বাগদা ব্লকের মঙ্গলগঞ্জের নীলকুঠি। পাশ দিয়ে যায় ইছামতি। নদীর ওপারে বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য। এপারে বসেছিলেন মনোরঞ্জন হালদার। একসময় এই নদীতে মাছ ধরতেন। কিন্তু এখন মাছ নেই। কচুরিপানা নৌকার গতিরোধ করে। এবার বাধ্য হয়ে জীবিকা বদলেছেন মনোরঞ্জনরা। কয়েকজন নীলকুঠির সামনে নদীর কিছু অংশের কচুরিপানা সাফ করেছেন। তারপর পর্যটকদের নিয়ে শুরু করেছেন নৌকাভ্রমণ। অল্প কিছু আয় হয়। বসে বসে ঘুণী বা আটুল (মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ) মেরামত করছিলেন মনোরঞ্জন। বলেন, ‘নদীর জল পচে গিয়েছে। মাছ হয় না। ঘুণী ঠিক করছি। যদি বর্ষায় নদীতে জল হয়, সেই আশায়।’
এই ব্লকের মালিপোতা পঞ্চায়েতের মথুরা গ্রামের প্রায় শতাধিক জেলে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতেন একসময়। এখন প্রায় সকলেই পুরনো পেশা বদলেছেন। এখন তাঁরা দিনমজুর। বনগাঁ, বাগদা ও গাইঘাটা ব্লকের কয়েক হাজার মৎস্যজীবী ইছামতির উপর নির্ভর করে বাঁচতেন। আজ নদী শুকিয়ে পেটের ভাতের জোগান দিতে পারে না। একসময় নদীপথে পণ্য পরিবহণে চলাচল করত একাধিক ভটভুটি। অনেক কর্মসংস্থান হয়েছিল তখন। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে মজা খালের মতো হয়ে গিয়েছে ইছামতি। জোয়ার-ভাঁটা পর্যন্ত খেলে না। নদীর বুকে ভর্তি আগাছা। দূষণ বেড়েই চলেছে। ভটভটিও বন্ধ। মানুষের বক্তব্য, নদী মজে যাওয়ার অন্যতম কারণ বেআইনি ভেরির সংখ্যা বেড়েই চলা। নদী দখল করে ভেরি হতে থাকায় স্রোত বাধা পায়। পলি জমে। নাব্যতা হারায় নদী। এছাড়া আবর্জনা ফেলে ক্রমশ বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে ইছামতিকে। তবুও ভ্রূক্ষেপ নেই কারও।
ভোট আসার পর ইছামতি সংস্কারের কথা বলে রাজনৈতিক দলগুলি। প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটে জিতেও আসে। তারপর যে কে সেই। প্রতিশ্রুতি ভুলে মেরে দেয়। এবারও মাঝি-মৎসজীবীরা ইছামতিতে স্রোত ফেরানোর দাবিতেই ভোট দেবে এই জেনে যে, প্রতিশ্রুতি ভোটের অস্ত্র ছাড়া অন্য কিছু নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা পালন হয় না।