• ‘মহারাজ এবার রাজ্যপাট পেল’ অনন্তর পদপ্রাপ্তিতে খুশি বোন
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৩
  • সংবাদদাতা, দিনহাটা: মহারাজ এবার রাজ্যপাট পেল, দাদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের খবরে আনন্দে আত্মহারা অনন্তর বোন ফেলানি বর্মন। সেজ ভাইয়ের সাফল্যে খুশি মহারাজের দাদা জুরিন্দ্র বর্মনও। তাঁর কথায়, ভাগ্যের পরিহাসে সব খুইয়েছিলাম আমরা, কাজের খোঁজে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল ভাই। এবার রাজ্যসভায় যাচ্ছে অনন্ত। এর চেয়ে খুশির আর কী হতে পারে। ‘মানুষের কথা তুলে ধরতেই রাজ্যসভায় যাচ্ছি’, বিনাযুদ্ধে জেতার পর এমনই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অনন্ত মহারাজ ওরফে নগেন রায়। 

    অনন্ত মহারাজের রাজ্যসভায় প্রার্থী হওয়ার পর একাধিক বিতর্ক সামনে এসেছে। তবে এই বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে পরিবারের সদস্যরা অনন্ত মহারাজের রাজ্যসভায় যাওয়ার খবরে খুশি। মহারাজের বোন ফেলানি বর্মন বলেন, দাদা ‘মহারাজ’ হিসেবে ভক্তদের কাছে পরিচিত, কিন্তু তাঁর রাজ্যপাট ছিল না। এবার রাজ্যসভায় যাওয়ায় দাদা যেন রাজ্যপাট পেল। 

    দাদার রাজ্যসভায় যাওয়ার খুশির খবরে চোখের কোণে আনন্দঅশ্রু চিক চিক করছিল ফেলানির। মহারাজের বোন হিসেবে তাঁর ভক্তদের কাছে আলাদা সম্মান পান তিনি। কার্যত রাজপাট পাওয়ায় আরও খুশি বোন। অনন্ত মহারাজের পৈত্রিক ভিটে গোসানিমারিতে থাকেন তাঁর বোন ফেলানি। 

    স্বঘোষিত এই মহারাজের আদিবাড়ি গোসানিমারি। সেই বাড়িতে এখনও থাকেন তাঁর বড়দা জুরিন্দ্র বর্মন। বাড়িতে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। সবার ছোট ভাই গুপীন বর্মনের কিনে দেওয়া জমিতে ভাঙাচোরা টিনের বাড়িতে বাস করেন তিনি ও তাঁর পরিবার। সেজ ভাই অনন্তর এই রাজনৈতিক সাফল্যে খুশি তিনিও। মহারাজের দাদার বাড়িঘর এরকম বলে মনে খেদ থাকলেও তা তাঁর ভাগ্য দোষে হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। ছোটবেলায় এক ঠগ মানুষের খপ্পরে পড়ে তাঁর বাবা দেবকান্ত বর্মন সর্বস্বান্ত হন। তারপর খিদের জ্বালায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো সবাইকে। ভাগ্যের সন্ধানে নিরুদ্দেশ হন অনন্ত। অসমে গিয়ে কাজের সন্ধান পান। দু’বছর পরে বাড়ি ফেরেন। আদরের ছেলেকে কাছে পেয়ে সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন অনন্তর মা টেরি বর্মন। কাজ করতে করতেই অনন্ত কোচবিহার রাজ্যের ভারত ভুক্তির চুক্তির সন্ধান পান বলে দাবি তাঁর। এরপরই পৃথক রাজ্যের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। অনুগামীদের কাছে মহারাজ হিসেবে পরিচিতি পান। চকচকায় তৈরি করেন রাজবাড়ি। সেই বাড়ি গেলে অনন্তর নিরাপত্তারক্ষীরা মহারাজের দাদা হিসেবে আলাদা সম্মান করেন। ভাগ্যচক্রে তাঁদের পরিবার একবার সবকিছু খুইয়েছে। সেই পরিবারের সন্তান এবার রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করবেন। ভাইয়ের এই সাফল্য যেন ওঁর কপালে আগে থেকে লেখা ছিল। তাই সব বিতর্কের ইতি টেনে ভাইয়ের সাফল্যে খুশি জুরিন্দ্রও। তিনি বলেন, অনন্তর মহারাজ হওয়ার পিছনে অনেক ইতিহাস রয়েছে। ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করে বড় হয়েছে ও। চাকরি পেতে নিরুদ্দেশ হয়েছিল। দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনে মহারাজ হয়েছে। এবার রাজ্যসভায় জয়ী হল। ভাইয়ের এই সাফল্য দাদার কাছে সবসময় আনন্দের। 

    রাজ্যসভায় জিতলেও চাকরি পেয়ে বাড়ি ফেরার পর মায়ের কান্না এখনও মনে রয়েছে অনন্ত মহারাজের। রবিবার তিনি বলেন, চাকরি পেয়ে দু’বছর পর বাড়িতে এসে পিছন ফিরে মাকে ডাকি। প্রথমে মা চিনতেই পারেনি। পরক্ষণেই  চিনতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। সেই দিন কি ভুলতে পারি? আমি এখন কর্মব্যস্ত মানুষ, সবার কথা তুলে ধরব রাজ্যসভায়।
  • Link to this news (বর্তমান)