সংবাদদাতা, পুরাতন মালদহ: রবিবার ভোরে মালদহের বামনগোলা ব্লকের মদনাবতি গ্রাম পঞ্চায়েতের কন্যাদিঘি গ্রামে বাবাকে নৃশংসভাবে খুন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিল ছেলে। এমনটাই অভিযোগ করছেন গ্রামবাসীরা। ওই ঘটনায় রাজনৈতিক রং লেগেছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম বুরন মুর্মু (৫৬)। তিনি বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। অভিযুক্ত ছেলে বিপ্লব মুর্মু তৃণমূলের এসটি সেলের বামনগোলা ব্লক সভাপতি। বিপ্লবের স্ত্রী এবার তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। তিনি বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের দাবি। পুলিস জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না এলে এনিয়ে কিছু বলা যাবে না।
এবিষয়ে মালদহের ডেপুটি পুলিস সুপার (আইনশৃঙ্খলা) আজহারউদ্দিন খান বলেন, রবিবার রাতে মৃতের ছেলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ রুজু হয়েছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। পুত্রবধূকে আটক করে জেরা চলছে।
বিজেপির উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, তৃণমূল ইন্ধন দিয়ে পারিবারিক হত্যা করিয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা চাইছি প্রয়োজনে সিবিআই তদন্ত হোক। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন হবিবপুরের বিজেপি বিধায়ক জয়েল মুর্মু। তিনি বলেন, যিনি খুন হয়েছেন তিনি আমাদের সক্রিয় কর্মী। আমরা এর সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। স্থানীয় বাসিন্দা কল্পনা হেমব্রম বলেন, ছেলে বাবাকে খুন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ঘরে শিকল দিয়েছে। যেভাবে খুন করা হয়েছে, আমরা তার শাস্তি চাই। তৃণমূল কংগ্রেসের বামনগোলা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অশোক সরকার বলেন, ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। সাংসদ ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। ঘটনায় জমি জায়গা নিয়ে পারিবারিক বিবাদ থাকতে পারে। তবে বিষয়টি পুলিস দেখছে।
মৃত বুরন মুর্মুর পুত্রবধূ শর্মিলা মুর্মু এবার গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন। ফলাফলে তিনি ৬০ ভোটে বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলে মনে করত বাবা বিজেপির হয়ে কাজ করায় শর্মিলাদেবী হেরে গিয়েছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে তৃণমূল নেতা ছেলে বিপ্লব মুর্মু। সেই রাগেই বিজেপি কর্মী বাবাকে খুন করে দড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আগেও জমি বিবাদ নিয়ে ছেলে বাবার মধ্যে বিবাদ হয়েছে। তিনি খুন হতে পারেন, এনিয়ে স্থানীয় পুলিস ফাঁড়িতেও জানানো হয়েছিল বলে গ্রামবাসীরা দাবি করছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। এদিন ভোরে ছেলে বাবাকে খুনের পর ঘরে তালা মেরে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
ঘটনার খবর পেয়ে ওই গ্রামে পুলিস এলে প্রথমে বাসিন্দারা মৃতদেহ উদ্ধারে বাধা দেন। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উপস্থিতিতে পুলিস মৃতদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ছেলে ফেরার রয়েছে। পুলিস তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। ঘটনায় ওই ব্যক্তির পুত্রবধূকে পুলিস আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। এদিকে, এদিন অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে পুলিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা।