• জেলা সভাপতির পদ থেকে সরাতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে সুকান্তকে বিস্ফোরক চিঠি তপনের, অস্বস্তিতে বিজেপি
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৩
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, পাঁশকুড়া: বিজেপি তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদ থেকে তাঁকে সরানোর ষড়যন্ত্র চলছে। এই অভিযোগ তুলে বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে চিঠি লিখছেন দলের জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার সাফল্যকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। এনিয়ে কেউ প্রশ্রয় দিচ্ছে। সেটিং করে পার্টির ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। দল তদন্ত করে তার সুব্যবস্থা নিক। 

    এই চিঠি ঘিরে শুরু হয়েছে তোলপাড়। কার মদতে পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতি ও মণ্ডল সভাপতি গোপাল সাহু নবনির্বাচিত ২২সদস্যকে ওড়িশার হোটেলে লুকিয়ে রেখেছিলেন, তানিয়ে জলঘোলা হচ্ছে। গোটা ঘটনার দলীয়স্তরে তদন্ত চেয়েছেন জেলা সভাপতি। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক(সংগঠন)অমিতাভ চক্রবর্তী বিবদমান দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসবেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। তপনবাবু বলেন, আমি নিজের বক্তব্য রাজ্য সভাপতিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।

    পাঁশকুড়া ব্লকে ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত। বিজেপি মাইসোরা, কেশাপাট এবং হাউর পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। পাঁচটিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। আরও পাঁচটি ত্রিশঙ্কু। মাইসোরা ও কেশাপাট গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে বিজেপির মোট ৩১জন জয়ী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২২জনকে নিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন পাঁশকুড়া পশ্চিম মণ্ডল-৪এর সভাপতি গোপালবাবু। তাঁকে এই কাজে সহযোগিতা করেন বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতি। তিনি ঘাটাল লোকসভার দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। ’২১সালে সিন্টু পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ফিরোজা বিবির কাছে পরাজিত হয়েছিলে। 

    মণ্ডল সভাপতি এবং সিন্টুর এই কাজকর্মে ক্ষুব্ধ হন বিজেপি-র জেলা সভাপতি। তিনি বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নালিশ জনান। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মণ্ডল সভাপতি গোপালবাবুকে মুরলিধর সেন লেনে ডেকে অবিলম্বে ২২জনকে ঘরে ফেরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইমতো শনিবার সন্ধ্যায় নবনির্বাচিতরা সকলে বাড়ি ফিরে যান। মণ্ডল সভাপতি গোপাল ও সিন্টু সেনাপতির দাবি, জেলা সভাপতি তপনবাবু এবং জেলা কোষাধ্যক্ষ জগদীশ প্রামাণিক তৃণমূলের কাছে নবনির্বাচিতদের বিক্রি করতে চাইছেন। সেজন্য তাঁরা সদস্যকে গোপন ডেরায় নিয়ে যান।

    যদিও গোটা ঘটনার নেপথ্যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে বিজেপি-র জেলা সভাপতির দাবি। ১৫জুলাই তিনি এনিয়ে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে চিঠি দিয়েছেন। তাতে পরিষ্কার জানিয়েছেন, ‘জেলা সভাপতির পদ থেকে আমাকে সরানোর পরিকল্পনা চলছে। আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। দলের প্রতি আনুগত্য নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে নেতৃত্বদান করছি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা সাফল্য পেয়েছে। কতিপয় ব্যক্তি সেই সাফল্যকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। পাঁশকুড়ার এই ঘটনাকে যে বা যাঁরা প্রশ্রয় দিয়ে দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, তার তদন্ত হোক। পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী ১৩জন সদস্য এসম্পর্কে অবগত। এই নোংরা রাজনীতি যাঁরা করছেন তাঁরা অবিলম্বে এই কাজ বন্ধ করুন।’ পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতি আসলে দলবদলু নেতার ঘনিষ্ঠ। গত বছর জেলা সভাপতিকে হেনস্তার ঘটনায় সিন্টু ও তাঁর তিন ঘনিষ্ঠকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। পরবর্তীতে ক্ষমা চেয়ে রাজ্যে চিঠি পাঠানোয় শাস্তি প্রত্যাহার করা হয়। সেই সিন্টুকে দিয়েই আবার জেলা সভাপতিকে সরানোর চক্রান্ত হচ্ছে বলে বিজেপির অন্দরে চর্চা। এপ্রসঙ্গে সিন্টু সেনাপতি বলেন, নবনির্বাচিত সদস্যদের কাছে তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাতের প্রস্তাব দলের তরফ থেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেই তাঁরা সেটা বলে দেবেন। সেজন্য তাঁদের গোপন আস্তানায় সরানো হয়। এর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)