• পাক গুপ্তচরের জাল কতদূর? বারাকপুর কাণ্ডে এবার সিবিআইও
    বর্তমান | ২৭ জুলাই ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভারতীয় সেনায় কর্মরত পাক নাগরিক! তাও আবার বারাকপুর সেনা ছাউনিতে! এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় পাক গুপ্তচর সংস্থার যোগ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই অভিযোগের কিছু প্রাথমিক সারবত্তা মেলায় এবার আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে চাইছে সিবিআই। বুধবার এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে হাইকোর্টে জানানো হয়, তারা এফআইআর দায়ের করে চক্রের গভীরে ঢুকতে চাইছে। পাক গুপ্তচরদের জাল কতটা ছড়িয়েছে, তার তত্ত্বতালাশ একান্ত প্রয়োজন বলেই মনে করছে তারা।

    হুগলির ত্রিবেণীর মগরা থানা এলাকার বাসিন্দা বিষ্ণু চৌধুরীর অভিযোগ, ভারতীয় সেনায় একটি বড়সড় অসাধু চক্র সক্রিয়। তাদের কাজ হল, নাগরিকত্ব সহ যাবতীয় নথি জাল করে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতীয় সেনায় নিয়োগ পাইয়ে দেওয়া। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, মোটা টাকার  বিনিময়ে সেনার চাকরি বিক্রি হচ্ছে। এই চক্রের সঙ্গে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। জয়কান্ত কুমার এবং প্রদ্যুম্ন কুমার নামে আদতে পাকিস্তানের দুই নাগরিক বর্তমানে বারাকপুর সেনা ছাউনিতে কর্মরত বলে দাবি করেন বিষ্ণুবাবু। ওই দু’জন পাকিস্তান থেকে এসে ওই চক্রের মাধ্যমে নথি জাল করে কেন্দ্রীয় সরকারের স্টাফ সিলেকশন কমিশনের (এসএসসি জিডি) পরীক্ষা দিয়ে সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়েছেন বলে দাবি তাঁর।

    অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে নেমে গোয়েন্দাদের হাতে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য আসে। এক্ষেত্রে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন সরাসরি জড়িত বলে সিআইডির পাশাপাশি সিবিআইকেও প্রাথমিকভাবে তদন্ত করতে বলেন বিচারপতি মান্থা। বিচারক্ষেত্র পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমানে মামলাটি শুনছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। বুধবার তাঁর এজলাসে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেয় সিআইডি। সিবিআই জানায়, অভিযোগের প্রাথমিক সারবত্তা মিলেছে। তাই তারা এফআইআর দায়ের করে আরও নিবিড়ভাবে তদন্ত করতে চাইছে। আগামী সোমবার ফের মামলার শুনানি রয়েছে। ওই দিন সিবিআইকে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে আদালত।

    সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে ইতিমধ্যে সিআইডি বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। তবে তারা এই ঘটনার গভীরতা ও ব্যাপকতা পুরোটা আঁচ করতে পারেনি। কারণ, ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অসম সহ বহু রাজ্যে এই চক্রের যোগসূত্র মিলেছে। সেনায় চাকরি পাইয়ে দিতে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট সহ নানা জাল নথি যেখানে ছাপা হয়, সেই ছাপাখানাও চিহ্নিত হয়েছে। তাই তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই চক্রের জাল শুধু বারাকপুর সেনা ছাউনিতে সীমাবদ্ধ নেই। এর জাল কতদূর ছড়িয়েছে, সেটাই আপাতত তদন্ত করে বার করতে চাইছে সিবিআই। 

    এদিকে, সংশ্লিষ্ট মামলাকারীকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য হুগলির পুলিস সুপারের (গ্রামীণ) দ্বারস্থ হতে বলেছেন বিচারপতি। আবেদন পাওয়া মাত্র এসপিকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। 
  • Link to this news (বর্তমান)