• IS Terrorist : খেলনায় বিস্ফোরক! জঙ্গি-টার্গেট শিশুরাও
    এই সময় | ২৭ জুলাই ২০২৩
  • বাগদাদ: নিজের ঘরেও নিরাপদ নয় কেউ! এমনকী শিশুরাও। টিভি রিমোট, ফোন থেকে শুরু করে শিশুদের খেলনা- ইরাকে ঘরের আনাচেকানাচে মৃত্যুফাঁদ ছড়িয়ে রেখেছিল আইএস জঙ্গিরা। বাড়ি হয়ে উঠেছিল সাক্ষাৎ মরণফাঁদ। বড়রা টিভি চালিয়ে রিমোটের বাটন বা বাচ্চারা প্লে-স্টেশনের রিমোটে চাপ দিলেই উড়ে যেত গোটা পরিবার। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। সে সব এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করা গিয়েছে।

    আইএস জঙ্গিদের ভয়ে বহু পরিবার ইরাকের বিভিন্ন গ্রাম ও শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এরপর একসময়ে ইরাকে আইএস-এর জোরও কমে আসে। তার পরে সেই সব গ্রাম ও শহরের ফাঁকা বাড়িগুলিতে গিয়ে অন্তত আড়াই হাজার এমন এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস উদ্ধার করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

    শুধু বাড়ি নয়, 'মাইনস অ্যাডভাইজ়রি গ্রুপ' (ম্যাগ) নামে সংগঠনটি স্কুল এবং হাসপাতালেও এমন এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস পেয়েছে। কুর্দিস্তানের চামচামালে ম্যাগ-এর ট্রেনিং বেসে উদ্ধার করা ডিভাইসগুলি রাখা হয়েছে।

    ২০১৪ থেকে ম্যাগ-এর ট্রেনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সালাম মহম্মদ ২,৩০০-র বেশি ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করেছেন। কুর্দিস্তানের সেই বেসেই রয়েছে জলের ট্যাপ, পোশাকের হ্যাঙার বা ভিডিয়ো গেমের রিমোট কন্ট্রোলে রাখা নিষ্ক্রিয় ডিভাইসগুলি। সালাম বলছেন, 'মানুষকে নানা ভাবে ভয়ে কাঁটা করে রাখত আইএস। মাটিতে মাইন পুঁতে রাখা তো হতোই। মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল- কিছু ছাড়েনি ওরা।'

    সালামের অভিজ্ঞতা মারাত্মক- 'ঘরে ফ্রিজ বা এসি-তে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস। একটি এলাকা আট মাস দখলে রেখেছিল আইএস। সেখানে আমরা অন্তত পঁচিশটি এমন বুবি-ট্র্যাপ পেয়েছি।' শুধু তা-ই নয়, সালাম বলছেন, 'একটা ঘরে ঢুকে ক্যাশে ঠাসা একটি ওয়ালেট পাই। সে-ও একটা ফাঁদ। এমন ভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, ছুঁলেই বিস্ফোরণ অনিবার্য। ভাবতে পারেন, রান্নাঘরে স্টোভের সুইচে ডিভাইস! স্টোভ জ্বালাতে গেলেই উড়ে যাবে গোটা বাড়ি।' সালাম জানাচ্ছেন, একেকটি এমন বাড়িও ছিল যা বিস্ফোরক-শূন্য করতে তাঁদের একমাসেরও বেশি সময় লেগেছে। স্নিফার ডগ থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সরঞ্জামে সেই সব ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়েছে।

    তবে এই বাড়ি, মসজিদ, হাসপাতাল বা স্কুলে আইএস-এর এহেন মারণ-পরিকল্পনা তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। কেননা, মূলত ইরাকের গ্রাম ও শহরগুলি ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পরে আইএস জঙ্গিরা বাড়িতে ঢুকেছিল। ঘরছাড়া হয়ে আর ক'দিন থাকবে, একদিন তো ফিরে আসতেই হবে- এমন একটি ধারণা থেকে ঘরে ঘরে মরণফাঁদ সাজিয়ে রেখেছিল তারা। হালফিলে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন সেই সব এলাকার ইরাকিরা। কিন্তু সালাম এবং তাঁর সঙ্গীরা সেই সব ঘর করে ফেলেছেন নিরাপদ। সালাম বলছেন, 'যাঁরা েফিরে এসেছেন, তাঁরা এতটাই আমাদের খাতির করেন যে, একেক সময়ে রীতিমতো বিব্রত লাগে। যে সম্মান পাই ওঁদের থেকে, তা কল্পনা করা যায় না।'
  • Link to this news (এই সময়)