• Narendra Modi : ইন্টেলিজেন্সে অ্যাস্ট্রোনট 'আর্টিফিশিয়াল' মোদী
    এই সময় | ২০ জুলাই ২০২৩
  • জয় সাহা নমো গেছেন মঙ্গলে, সঙ্গে গেছে কে? কেউ নয়. তিনি একাই গিয়েছেন। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত নরেন্দ্র মোদী স্পেসসুট পরে বসে লাল গ্রহে। সেই মোদীই আবার কখনও গিটার বাজিয়ে গান গাইছেন ক্যাম্পাসে, যেন রকস্টার! কখনও তিনি যোদ্ধা, কাঁধে ঝোলানো ইনসাস। কখনও তিনি ডাক্তার, গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপ। তিনি রাজা, তিনিই সন্ন্যাসী, তিনি ডিজে, তিনিই আবার মাইক্রোস্কোপে চোখ রেখে সায়েন্টিস্ট।

    প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইস্তক গত প্রায় দশ বছরে গোটা দুনিয়া চষে ফেলেছেন। তবে মঙ্গলে এখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি নরেন্দ্র মোদীর। ডিজে হননি, গিটারও বাজাতেও দেখা যায়নি এ পর্যন্ত। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে মোদীর এমন সব অবতারই এখন 'ভাইরাল'। কে করল? উত্তরটা সিম্পল। নানা রূপে, নানা চরিত্রে নমোকে সাজিয়ে তুলেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই।

    কারা করল? গত ক'দিনে যাঁরা এমন কনটেন্ট বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন, তাঁদের পেজগুলির নাম দেখে অনেকে আঁচ করছেন, কনটেন্ট ক্রিয়েটররা বিজেপির সমর্থক। যদিও এর সঙ্গে বিজেপির সরাসরি কোনও যোগ নেই বলে দলের দাবি। শ'য়ে শ'য়ে লাইক, শেয়ার পাচ্ছে এআই জেনারেটেড কাল্পনিক এই মোদী-প্রচার। বিরোধীদের অভিযোগ, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই সক্রিয় হচ্ছে বিজেপির আইটি সেল। আর এ সব তাদেরই 'শ্যাডো পেজ' বা প্রোফাইল। যাদের কাজ, ভোটের আগে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে মোদীর 'লার্জার দ্যান লাইফ ইমেজ' তুলে ধরা।

    যদিও এর সঙ্গে দলের সরাসরি সম্পর্ক নেই বলে জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির আইটি সেলের প্রমুখ জয় মল্লিক। তাঁর কথায়, 'এখন বহু সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষের হাতে এআই। সে সব ব্যবহার করে অনেকেই এমন সব পোস্ট করছেন। কিন্তু আমরা দলীয় ভাবে একে সরাসরি প্রোমোট করি না।' জয় জানাচ্ছেন, প্রচারের কাজে তাঁরা এখনও অফিশিয়ালি এআই-এর ব্যবহার শুরু করেননি। তবে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের প্রচারে এর ব্যবহার হতে পারে। কিছু ডেটা অ্যানালিসিসের জন্য অবশ্য এআই ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এখনও এর মাধ্যমে প্রচার শুরু হয়নি। শীঘ্রই তা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জয়।

    প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি গেরুয়া শিবিরের মতো অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এআই ব্যবহার শুরু করবে নিজেদের প্রচারে? তৃণমূল এ ব্যাপারে 'অর্থোডক্স'। তারা এখনও প্রথাগত প্রচারেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের আইটি সেলের ইনচার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্যের বক্তব্য, 'ইয়ং জেনারেশনের যাঁদের মাথায় টুপি পরিয়ে এতকাল বিজেপি আইটি সেলের কাজ করাত, তাঁদের মোহভঙ্গ হয়েছে। তাঁরা আইটি সেল ছেড়ে দিয়েছেন। তাই ওদের আর হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সে ভরসা নেই। লোকবলও নেই। কাজেই এআই ছাড়া ওদের গতি নেই।' দেবাংশুর কথায়, 'আমরা এখনও হিউম্যান টাচকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। মঙ্গলে মোদীর মতো হাস্যকর কনটেন্ট নয়, বরং শিল্পীর হাতে আঁকা কার্টুন, পোস্টারেই আমরা জোর দিচ্ছি।' মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে বা ফেক নিউজ ছড়াতে পারে, এমন কিছুই তাঁরা ব্যবহার করবেন না বলে দেবাংশুর বক্তব্য।

    এআই নিয়ে সিপিএম এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরে আছে। সিপিএম ডিজিটালের তরফে এর আগে টুকটাক এআই জেনারেটেড পোস্টার তৈরি হয়েছে। কিছু প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে চ্যাট জিপিটির মতো এআই টুলও কাজে এসেছে। কিন্তু সার্বিক প্রচারে এআই ব্যবহার নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে ডিজিটাল টিম। ইন্টেলিজেন্সে মোদীর 'আর্টিফিশিয়াল' অবতার প্রসঙ্গে সিপিএম ডিজিটালের তরফে অবিন মিত্রর ব্যাখ্যা, 'বাস্তবের মাটিতে তো পেট্রল-গ্যাসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

    তাই মোদীজিকে বাস্তব থেকে সরিয়ে পাঠাতে হচ্ছে মঙ্গলে। এ ধরনের চটকদার পোস্ট মানুষের নজর কাড়ে। সস্তায় প্রচার পাওয়া যায়। এ ধরনের প্রচার কৌশলের বিরুদ্ধে আমরাও এআই ব্যবহার করেই লড়াই করব।' প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়ার ইনচার্জ অশোক ভট্টাচার্য জানান, এআই টুল ব্যবহারে তাঁদের আপত্তি নেই। তাঁর মতে, 'ভাত, চাকরি, ভালোবাসার রাজনীতিকেই মানুষ সমর্থন করবে। এআইয়ের মিথ্যে দুনিয়াকে নয়।'
  • Link to this news (এই সময়)