• ঋণ মকুবের হিড়িকে সরকারের বহু কোটি টাকা লুট? সুপ্রিম কোর্টে ব্যাঙ্কের কর্মী-অফিসাররা
    বর্তমান | ২৭ জুলাই ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গত আর্থিক বছরে ২ লক্ষ ৯ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করা হয়েছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে এমনই জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। অনাদায়ী ঋণ উদ্ধার করার চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে তা মকুব করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) কম করে দেখানোর লক্ষ্যেই এই কাজ করা হয়েছে। অর্থাৎ ঋণ প্রদান করে সেই টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না, এরকম আর্থিক বোঝা নিয়ে এগিয়ে চললে দীর্ঘকাল ধরে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ একই থেকে যাবে অথবা বেড়ে চলবে। তার প্রভাব পড়বে মুনাফায়। সেই কারণেই মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন এমন কাজ করা হচ্ছে, তার হদিশ পেতে এবার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করলেন ব্যাঙ্কেরই অফিসার ও কর্মীরাই। তাঁদের ধারণা, এভাবে কোটি কোটি টাকা লুটের ছক সামনে এনে বড়সড় দুর্নীতি ফাঁস হবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে এই বিষয়ে তদন্তের আর্জি জানিয়েছে ব্যাঙ্ক অফিসার ও কর্মীদের যৌথ সংগঠন ‘ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ’।

    জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কগুলিতে গত তিন বছর ধরে অনুৎপাদক সম্পদ হিসেবে যে ঋণের টাকা ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে, তার অঙ্ক ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। সেই হিসেব মোছার পরও ব্যাঙ্কগুলি তা উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। এক্ষেত্রে উদ্ধার হয় মাত্র ১ লক্ষ ৯ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রদত্ত ঋণের বাদবাকি টাকা আর উদ্ধারই করা যায়নি। ব্যাঙ্ক কর্তারা বলছেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত ব্যাপার, যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে কর্পোরেট সংস্থাগুলির একাংশ ঋণ খেলাপ করছে এবং দেশের টাকা লুট করছে। তাঁদের বক্তব্য, এক্ষেত্রে একটি চক্র কাজ করছে। তাতে জড়িত ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপিরা। তাদের সম্পদ যারা কিনছে, তারাও এর সঙ্গে জড়িত। কারণ, একদিকে কর্পোরেট সংস্থাগুলি ঋণের নামে সরকারের টাকা লুট করে সরে পড়ছে। অন্যদিকে, আইনের সুযোগ নিয়ে তাদের সম্পদ জলের দরে কিনে নিচ্ছে আরও এক দল। কর্পোরেট সংস্থাগুলি আম জনতার যে বিপুল পরিমাণ করের টাকা এভাবে লুট করছে, তাতে দেশে অনেক উন্নয়ন হতে পারত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা প্রবীণদের ভালো রাখার কাজে লাগতে পারত ওই টাকা, মনে করছেন ব্যাঙ্কের অফিসার ও কর্মীরা। তাঁদের ধারণা, এটি এমন এক আঁতাত, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্যাঙ্ক, কর্পোরেট সংস্থা এবং কোনও তৃতীয় পক্ষ। তদন্ত করলেই সামনে আসবে এই দুর্নীতির চাঁই, মনে করছেন তাঁরা। সেই কারণেই দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে তাঁদের আর্জি, কয়েক লক্ষ কোটি টাকার এই লুটের আসল সত্যিটা সামনে আনা হোক। তাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন তাঁরা। 
  • Link to this news (বর্তমান)