• ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মতোই প্রাণ কাড়ছে অ্যামিবা! আক্রান্ত হলে বাঁচার উপায় কী তবে
    হিন্দুস্তান টাইমস | ২০ জুলাই ২০২৩
  • প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অস্তিত্বের লড়াই অনেক দিনের। সভ্যতা, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, ততই অস্তিত্বের বিপন্নতা কমে আসছে। কিন্তু তার পরেও কখনও কখনও সাক্ষাৎ মেলে প্রকৃতির রোষের। ভয়াবহ বন্যা হোক বা প্রাণ কাড়া তাপমাত্রা, জীবাণুর কারণে মহামারি হোক বা হাজার হাজার মানুষ মারা ভূমিকম্প - প্রকৃতির উদ্ভট খেয়ালের কাছে মানুষ নস্যি। বার বার এর প্রমাণ মেলে। সম্প্রতি তেমনই এক ঘটনা ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানী মহলকে। তা হল ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মতোই আরেক জীবাণু অ্যামিবা। আক্রান্তকে কিছুদিনেই মেরে ফেলতে পারে, এমন প্রমাণ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি পাওয়া গিয়েছে।

    (কেরালার কিশোরটি সম্প্রতি প্রাণ হারায় ঘিলুখেকো অ্যামিবা নাইগ্লেরিয়া ফাউলেরির আক্রমণে। সারা ভারতে এই অ্যামিবার সংক্রমণ সংখ্যার নিরিখে নগণ্য বলা যায়। কিন্তু আমেরিকায় ইতিমধ্যেই প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েকজনের। জারি হয়েছে বিশেষ সতর্কবার্তা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাণ হারাতে হচ্ছে আক্রান্তদের। এই অ্যামিবা কি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে যে কোনও সময়? প্রকৃতির খেয়ালে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান এই অণুজীবের সঙ্গে মোকাবিলা করতে কি প্রস্তুত আদৌ? এরই উত্তর দিলেন সিএমআরআই হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক সুমন মিত্র।

    (হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের অ্যামিবা বিরল হলেও ভীষণ ভয়ঙ্কর। সরাসরি মস্তিষ্কে আক্রমণ করে বলেই একে লঘু করে দেখা উচিত নয়। দেখা গিয়েছে, এই অ্যামিবার আক্রমণে ৯০ শতাংশ রোগী প্রাণ হারান। তাঁদের অধিকাংশই তরুণ।’ ইদানীং, অ্যামিবায় আক্রান্তের হার নিয়ে তাঁর কপালে স্পষ্ট চিন্তার ভাঁজ। তাঁর কথায়, ‘শুধু আমেরিকা নয়, সারা বিশ্ব জুড়েই অ্যামিবা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্যাথোজেন মুক্ত অ্যামিবা প্রায় সব মাইক্রো এনভায়রনমেন্টে উপস্থিত। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পরিবেশেও থাকতে পারে এই এককোশী জীবাণু। তাই ঘটনাবিশেষে গুরুতর সংক্রমণ ঘটাতেও সক্ষম অ্যামিবা।’

    (অ্যামিবার প্রকৃতির উপর নির্ভর করছে সেটি কীভাবে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তবে কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসক সুমন মিত্র। তাঁর কথায়, ‘হাঁচি কাশি থেকে যেমন ছড়াতে পারে, তেমন যৌন সংসর্গের মাধ্যমেও সম্ভব। তবে ঘিলুখেকো অ্যামিবা মূলত জলের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। পরিষ্কার জল থেকে হ্রদ, নদী নালার জলেও থাকতে পারে অ্যামিবা। অর্থাৎ যে কোনও মাধ্যমকেই বেছে নিতে পারে এককোশী জীবাণু।’

    অ্যামিবায় সংক্রমিত হলে একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। রোগী ভেদে পাল্টে যেতে পারে এই লক্ষণ। সাধারণ কিছু উপসর্গ হল মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, হঠাৎ করে চোখের সামনে কিছু দেখা (হ্যালুসিনেশন), ঝাপসা, দৃষ্টি, স্বাদ চলে যাওয়া, খিদে না পাওয়া, জ্বর, ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন, মন খারাপ ইত্যাদি। অধিকাংশ অ্যামিবা আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি দেখা গিয়েছে।

    (এই সংক্রমণ এড়াতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা যায়, সে ব্যাপারে এখনও সম্পূর্ণ নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। তবে চিকিৎসক সুমন মিত্র জানালেন, কিছু ওষুধ প্রয়োগ করে এর বিরুদ্ধে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। অ্যাম্ফোটেরিসিন বি, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ফ্লুকোনাজোল, রিফ্যামপিন, মিলটেফোসাইন, ডেক্সামিথাসোন ইত্যাদি ড্রাগ অ্যামিবার বিরুদ্ধে বেশ সক্রিয়। তবে উপসর্গ ফুটে ওঠার পর দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নয়তো বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন তিনি।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)