• জঙ্গলমহল মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় উদ্বিগ্ন বিজেপি
    বর্তমান | ২৭ জুলাই ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলেও মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। জঙ্গলমহলের চারটি ব্লকে জেলা পরিষদের একটি আসনেও জয় পায়নি বিজেপি। পঞ্চায়েত সমিতির ৯১টির মধ্যে মাত্র চারটি আসন গেরুয়া শিবিরের দখলে এসেছে। পঞ্চায়েতেরও ৫০৮টি আসনের মধ্যে মাত্র ৮৪টিতে তারা জয় পেয়েছে। ফলে কোনও পঞ্চায়েতেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বোর্ড গঠন করতে পারছে না বিজেপি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আদিবাসীরা বিজেপির প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেওয়াতেই এই হাল। জঙ্গলমহলের এমন ফলাফলে আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তবে লোকসভার পর বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল জমি পুনরুদ্ধার করতে পারায় যথেষ্টই উচ্ছ্বসিত। তৃণমূলের দাবি, রাজ্য সরকারের উন্নয়নের উপর ভরসা রেখেছে জঙ্গলমহলের মানুষ।

    বাঁকুড়ার রাইপুর, রানিবাঁধ, সারেঙ্গা ও সিমলাপাল ব্লককে জঙ্গলমহল হিসেবে ধরা হয়। একসময়ের বাম দুর্গ ছিল জঙ্গলমহল। রাজ্যে পালাবদলের পরও রানিবাঁধ ছিল সিপিএমের দখলে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে অবশ্য সর্বত্রই তৃণমূলের সবুজ আবির ওড়ে। তবে তা স্থায়ী হয়নি। ’১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনেই জঙ্গলমহলে বিজেপির উত্থান ঘটে। একাধিক পঞ্চায়েত দখল করে বিজেপি। রাইপুরের ঢেকো, মণ্ডলকুলি, সারেঙ্গার বিক্রমপুরে বিজেপি পঞ্চায়েত চালায়। রানিবাঁধ ও সিমলাপালের একটি করে পঞ্চায়েতেও সমর্থন নিয়ে বিজেপি বোর্ড গঠন করে। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির জয়ের ধারা অব্যাহত থাকে। সেবার রানিবাঁধ, রাইপুর ও তালডাংরা বিধানসভায় ২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫৫৬টি ভোট পায় বিজেপি। গতবারের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল তৃণমূল দখল করে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জঙ্গলমহলের চার ব্লকে বিজেপি পর্যুদস্ত হয়েছে। 

    রাইপুরে পঞ্চায়েত সমিতিতে একটি আসনেও জয় পায়নি বিজেপি। এছাড়া বাকি তিন ব্লকের মধ্যে সারেঙ্গায় একটি, রানিবাঁধে দু’টি ও সিমলাপালে একটি আসনে জয় পেয়েছে গেরুয়া শিবির। পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে সিমলাপালের ১৩৪টির মধ্যে ২০টি আসন এসেছে বিজেপির দখলে। রানিবাঁধের ১১১টির মধ্যে ২৩টি, রাইপুরে ১৬২টির মধ্যে ২৭টি ও সারেঙ্গায় ১০১টির মধ্যে ১৪টি আসন জিতেছে বিজেপি। বাকি আসনগুলির অধিকাংশই তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। কিছু আসন বামেরা পেয়েছে। নির্দল ও অন্যান্য প্রার্থীরাও কিছু আসনে জয় পেয়েছেন। 

    খাতড়া মহকুমার জেলা পরিষদের সব আসনে বিজেপি ৮৮ হাজার ৭৯৫টি  ভোট পেয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৬১টি ভোট কম পেয়েছে গেরুয়া শিবির। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে যা গেরুয়া শিবিরের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে অনেকেই দলের অন্দরে প্রশ্ন তুলেছেন। 

    তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার এসটি সেলের সভাপতি কমল সোরেন বলেন, স্পেশাল প্যাকেজের বিনামূল্যে রেশন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে এক হাজার টাকা করে ভাতা, জয় জোহার প্রভৃতি প্রকল্পের সুবিধা জঙ্গলমহলের আদিবাসী মানুষ পাচ্ছেন। তাই তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে আস্থা রেখেছেন। বিজেপি নয়, আগামী লোকসভা নির্বাচনেও আমাদের প্রতি তাঁদের ভরসা অটুট থাকবে। 

    বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক স্বপন মুখোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির প্রতি জঙ্গলমহলের মানুষের সমর্থন আছেই। ছাপ্পাভোট, গণনায় কারচুপি না হলে ফল ভালো হতো। আমরা এই ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করছি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়বে না।
  • Link to this news (বর্তমান)