• WBCS Result : ছাত্র পড়িয়ে কোচিংয়ের ফি জোগাড়! অভাবকে সঙ্গী করেই WBCS-এ সাফল্য পেলেন মালদার রকি
    এই সময় | ২৬ জুলাই ২০২৩
  • বাবা হোটেলের সামান্য কর্মচারী। মা অঙ্গনওয়ারি সহায়িকা। অভাবের সংসারে জীবন যাপনই বাড়তি লড়াই। প্রতিকূল পরিস্থিতি নয়, মেধা-অধ্যাবসায়ই যে আসল তা আরও একবার প্রমাণ করলেন মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের রকিচন্দ্র দাস। ডব্লিউবিসিএস-এ অভাবনীয় ফল তাঁর। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাড়িয়াল গ্রামের বাসিন্দা রকি চন্দ্র দাস WBCS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জয়েন্ট বিডিও পদে যোগ দিতে চলেছেন।

    অভাবী পরিবারের ছেলে বছর ছাব্বিশের রকি। ছেলের এই অভূতপূর্ব সাফল্যে গর্বে বুক ভরে উঠেছে বাবা মায়ের। পাড়ার ছেলের সাফল্যে গর্বিত এলাকাবাসীও। গত ২০ জুলাই WBCS পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। রেজাল্ট বেরতেই দেখা যায় বাজিমাত করেছে রকি। সারা পশ্চিমবঙ্গে‌ ২৯ র‌্যাঙ্ক করেছে সে। পরিবারে আর্থিক অভাব থাকলেও মেধার অভাব নেই রকির। কোনও কোচিং ছাড়াই অবৈতনিক গ্রন্থাগারে পড়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি জানান, প্রথম দুই বার ব্যর্থ হলেও তৃতীয়বার একেবারে ২৯ র‌্যাঙ্ক। জয়েন্ট বিডিও হিসেবে তিনি যোগ দিতে চলেছেন কাজে।

    বাবা পরাণ চন্দ্র দাস একজন হোটেল কর্মচারী, মা অনু দাস অঙ্গনওয়াড়ি সহায়কা। ছোট থেকেই অভাব আর অর্থকষ্ট তাঁর নিত্য সঙ্গী থাকলেও তবে বাবা মা তাকে কখনও অভাব বুঝতে দেয়নি। স্কুলের গণ্ডি পেরলেও জীবন থেকে মোছেনি অভাবের অন্ধকার। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে শুরু হয় কঠোর পরিশ্রম ও প্রস্তুতি।

    ২০১২ সালে তুলসীহাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক ও ২০১৪ সালে লেটার মার্ক নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।এরপর মুর্শিদাবাদ কৃষ্ণনাথ কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতক পাশ করেন। এরপরই শুরু করেন প্রস্তুতি। বহরমপুর মেসে থেকে ডবলু বি সি এস পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতেন। আর্থিক অভাবের কারণে তেমন কোচিং নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। মুর্শিদাবাদ জেলা স্তরের প্রশাসনিক কিছু আধিকারিকগণের সহায়তায় মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগারে দেড় বছর ধরে অবৈতনিক ভাবে ডবলু বি সি এস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তিনি। যেটুকু কোচিং নিয়েছেন, তার জন্য খরচ যোগাতে সকাল বিকেল ছাত্র পড়িয়েছেন রকি। তাঁর বাবার আফসোস, ছেলেটাকে ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারলে আরও আগেই সে WBCS অফিসার হতে পারত।

    WBCS Result: WBCS -এ পঞ্চম স্থান কাগজ কুড়ানির ছেলের রকির বাবা পরাণ দাসের কথায় বুকভরা দীর্ঘশ্বাস আর গলায় অপরাধবোধ ধরা পড়ে। তিনি বলেন, 'তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। পরিবার চালাতে ও দুই ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে তাকে কখনও ভিন রাজ্যে আবার কখনও দিনমজুরের কাজ করতে হয়েছে।বর্তমানে তুলসীহাটা এলাকায় এক হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।এই সামান্য আয়ে পরিবার চালাতে হিমসিম খেতে হতো তাকে।ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে বন্ধন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। তবে রকির সাফল্যের আলোয় আজ সব আফসোস মিটে গিয়েছে ।
  • Link to this news (এই সময়)