• বিপুল বোমা উদ্ধার বারুদের স্তূপে জেলা
    বর্তমান | ২৭ জুলাই ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: বীরভূমে ভোটপর্ব মিটেছে শান্তিপূর্ণভাবে। জেলায় এক-দু’টি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া কোথাও রাজনৈতিক খুন হয়নি। এনিয়ে স্বস্তির মাঝেই পুলিসকে চাপে রাখছে ভোটের পর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাগাতার তাজা বোমা উদ্ধারের ঘটনা। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের দিন থেকে এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিনশোর বেশি বোমা উদ্ধার হয়েছে। লাগাতার এই ঘটনায় বিরোধীদের অভিযোগ, বীরভূম বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সাধারণ মানুষজনও আক্ষেপের সুরে বলছেন, রাঙামাটির জেলা বীরভূম থেকে কবে বিদায় নেবে এই ‘বোমা-বারুদের সংস্কৃতি’।

    বুধবার সকালেও সিউড়ির আলুন্দার ধল্লা গ্রামে একটি ধান জমির পাশের ঝোপ থেকে তিন ড্রাম ভর্তি তাজা বোমা উদ্ধার হয়। ওই তিনটি ড্রামে ৫০টির বেশি বোমা ছিল। খবর পেয়ে সকালেই সেখানে হাজির হয় সিউড়ি থানার পুলিস। ড্রামগুলিকে ঘিরে রাখা হয়। পরে বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করার জন্য সিআইডির বম্ব স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হয়। ভোটের আগের দিন দুবরাজপুরের ধগ্রামে বোমা ভাগাভাগি করার আগে ১৫০টির অধিক তাজা বোমা উদ্ধার হয়। এরপর গত কয়েকদিনে মাড়গ্রামে ৬০টি, তারাপীঠে ১০টি, খয়রাশোলে ৮টি বোমা উদ্ধার হয়। সম্প্রতি পাড়ুইয়ে ৩০টি বোমা উদ্ধার হয়। হিসেব অনুযায়ী শেষ আড়াই সপ্তাহে সাড়ে তিনশোর বেশি বোমা উদ্ধার হল। মঙ্গলবার সকালে বোমা বিস্ফোরণ হয় খয়রাশোলের লোকপুরে। কেউ কেউ বলছেন, যা এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি বোমা লুকিয়ে রাখা রয়েছে বিভিন্ন গোপন ডেরায়। কিন্তু এত বোমা আসছে কোথা থেকে, তা ভাবাচ্ছে প্রত্যেককে।

    জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, পুলিস সক্রিয়ভাবে বোমা উদ্ধারে নেমেছে। বোমার পাশাপাশি বোমার মশলাও উদ্ধার করা হচ্ছে। পিছনে কারা রয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, বোর্ড গঠনের আগে বোমার চাহিদা রয়েছে। বোর্ড গঠনের সময় সন্ত্রাস করতে কিছু জায়গা থেকে এখনও বরাত মিলছে। তবে লাগাতার বোমা উদ্ধারে সাধারণ জেলাবাসীও ক্ষুব্ধ। কেন শিক্ষা, সংস্কৃতি, মেধায় ভরপুর বীরভূম জেলা বোমা-বারুদের আঁতুড়ঘরে পরিণত হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। সিউড়ির এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চঞ্চল সেন, পুরন্দরপুরের সাধারণ বাসিন্দা পল্লবী চট্টোপাধ্যায় বলেন, প্রতিদিন টিভি, পেপার খুললেই বীরভূম থেকে বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের খবর পাচ্ছি। এছাড়াও সন্ত্রাস তো আছে। এই ছবি এত বছরেও কেন বদল হল না বুঝতে পারছি না। পুলিস-প্রশাসন হয়তো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। কিন্তু মনে হয় এই কারবারের গোড়ায় পৌঁছতে পারছে না। রাজনৈতিক দলগুলিও এর দায় থেকে এড়িয়ে যেতে পারে না।

    দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা বলেন, তৃণমূল আমাদের জেলাটিকে বোমা-বারুদের আখড়া বানিয়ে দিয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় কুটির শিল্প করে ফেলেছে। পুলিসও এসব ধামাচাপা দেয়। 

    তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা তো সর্বদা চাই জেলা একেবারে সন্ত্রাসমুক্ত হোক। বাম আমলের তুলনায় এখন সেটা জেলা পুলিস-প্রশাসন অনেকটাই কড়া হাতে দমন করেছে। তবে ঝাড়খণ্ড সীমানা এই জেলার অন্যতম একটা সমস্যা।
  • Link to this news (বর্তমান)