• মোদিতন্ত্রের বিকল্প ‘ইন্ডিয়া’, ২৬ দলের মহাজোটের আত্মপ্রকাশ
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৩
  • দেবাঞ্জন দাস, বেঙ্গালুরু: ইউপিএ অতীত! লড়াই এবার মোদিতন্ত্র বনাম ‘ইন্ডিয়া’র—ইন্ডিয়ান (আই) ন্যাশনাল (এন) ডেভেলপমেন্টাল (ডি) ইনক্লুসিভ (আই) অ্যালায়েন্স (এ)। এই নতুন পরিচয়েই মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে আত্মপ্রকাশ করল দেশের ২৬টি বিরোধী দলের মহাজোট। আর তারপরই বিজেপির দিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, ইন্ডিয়ার সঙ্গে লড়ে দেখাও। আমরা দেশকে ভালোবাসি, দেশমাতৃকাকে ভালোবাসি, ইন্ডিয়াকে ভালোবাসি।’ একইসুর শোনা যায় রাহুল গান্ধীর গলাতেও, ‘ইন্ডিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে কে জেতে, তা সবাই জানে। এবার লড়াই মোদি বনাম ইন্ডিয়া।’

    ১০ বছরের সরকার চালানো কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএর নাম যে বদলাচ্ছে, পাটনার বৈঠকের পর থেকেই এব্যাপারে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। বেঙ্গালুরুতে দু’দিনের আলোচনা শেষে সিলমোহর পড়ল তাতে। বিরোধীদের অভিযোগ, ন’বছরের গেরুয়া শাসনে দেশের গণতন্ত্র প্রশ্নের মুখে। বিপন্ন সংবিধান আর সাধারণতন্ত্রও! শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, বিশ্ব দরবারে পর্যন্ত এখন সমালোচনার মুখে ভারতের চিরাচরিত ঐতিহ্য, সম্প্রীতি, সংহতি আর বহুত্ববাদ। অথচ কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি নির্বিকার। ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ তত্ত্ব সামনে রেখে মোদিতন্ত্র কায়েমের প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। সেই মোদিতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র, সবার অধিকার আর সর্বোপরি সংবিধান রক্ষায় বিকল্প হাতিয়ার হিসেবেই এদিন বেঙ্গালুরুর বিরোধী জোটের বৈঠকে আত্মপ্রকাশ করল ইংরেজি পাঁচটি অক্ষর, ‘ইন্ডিয়া’। ১১ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটিও গঠন করেছে ২৬টি দলের যৌথ নেতৃত্ব। তবে তা চূড়ান্ত হবে মুম্বইতে, ‘ইন্ডিয়া’র পরবর্তী বৈঠকে।

    এমন চমকপ্রদ নামের প্রস্তাবটা অবশ্য এসেছিল বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকেই। সেটা সোমবার সন্ধ্যায়, বেঙ্গালুরু শহরের রেসকোর্স রোডে তাজ ওয়েস্টএন্ড হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটে। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, লালুপ্রসাদ যাদব, নীতীশ কুমার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, এম কে স্ট্যালিন, উদ্ধব থ্যাকারে, হেমন্ত সোরেন, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, কে ছিলেন না! কিন্তু মধ্যমণি ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমোই। তাঁর প্রস্তাবে সহমত হন সকলে। সূত্রের খবর, এদিন তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে মমতার একপাশে সোনিয়া, অন্যপাশে ছিলেন রাহুল। মাঝেমধ্যেই নিচু স্বরে কথা বলছিলেন তিনজন। নাম ঠিক করার পাশাপাশি এদিন রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন স্ট্যালিন, হেমন্ত সোরেনরা। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের ভূমিকার সমালোচনায় সরব হন কেজরিওয়াল। বাকিরা তাঁকে সমর্থন জানান। বৈঠক শেষে বিমান ধরার তাড়া থাকায় তড়িঘড়ি বেরিয়ে যান নীতীশ কুমার, সপুত্র লালু এবং স্ট্যালিন।

    বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনের মঞ্চে উঠেই ইশারায় মমতাকে নিজের পাশে বসতে বলেন রাহুল। ফের আলোচনা করতে দেখা যায় দেশের দুই শীর্ষ নেতা-নেত্রীকে। কৌটো খুলে মমতার হাতে কাজুবাদাম তুলে দেন রাহুল। বিনিময়ে মেলে চকোলেট। মল্লিকার্জুন খাড়্গের পর কে বলবেন, তা জানতে কে সি বেণুগোপাল এলে সোনিয়া-পুত্র জানিয়ে দেন, ‘মমতাজিই বলবেন এবার’। আবার মাইক হাতে তৃণমূলনেত্রীর গলায় শোনা যায়, ‘মাই ফেভারিট রাহুল’। সাংবাদিক সম্মেলন শেষে মঞ্চে কেজরিওয়ালের দিকে এগিয়ে গিয়ে করমর্দনও করেন রাহুল। বৈঠকে বিরোধী জোটের ক্যাচ লাইন ছিল ‘ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড’। পাশে ছিল বিস্ময়সূচক চিহ্ন। দিনের শেষে তার বোধহয় আর দরকার রইল না। 
  • Link to this news (বর্তমান)