• জেলা পরিষদের ৫০ শতাংশের বেশি আসনে জমানত জব্দ বাম-কংগ্রেসের বিরোধীদের ৬২ জন প্রার্থীর জমানত জব্দ
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: জোটের জিগির তুলেও ভোটের ঠিক আগে বাম-কংগ্রেস পৃথক লড়াইয়ে শামিল হয়। যার জেরে বড়সড় খেসারত দিতে হল দুই শিবিরকেই। নদীয়া জেলা পরিষদের ৫০ শতাংশের বেশি আসনে বাম-কংগ্রেস প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে। ‌তালিকায় রয়েছে বিজেপি প্রার্থীরাও। সবমিলিয়ে বিরোধী শিবিরের মোট ৬২ জন প্রার্থীর জামানত জব্দ করেছে তৃণমূল।‌ সবার উপরে রয়েছে কংগ্রেস। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।‌ পঞ্চায়েতস্তরে কিছুটা দাগ কাটতে পারলেও জেলা পরিষদে শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বিরোধী শিবির। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। যদিও, বিরোধী শিবিরের তরফে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপি, প্রার্থীদের ভয় দেখানো, ছাপ্পা ভোট সহ একগুচ্ছ অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তাতে অবশ্য আমল দিতে রাজি নয় তৃণমূল। জেলা পরিষদ আসনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নদীয়ায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাই লক্ষ্য শাসকদলের।  অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেস প্রার্থীদের ভরাডুবির পিছনে জোট নিয়ে দুই শিবিরের শেষ মুহূর্তের টালবাহানাকেই কাঠগোড়ায় তুলছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, সিংহভাগ আসনেই উভয় শিবির একে অপরের বেলাগাম ভোট কেটেছে।‌ 

    অথচ, ভোটের কয়েক মাস আগে পর্যন্ত বাম-কংগ্রেস জোটের হাওয়া উঠেছিল। বিশেষ করে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলাতে জেলা পরিষদ আসনে জোট ভালো ফল করার আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু জোটের সার্বিক স্বার্থ দেখার চেয়ে উভয় শিবিরই প্রথম থেকে ইগোর লড়াইয়ে মেতে ওঠে। প্রশ্নের মুখে পড়ে জোট-ভবিষ্যৎ। অবশেষে মুখ থুবড়ে পড়ে। বাম-কংগ্রেস কেউই জেলা পরিষদের আসনে জোট নিয়ে উৎসাহ দেখায়নি। কোনও রকম সমঝোতা ছাড়াই পৃথক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। বামফ্রন্ট ৫২টি আসনেই প্রার্থী দেয়। কংগ্রেস প্রার্থী দেয় ৩২টি আসনে। অন্যদিকে, পঞ্চায়েতস্তরে জোটের সিদ্ধান্ত নিচুতলার নেতৃত্বের উপর ছেড়ে দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলে দু’পক্ষেরই জেলা নেতৃত্ব। ফলে, পঞ্চায়েতে বিচ্ছিন্ন কিছু আসন ছাড়া কোথাও জোটের অস্তিত্ব ছিল না। বাম-কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তহীনতার প্রভাব পড়ল ভোটবাক্সে। জামানত জব্দ হলো বাম-কংগ্রেস প্রার্থীদের।

    জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলা পরিষদে কংগ্রেসের ৩২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩০ জন ও বামফ্রন্টের ২৬ জন প্রার্থীর জামানত জব্দ‌ হয়েছে। বিজেপির ৬ জন প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল চেয়ারম্যান নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওদের প্রতি মানুষের সমর্থন নেই। ওরা তৃণমূলের কুৎসা করে বাজারে টিকে থাকতে চায়। ওদের অবস্থান মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তাই মানুষ বিরোধীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’ 

    জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র সিলভি সাহা বলেন, ‘জেলা পরিষদের আসনে জোট নিয়ে বামফ্রন্টের সঙ্গে কথা এগোয়নি। তাছাড়া, এবার ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। অবাধ ও স্বচ্ছ ভোট  হলে কংগ্রেস অনেক আসনে ভালো ফল করত।’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘জেলা পরিষদের আসনে যেখানে যেখানে তৃণমূল ভোট লুট করেছে, সেখানেই বিরোধীদের জামানত জব্দ হয়েছে। আর যেখানে স্বচ্ছভাবে ভোট হয়েছে, সেখানে সিপিএম ভালো পরিমাণ ভোট পেয়েছে। সামগ্রিকভাবে আমাদের ভোট বেড়েছে। আর তৃণমূল ও বিজেপির ভোট কমেছে।’‌
  • Link to this news (বর্তমান)