• ISRO Budget : চাঁদের পর সূর্য, অপেক্ষায় কয়েকশো কোটির মিশন! এত টাকা কোথা থেকে পাচ্ছে ইসরো?
    এই সময় | ২৭ জুলাই ২০২৩
  • ১৪ জুলাই ইসরোর সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে চন্দ্রযান-৩। এখন সবার নজর ভারতের এই তৃতীয় চন্দ্রাভিযানের দিকে। চাঁদের পৃষ্ঠে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারটি সফল অবতরণের পর রোভারটিকে প্রতিষ্ঠা করে নানারকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোই এই মিশনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য়। ২০১৯-এর চন্দ্রযান-২ মিশনের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এই মিশনের সমগ্র পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।

    চন্দ্রযান-২-এর ছিল একটি অরবিটার, একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভার। চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যর্থ হয়েছিল মিশন। তখনই ইসরোর সঙ্গে ল্যান্ডার ও রোভারটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তবে আগেরবারের ভুলের থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের চন্দ্রযান-৩-এর নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে।

    চন্দ্রযান-৩ মিশন নিয়ে ইসরো তাদের ওয়েবসাইটে জানানয়, চন্দ্রযান-২-এর ফলো-আপ মিশন চন্দ্রযান-৩। চাঁদের বুকে শেষ পর্যন্ত এটিকে সফল অবতরণই লক্ষ্য। এর মধ্যে রয়েছে একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভার।

    চাঁদের বুকে এই মহাকাশযানকে অবতরণের সঙ্গে মহাকাশ গবেষণায় পৃথিবীর ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চাইছে ভারত। দীর্ঘদিন একাধিক স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণে মহাকাশ গবেষণায় অন্যান্য দেশগুলির কাছে এক ভরসার নাম ইসরো। মহাকাশ গবেষণায় ক্রমেই উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার।

    তবে শুধু চন্দ্রযান-৩-ই নয়, সারা বছর ধরে একাধিক মহাকাশ গবেষণা সম্বন্ধীয় কাজ করে থাকে ইসরো। তার মধ্যে রয়েছে একাধিক স্যাটেলাইট মিশনও। সারা বছর ধরে মহাকাশ সম্বন্ধীয় গবেষণা চালানোর জন্য দরকার বিপুল অর্থেরও। আচ্ছা এই টাকা কোথা থেকে পায় ইসরো? আজ নজর রাখব সেদিকেই।

    মহাকাশ গবেষণা সংস্থার জন্য বাজেট ২০২৩-২৪ সালে মহাকাশ মিশনের জন্য় কেন্দ্রের তরফে অর্থ বরাদ্দ হয় ১২ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এই বাজেট ঘোষণা করেন। যদিও এই অর্থবছরের বরাদ্দ কিছুটা কমেছে। তবে গত ছয় বছরে মহাকাশ বিভাগের জন্য তহবিল উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী বছরগুলিতে গগনযান মিশনের মতো বড় মহাকাশ মিশনের পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। তাই ইসরোর প্রকল্পগুলির জন্য সঠিক অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    তবে জানেন কি ভারতের এক একটি মহাকাশ মিশনের খরচ বিশ্বের তাবড় দেশগুলির তুলনায় অনেক কম? অনেক কম বাজেটকে সম্বল করেই একাধিক মহাকাশ মিশন পরিচালনা করেছে ভারত। অন্য দেশ হলে এই চন্দ্রযানের খরচ হত প্রায় ৪ গুণ। হলিউড ছবির বাজেট অনেক বেশি চন্দ্রযান-২ ও চন্দ্রযান মিশন ৩ - এর থেকে। চন্দ্রযান-৩-এর বাজেটই মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা। সেখানে দু'মাস আগে রিলিজ় হওয়া 'আদিপুরুষ' ছবিটি তৈরি করতেই খরচ হয়েছিল ৭০০ কোটি টাকা।

    সিনেমার তুলনায় খরচ কম আর্থিক প্রতিকূলতা ভারতের মহাকাশ গবেষণার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তবুও দমতে নারাজ ইসরো। বারবার ইসরো প্রমাণ করেছে কম টাকা বাজেট থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্য়মে মিশন সফল করা যায়।

    উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, গত ১০ বছরে ইসরো যে ক'টি বড় মিশন পরিচালনা করেছে সেগুলির খরচ হলিউড সিনেমার তুলনায় কম । গত কয়েক বছরে মঙ্গল ও চাঁদে পৌঁছনোর জন্য যে পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ হয়েছিল তা ২০১৪ সালে ক্রিস্টোফার নোলানের 'ইন্টারস্টেলার'-এর বাজেটের থেকে বহু গুণ কম। কম টাকাতেও মিশন সফল করা হয়, আর্থিক প্রতিকূলতাকে কাটিয়েও যে মহাকাশ গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা আগে বারবার প্রমাণ করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ইসরো।

    বেসরকারি উদ্যোগ বেড়েছে নিজেদের বাজেট কম হলেও গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হয়েছে ইসরো। ইসরোর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে একাধিক বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। বহু বেসরকারি সংস্থার ঝোঁক বাড়ছে মহাকাশ গবেষণার সম্বন্ধীয় কাজের দিকে। আর এতেই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে ইসরো। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং জানিয়েছিলেন ২০১৯ থেকে ২০২১-এর মধ্যে একাধিক বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির গুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বহু মিশন পরিচালনা করেছে ইসরো। যাতে ইসরোর আয় হয়েছে প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা। আগামী দিনে এই আয় আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

    আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং এর (EY's) ডেভেলপিং দ্য স্পেস ইকোসিস্টেম ইন ইন্ডিয়ার ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী দিনে আরও বাড়বে মহাকাশ সম্বন্ধীয় গবেষণা।

    কারণ কম টাকায় উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার পথ দেখিয়েছে ভারত নেভিগেশন স্যাটলাইটের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটগুলির চাহিদাও বৃদ্ধিও হচ্ছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। বেসরকারি সংস্থাগুলির যে মহাকাশ গবেষণা সম্বন্ধীয় কাজের উৎসাহ আগের থেকে অনেক বেড়েছে সে বিষয়টি নজরে এসেছে কেন্দ্রর। ভারত সরকার এই সেক্টরের কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার (IN-SPACE) চালু করেছে। এই সংস্থা সরকারি আদেশ অনুসারে উৎক্ষেপণ যান, স্যাটেলাইট নির্মাণ, স্থান ভিত্তিক পরিষেবা প্রদান, পরীক্ষার সুবিধা ভাগ করে নেওয়া , ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের মতো বিষয়গুলির উপর নজর রাখে।

    এগিয়ে আসছে বহু স্টার্ট-আপ সংস্থা ২০২৩ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকার IN-SPACE-এর জন্য বরাদ্দ করেছে ৩৩ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে ৯৫কোটি টাকা হয়েছে। এগিয়ে আসছে স্টার্ট আপ সংস্থাগুলিও। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে মহাকাশ গবেষণার উল্লেখযোগ্য ভাবে এগিয়ে এসেছে স্টার্ট আপ কোম্পানিগুলি। ছুঁয়ে ফেলেছে সর্বকালের রেকর্ড।
  • Link to this news (এই সময়)