• অষ্টমীতে বাংলায় অঞ্জলি দিয়ে তৃপ্ত বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা, আনন্দিত যৌনপল্লির বাসিন্দারাও
    প্রতিদিন | ০৪ অক্টোবর ২০২২
  • সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তৃপ্তির প্রথম আলো। গর্ব আর খুশিতে ঝলমলে পুজোপ্রাঙ্গন। অষ্টমীর (Mahashtami) দিন অঞ্জলি শেষে ?স্নেহদিয়া? বৃ্দ্ধাশ্রমের আবাসিকরা একেবারে অন্য মেজাজে। কেননা এই প্রথমবার তাঁরা পুজোয় অঞ্জলি দিলেন বাংলা ভাষায়। অর্থ বুঝে মায়ের কাছে মনের আর্তি জানাতে পেরে আপ্লুত প্রত্যেকেই।

    ?আমি ভাবতেই পারিনি যে, বাংলায় কখনও মায়ের কাছে অঞ্জলি (Pushpanjali) দিতে পারব?, অঞ্জলি শেষে জানালেন এক আবাসিক। জানা গেল, এককালে সংস্কৃত ছিল তাঁর পাঠ্য। ভাষাটিকে তিনি ভালও বাসেন। তবু মাতৃভাষা তো বাংলাই। মায়ের ভাষার টান নাড়ির টানের মতোই। আর তাই প্রথমবার বাংলায় অঞ্জলি দেওয়ার আনন্দে তিনি বিভোর। জানালেন, তাঁর জীবনে এই অষ্টমী একেবারে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা বয়ে আনল। আরেক আবাসিক জানালেন, ?প্রথম মা বলতে শিখি বাংলা ভাষাতে। সেই ভাষাতেই মায়ের কাছে অঞ্জলি দিতে পারলাম, এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে!?

    বিশ্বজুড়ে বাঙালি অষ্টমীর অঞ্জলি দিক বাংলাতেই, সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের এই উদ্যোগ যে বাঙালির হৃদয় স্পর্শ করেছে, শহরের এই প্রবীণ আবাসিকদের কথাই যেন তা বুঝিয়ে দিল। এই প্রয়াসকে সার্থক করে তুলতে সংস্কৃত থেকে বাংলায় মন্ত্রের অনুবাদ করেছেন শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, ভাষাবিদ পবিত্র সরকার ও বিশিষ্ট পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। তৈরি হয়েছে বিশেষ পুঁথি ?শ্রীশ্রীদুর্গার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র- বাংলা সংস্করণ?। সেই পুঁথি হাতে নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই আপ্লুত ?স্নেহদিয়া?র আবাসিকরা। বললেন,?সংস্কৃত মন্ত্রের যে দীপ্তি আর তেজ আছে, এই অনুবাদেও তা খুঁজে পেলাম। কোনও অসুবিধাই তাই হয়নি।? অবশ্য বাংলা মন্ত্রে অঞ্জলি দেওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন হবে, তা নিয়ে গোড়াতে সন্দিহানও ছিলেন কেউ কেউ। তবে অষ্টমীর সকাল মুছে দিল সব দ্বিধা ও সংশয়। এবছর বাংলায় অঞ্জলি দিয়ে তাই আরেক আবাসিক বললেন,?পরের বছরও যদি বাংলায় অঞ্জলির আয়োজন হয়, আমি খুব খুশি হব।? তাঁরা প্রবীণ। তবু অভ্যাসের বেড়া ভেঙে নতুন পথের যাত্রী হতে যে পিছপা নন, সে কথাই মুক্তকণ্ঠে জানিয়ে দিলেন সকলে।

    ঠিক একই ভাবে এবছর অষ্টমীর সকাল অন্য়রকম হয়েছে দুর্বার সমন্বয় কমিটির পুজোতেও। যৌনকর্মীদের আয়োজিত এই পুজোতেও এবার অঞ্জলি বাংলা ভাষাতেই। এতদিন অবশ্য সংস্কৃতেই হয়েছে অঞ্জলি। তার অর্থ বুঝতে যে সমস্য়া হত, এমনকী উচ্চারণেও অসুবিধা হত, তা স্বীকার করতে দ্বিধা করলেন না দুর্বারের সদস্যরা। আর সেখানেই যেন মুক্তির হাওয়া হয়ে এল বাংলায় অঞ্জলি দেওয়ার আয়োজন।

    ?সংস্কৃত ভাষাকে ছোট করছি না, কিন্তু সেটা বোঝা সবসময় সম্ভব হত না। এখন যখন বাংলায় অঞ্জলি দেওয়ার সময় আমি বললাম যে, আমি যদি জ্ঞানে-অজ্ঞানে কোনও পাপ করে থাকি, তখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে, আমি কী বলছি, মায়ের কাছে ঠিক কী চাইছি,? বাংলায় অঞ্জলি দিয়ে বললেন দুর্বার সমন্বয় কমিটির সভানেত্রী বিশাখা লস্কর। অঞ্জলির অর্থ বুঝতে পারার আনন্দ অন্যদের চোখেমুখেও। প্রথমবার বাংলায় অঞ্জলি দেওয়ায় তাই খুশি সকলেই। বিশাখা লস্কর আরও জানালেন, ?আগেও তো আমি মায়ের কাছে বলতাম, জগতের জননী তুমি, সকলকে ভাল রেখো, সুস্থ রেখো। এবার মন্ত্রের মাধ্যমেই বাংলাতে সেই কথাগুলোই মাকে জানাতে পেরে সত্য়ি খুব ভাল লাগছে।? আর তাই পরের বছরও এই পুজোয় বাংলাতেই অঞ্জলির আয়োজন করবেন বলেই মনস্থ করেছেন তিনি।

    বাংলায় পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার উদ্যোগে শামিল হয়েছিলেন জনপ্রিয় আরজে অগ্নি। এসেছিলেন দুর্বার সমন্বয় কমিটির পুজোতে। এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বললেন, ?ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, মোদের গরব, মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা?, সেই মাতৃভাষায় যদি মায়ের পুজো করা যায়, তার থেকে বড় উদ্যোগ আর কিছু হতে পারে না। মায়ের পুজোকে উপলক্ষ করে যদি মাতৃভাষারও বন্দনা করা হয়, তবে মন্দ কী! এই পুজো তো অকালবোধন, এই উদ্যোগ নাহয় বাংলা ভাষারও একটা অকালবোধন হল।? বাংলায় অঞ্জলি দিয়ে এতটাই খুশি তিনি যে জানিয়ে দিলেন, পরের বছরও অঞ্জলি দেবেন বাংলাতেই। প্রবীণ থেকে নবীন। বাংলা ভাষায় অঞ্জলি দেওয়ার এই উদ্যোগ এভাবেই উৎসবের দিন বেঁধে-বেঁধে রাখল সকলকেই।
  • Link to this news (প্রতিদিন)